কিয়ামতের দিন যারা চোখ থাকলেও দেখবে না

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
কিয়ামতের দিন যারা চোখ থাকলেও দেখবে না

আমাদের দেশে একটি পরিভাষা আছে, তা হলো—‘চোখ থাকতে অন্ধ।' সাধারণত গাফেল লোকদের ব্যাপারে এ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। চোখ যেহেতু সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল ইত্যাদি পরখ করার অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহর মহামূল্যবান এই নিয়ামত থাকার পরও যারা হক দেখতে পায় না, বাতিলের পক্ষ অবলম্বন করে, তাদের চোখ থাকতেও অন্ধ বলা যায়।

কারণ এটি হিদায়াত, ঈমান গ্রহণ, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। যেমন—সুরা বালাদে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তোমাদের চক্ষু দিইনি?’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৮)

পবিত্র কোরআনের এই সুরায় মহান আল্লাহ মানুষকে হিদায়াত গ্রহণের জন্য সহায়ক যেসব নিয়ামত দিয়েছেন, তাতে আল্লাহর মহা নিয়ামত চক্ষুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যারা মহান আল্লাহর এই নিয়ামতের শুকরিয়া করবে না, দুই চোখ ভরে মহান আল্লাহর অসংখ্য x অগণিত নিদর্শন দেখেও মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে না, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের অন্ধ অবস্থায় ওঠাবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয়ই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়।

সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন? তিনি বলবেন, এভাবেই আমার নিদর্শনাবলি তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪-১২৬)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথহারা করেন তুমি কখনো তাদের জন্য তাঁকে ছাড়া অভিভাবক পাবে না। আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদের একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব।

’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৭)

অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল, সত্যকে দেখতে পেত না, সত্য কথা শুনতে পেত না এবং সত্য কথা বলত না, ঠিক তেমনিভাবেই কিয়ামতেও তাদের ওঠানো হবে। উল্লেখ্য, অনেক তাফসিরবিদের মতে, এখানে বাহ্যিক দৃষ্টিশক্তিহীন বোঝানো উদ্দেশ্য নয়, বরং অন্ধ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তরের দৃষ্টিশক্তিহীনতা। কারণ পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে উল্লেখ হয়েছে, ‘তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)

তাদের অন্ধত্ব হৃদয়ের চোখের হোক আর চর্মচোখের, তাদের যে সেদিন খুবই লাঞ্ছিত অবস্থায় অত্যন্ত কষ্ট দিয়ে চেহারায় ভর করে এসে আল্লাহর সামনে এসে দাঁড়াতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দেখে সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে চেহারার ওপর ভর করে চলাচল কি সম্ভব? এমন প্রশ্ন সাহাবায়ে কেরামের মনেও এসেছিল। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী (সা.)! কিয়ামতের দিন কাফেরদের মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করা হবে? তিনি বলেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দুই পায়ের ওপর চালাতে পারছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখে ভর করে তাকে চালাতে পারবেন না? কাতাদাহ (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই, আমার রবের ইজ্জতের কসম! (বুখারি, হাদিস : ৪৭৬০)

মহান আল্লাহ সবাইকে হিদায়াত নসিব করুন। কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সন্তানের ধর্মীয় শিষ্টাচার

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
সন্তানের ধর্মীয় শিষ্টাচার

মুসলিম মাতা-পিতার অন্যতম দ্বিনি দায়িত্ব হলো সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কেননা মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান ও শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দ্বিনি শিক্ষার অভাবে বর্তমান সমাজের বহু মুসলমানকে ঈমান ও ইসলাম থেকে বিমুখ হয়ে যেতে দেখা যায়। বর্তমান সমাজের সাধারণ চিত্র হলো, সমাজের বেশির ভাগ মুসলমান তাদের সন্তানদের শুধু জাগতিক শিক্ষা প্রদান করে।

জাগতিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ অর্জন নিশ্চিত করতে প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে। তারা তাদের সন্তানদের নামি-দামি স্কুলে পড়ায়। তাদের জন্য হাজার হাজার টাকা দিয়ে গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করে।

বিপরীতে সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও তারবিয়তের ব্যাপারে তাদের উদাসীনতার কোনো শেষ নেই।

বর্তমান সমাজের বহু মুসলমানের সন্তান কালেমা বলতে পারে না, তাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর নাম জানে না, অজু-গোসল ও নামাজের বিধান পর্যন্ত তাদের জানা নেই। বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত পারে না (সম্ভবত) ৮০ শতাংশ মুসলিম শিশু ও কিশোর। এমনকি বহু লোক আছে যারা নিজেরা হয়তো নামাজ পড়ে, শুক্রবার হলেও মসজিদে যায়, কিন্তু তারা তাদের বাচ্চাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ায়, মিশনারি স্কুলে পড়ায়; তাদের সন্তানরা ইংরেজি খুব ভালো বলে, গণিতে-বিজ্ঞানে খুবই দক্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু তারা সঠিকভাবে কালেমা পড়তে পারে না। এসব শিশু এমন সব বিষয়ও জানে না, যা না জানলে ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না, তাদের এমন বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকে না, যার ওপর মুসলমানের ঈমান, ইসলাম ও পরকালীন মুক্তি নির্ভরশীল।

জাগতিক শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো ফরজ ইবাদত সম্পর্কে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানে না। সাধারণত যারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে না, কেবল জাগতিক বিদ্যা অর্জন করে, তাদের ভেতর যথাযথভাবে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে না, নিজের পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের কোনো দায় বোধ থাকে না। মাতা-পিতার সীমাহীন আদর-যত্নে বড় হলেও একসময় তারা মা-বাবাকে পার্থিব লাভ ও ক্ষতির পাল্লা দিয়ে পরিমাপ করে। ফলে তারা অনেক সময় মা-বাবাকে ঠুনকো অজুহাতে দূরে সরিয়ে দেয়, তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। মা-বাবার স্বপ্ন ও শ্রম তাদের কাছে মূল্যহীন।

এখন পর্যন্ত সমাজের বাস্তবতা হলো, দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিতরাই তাদের মা-বাবার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল। তাদের অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হারও অত্যন্ত কম। মুসলমানের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ এতেই নিহিত যে তারা তাদের সন্তানদের অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করবে। যদি কেউ তাদের জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়, তবে তার দায়িত্ব হলো, প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান নিশ্চিত করা; পাশাপাশি তার দ্বিনি তারবিয়্যাত তথা ধর্মীয় শিষ্টাচার ও জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা। যেন তার পার্থিব শিক্ষার উদ্দেশ্যও হয় সৎ ও কল্যাণকর। সে যেন তার জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অপরিহার্য মনে করে।

মনে রাখতে হবে, কিয়ামতের দিন অন্যান্য নিয়ামতের মতো সন্তান সম্পর্কেও আমাদের প্রশ্ন করা হবে। তাদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে না দিলে পরকালে আল্লাহর সামনে লজ্জিত হতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘তোমার সন্তানকে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করো (বা উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দাও)। কেননা তোমার সন্তানদের সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে তুমি তাদের কেমন প্রশিক্ষণ দিয়েছ এবং তুমি তাদের কী শিখিয়েছ?’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৮৬৬২)

অতএব, সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন পরকালে আল্লাহর সামনে লজ্জিত হতে না হয়। আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পিতা তার সন্তানকে ভালো আদবের চেয়ে ভালো উপহার দেয়নি।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৯)

মুফতি আহমদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘ভালো আদব বলতে সন্তানকে ধার্মিক, পরহেজগার বানানো বোঝায়। সন্তানদের জন্য এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে, যা দুনিয়া ও দ্বিন উভয় ক্ষেত্রেই কাজে আসে। মাতা-পিতার উচিত শুধু সন্তানদের ধনী বানিয়ে দুনিয়া থেকে না যাওয়া, বরং তাদের ধার্মিক বানিয়ে যাওয়া, যা তাদের নিজেদেরও কবরে কাজে আসবে। কেননা জীবিত সন্তানদের নেক আমলের সওয়াব মৃত ব্যক্তি কবরে পায়।’ (রচনাবলি : ২/৩৬১)

আল্লাহ আমাদের সন্তানদের দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার তাওফিক দিন। আমিন।

মন্তব্য

ফতোয়া কারা দিতে পারবে

মুফতি মানযুর সিদ্দিক
মুফতি মানযুর সিদ্দিক
শেয়ার
ফতোয়া কারা দিতে পারবে

ফতোয়া লেখায় দক্ষতা ও পরিপক্বতা অর্জনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনো অভিজ্ঞ ও বিদগ্ধ মুফতির সান্নিধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। ফিকহি কিতাবগুলোর অধ্যয়ন ও অনুশীলন, বিশেষত কোনো নির্দিষ্ট ফিকহি গ্রন্থ, যেমন—‘রদ্দুল মুহতার’-এর পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়নও এই বিশেষজ্ঞ মুফতির দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত।

হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, ‘ফতোয়া লেখা প্রত্যেক ব্যক্তির কাজ নয়, যদিও সে ফিকহের কিতাবাদি অধ্যয়ন সম্পন্ন করে থাকে। হ্যাঁ, যদি কেউ বিজ্ঞ ও দক্ষ মুফতিদের সান্নিধ্যে এই কাজ অনুশীলন করে এবং তাঁরা তার কাজকে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেন, তাহলে সে ফতোয়া লেখার যোগ্য।

তবে এর পরও যদি কখনো ভুলত্রুটি হয়, তবে তা মানবীয় দুর্বলতার কারণে হতে পারে। একে অযোগ্যতা বলা যাবে না। ঠিক যেমন একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে দীর্ঘদিন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা অর্জন করা ব্যতীত কেউ প্রকৃত চিকিৎসক হতে পারে না।’ (আদাবুল ইফতা ওয়াল ইস্তিফতা, পৃষ্ঠা-৪৮)

শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, ‘কেবলমাত্র ফিকহি কিতাবগুলোর বিভিন্ন মাসআলা মুখস্থ করলেই কেউ ফকিহ বা মুফতি হয়ে যায় না।

কারণ, ফিকহ শব্দের অর্থই হলো ‘সঠিক উপলব্ধি ও গভীর অনুধাবন’।

প্রকৃত ফকিহ সেই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা দ্বিনের গভীর উপলব্ধি দান করেছেন। আর এই যোগ্যতা কেবল ব্যাপক অধ্যয়ন বা মাসআলা মুখস্থ করার মাধ্যমে অর্জিত হয় না, বরং এর জন্য প্রয়োজন হয় কোনো অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান ফকিহের সান্নিধ্যে থেকে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।’ (মেরে ওয়ালিদ মেরে শায়খ, পৃষ্ঠা-৬৫)

তাই যদি কেউ ফিকহ ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই একজন বিদগ্ধ মুফতির সান্নিধ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হবে, তাঁর দিকনির্দেশনায় অধ্যয়ন ও অনুশীলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

কেবলমাত্র এক বছর বা কয়েক মাসের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করেই কেউ ফতোয়া লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।

ফতোয়ার সংজ্ঞা

ফতোয়া বলতে কোনো মাসআলার শরয়ি বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করাকে বোঝায়। আল্লামা ইবনে আবেদিন আশ-শামি (রহ.) বলেন : ‘ফতোয়া দেওয়া হলো কোনো মাসআলার শরয়ি বিধান প্রদান করা।’ (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৭৩)

আল্লামা জুরজানি (রহ.) বলেন : ‘ফতোয়া হলো কোনো মাসআলার বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা।’ (আত-তারিফাত, পৃষ্ঠা-৪৯)

মুফতির সংজ্ঞা

‘মুফতি’ বলতে সাধারণত সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি কোনো মুজতাহিদের বক্তব্য ও মাসআলা যথাযথভাবে বর্ণনা করেন।

আল্লামা ইবনে আবেদিন আশ-শামি (রহ.) বলেন, ‘প্রকৃত মুফতি হলেন মুজতাহিদ, আর অন্যরা মূলত মুজতাহিদের বক্তব্যের বর্ণনাকারী মাত্র।’
(রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৩)

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ফতোয়া দেওয়ার অর্থ হলো শরয়ি বিধান প্রকাশ করা। তবে বর্তমান যুগের বেশির ভাগ মুফতি মূলত মুজতাহিদের বক্তব্যের বর্ণনাকারী। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যে কেউ চাইলেই ফতোয়া দিতে পারবে; বরং মুফতি হওয়ার জন্যও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও আদব আছে, যা মুফতির মধ্যে বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য।

মুফতির জন্য শর্ত ও আদব

যে ব্যক্তি মুফতি হতে চান, তাঁর মধ্যে নিম্নলিখিত গুণাবলি থাকতে হবে—

১. তাঁকে প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত হতে হবে।

২. তাঁকে পাপাচার ও খারাপ চরিত্র থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

৩. তাকওয়া ও পরহেজগারির গুণাবলি তাঁর মধ্যে থাকা অপরিহার্য।

৪. তাঁর মধ্যে ফিকহি জ্ঞানসম্পন্ন, প্রখর বুদ্ধির অধিকারী এবং সঠিক বিশ্লেষণ ও অনুধাবনের যোগ্যতা থাকতে হবে।

৫. হঠকারিতা ও চাতুর্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বনকারীদের চিনতে পারার ক্ষমতা থাকতে হবে।

আল্লামা ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, ‘মুফতির উচিত খারাপ চরিত্র থেকে মুক্ত থাকা, ফিকহি বোধসম্পন্ন হওয়া, বিশুদ্ধ মন ও চিন্তা-চেতনার অধিকারী হওয়া এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিশ্লেষণের যোগ্যতা রাখা।’ (আল-বাহরুর রায়েক, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৮৬)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মুফতির জন্য শর্ত হলো—সে প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম, বিশ্বস্ত, পাপাচার ও নৈতিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত, ফিকহি জ্ঞানসম্পন্ন, বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনার অধিকারী, যুক্তিবাদী ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিশ্লেষণের যোগ্যতাসম্পন্ন হবে।’ (আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪১)

মুফতি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

এ ছাড়া একজন মুফতিকে অবশ্যই মাসআলাগুলোকে তার শর্ত ও সীমারেখাসহ জানার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তার মধ্যে প্রচলিত রীতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আর এটি তখনই সম্ভব, যখন সে কোনো দক্ষ মুফতির কাছে ইফতার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।

ইবনে আবেদীন আশ-শামি (রহ.) বলেন, ‘প্রথম যুগের আলেমরা মুফতির জন্য ইজতিহাদের শর্ত আরোপ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান যুগে তা অনুপস্থিত। তাই কমপক্ষে মুফতির মধ্যে এই শর্ত থাকা উচিত যে সে মাসআলাগুলোকে তার শর্ত ও সীমাবদ্ধতাসহ জানে এবং এ বিষয়ে দক্ষ কোনো শিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।’ (শরহু উকুদি রসমিল মুফতি, পৃষ্ঠা-১৫৬)

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

উপরোক্ত সংজ্ঞা ও শর্তাবলি যদি বিবেচনা এবং চিন্তা করা হয়, তাহলে বর্তমানে কি শুধু দরস-এ-নিজামি (সিলেবাস) সম্পন্ন করলেই কেউ ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে? গভীর দৃষ্টিতে দেখলে স্পষ্ট হবে, ফতোয়া দেওয়া তো দূরের কথা, অনেক দরস-এ-নিজামি (সিলেবাস) সম্পন্নকারীও প্রকৃত অর্থে ‘আলিম’ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।

একজন মুফতির জন্য শুধু কিতাব মুখস্থ করলেই হয় না, বরং তার মধ্যে ফিকহি বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে, শরয়ি বিধান ও নিয়মাবলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে এবং সমকালীন সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও লেনদেনের রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

এ জন্যই ইবনে আবেদিন আশ-শামি (রহ.) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে মুফতি হওয়ার জন্য অবশ্যই কোনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা আবশ্যক। এমনকি ‘মুনিয়াতুল মুফতি’ নামক গ্রন্থে স্পষ্ট বলা হয়েছে—‘যদি কেউ আমাদের ইমামদের সব ফিকহি কিতাব মুখস্থও করে ফেলে, তবু তাকে ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না সে কোনো দক্ষ শিক্ষকের নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।’ (শরহু উকুদি রসমিল মুফতি, পৃষ্ঠা-১৫৬)

যারা মনে করে যে ফতোয়া প্রদানের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার দরকার নেই, বরং শুধু নিজে পড়াশোনা করলেই বা দরস-ই-নিজামী (সিলেবাস) সম্পন্ন করলেই কেউ মুফতি হয়ে যায়, তাদের এই ভুল ধারণা পরিত্যাগ করা উচিত।

ফতোয়া প্রদানের দায়িত্ব নির্ধারণের গুরুত্ব

এটি সুস্পষ্ট যে প্রত্যেক আলেম বা ফিকহ বিশেষায়িত ছাত্র মুফতির দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে—এটি জরুরি নয়। তাই সময়ের দাবি হলো যে সুপ্রতিষ্ঠিত মুফতিরা সততার সঙ্গে এই আলেমদের পর্যবেক্ষণ করুন এবং যাদের সত্যিকারভাবে ফতোয়া লেখার যোগ্যতা রয়েছে, কেবল তাদের এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করুন। যদিও এটি মূলত শাসকের দায়িত্ব, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষত ভারত উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে ইসলামী বিচারব্যবস্থার এমন কোনো সংগঠিত কাঠামো নেই, সেখানে স্বীকৃত মুফতিদের অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে অযোগ্য ব্যক্তিদের কারণে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে, তার ক্ষতিপূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন : ‘শরহু রাওদ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে শাসকের উচিত তার সময়ের বিশিষ্ট আলেমদের জিজ্ঞাসা করা যে কে ফতোয়া প্রদানের যোগ্য, এবং যিনি অযোগ্য তাকে নিষেধ করা এবং শাস্তির ভয় দেখানো।’ (আল-বাহরুর রায়েক, শারহু কানজিদ দাকায়েক, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৮৬)

তবে অতি পরিতাপের বিষয় হলো—মুফতি হতে ও ফতোয়া লিখতে নির্দিষ্ট শর্ত থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে শত শত স্বঘোষিত মুফতি তৈরি হচ্ছে, আর এর নেপথ্যে রয়েছে আমাদের দেশের সিস্টেম কাঠামোর গড়িমসি। আজ শহরের অলিগলি ও সর্বত্র দেখা যাচ্ছে ফতোয়া বিভাগের ছড়াছড়ি। এমনকি অনলাইন ও মাসিক কোর্সের মাধ্যমেও আজকে মুফতির সনদ দেওয়া হচ্ছে! আমরা কতটা সস্তা ও নরমাল করে ফেলেছি ইসলামী শরিয়তের এত বড় মানদণ্ড ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে!

পরিশেষে, শুধু দরস-ই-নিজামি (সিলেবাস) সম্পন্ন করাকে ফতোয়া প্রদানের জন্য যথেষ্ট মনে করলে তা ইসলামের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নিজেদের যোগ্যতার সীমা বুঝে কাজ করার তাওফিক দিন। আমিন।

‘দারসুল ফিকহ ও সমকালীন প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক লেকচার থেকে অনুলিখন আসআদ শাহীন

মন্তব্য

মুমিনের জীবনে রমজানের শিক্ষা

ড. আবুু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
ড. আবুু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
শেয়ার
মুমিনের জীবনে রমজানের শিক্ষা

মানুষের জীবনে রমজান মাস আসে, আবার চলে যায়। একসময় রমজান আবার ফিরে আসবে, কিন্তু সে মানুষই আর থাকবে না। রমজান—মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোজাদারদের জন্য বেশ কিছু আচরণ শিক্ষা দিয়ে যায়। সেগুলোর আলোকে জীবন অতিবাহিত করলে রমজানের আগমন সার্থক ও সফল হয়।

রমজানের শিখিয়ে দেওয়া কয়েকটি আচরণের আলোচনা নিম্নরূপ—

তাকওয়া অর্জন : তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা হলেও শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো—শুধুই আল্লাহর ভয়ে সব অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে তাকে বলে মুত্তাকি। রোজার প্রধান শিক্ষাই হলো তাকওয়া অবলম্বন করা। রোজা বিভিন্নভাবে বান্দাকে সে তাকওয়ার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

যেমন—রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থেকেছে। দিনভর মনোলোভা খাবার ও স্ত্রীর মনোরম আকর্ষণ তাকে পরাস্ত করতে পারেনি। পৃথিবীর কোনো শক্তি বা ভয় নয়, বরং রোজার মাধ্যমে তৈরি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভয়ই তাকে এই সক্ষমতা দান করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন : রমজান ছিল মুয়াসাতের মাস। মুয়াসাত মানে সহানুভূতি। গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে থাকে। রোজার মাধ্যমে রোজাদারের সে উপলব্ধির সুযোগ হয়। অন্যের দুঃখ-কষ্ট বোঝার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

সহানুভূতি প্রকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। তার আলোকে রমজানে অপরিহার্য ও সাধারণ সব ধরনের দান-সদকার ক্ষেত্রে উদার হতে হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরো বেশি সুপ্রসারিত হতো যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআন মাজিদ পুনরাবৃত্তি করতেন। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬; মুসলিম, হাদিস : ৬১৪৯)

রমজানের দেওয়া এই শিক্ষা নিয়ে সুখে-দুঃখে অসহায়, অনাথের প্রতি সারা বছর সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে।

ধৈর্য ধারণ : হাদিসে রমজান মাসকে ধৈর্যের মাস বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এটি (রমজান) সবরের মাস। আর সবরের প্রতিদান জান্নাত।’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)

রোজাদারের সামনে সুস্বাদু খাবার থাকলেও তিনি আহার করেন না, রূপসী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এড়িয়ে চলেন। আচার-আচরণেও ধৈর্য ধারণ করেন। তাই রোজা পালনকারীদের উচিত রমজানের ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেন আবার পরের মাসগুলোতে অধৈর্য না হন।

সুন্দর আচরণ : রোজা মানুষকে সংযত করেছে এবং সুন্দর আচরণ শিখিয়েছে। রোজা রেখে গিবত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, বাগবিতণ্ডা ও মারামারিতে লিপ্ত না হয়ে বরং সব অঙ্গকে পাপ থেকে মুক্ত রাখতে হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোনো অশ্লীল বা মন্দ কথা না বলে। যেন কোনো ধরনের শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি অন্য কেউ তাকে গালাগাল বা মারধর করে, তবে সে তাকে জানিয়ে দেবে যে আমি রোজাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৫; মুসলিম, হা: ২৭৬২)

মিথ্যা ও প্রতারণামুক্ত জীবন : রোজার অন্যতম সৌন্দর্য ছিল—রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ ছেড়ে দিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণামুক্ত জীবন গঠন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিত্যাগ করে না, সে ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)

কোরআনের আলোয় জীবন গঠন : কোরআন অবতরণের সূত্র ধরেই রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি কোরআন চর্চা করেন পবিত্র রমজানে। রোজা রোজাদারের জন্য আর কোরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)

পরিশেষে, রমজান মাসে রোজাদার বেশ কিছু আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। জীবনজুড়ে সেসবের অনুশীলন মুমিন বান্দাকে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। কাজেই মুমিন বান্দার জীবনে একটি রমজানের সংযুক্তি অনেক বড় হিসেবে পরিগণিত হয়।

মন্তব্য

নামাজে গুনাহ মাফ চেয়ে রাসুল (সা.)-এর দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
নামাজে গুনাহ মাফ চেয়ে রাসুল (সা.)-এর দোয়া

নামাজে তাকবির দেওয়ার পর বিভিন্ন দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত এমন একটি দোয়ায় গুনাহ মাফ চাওয়া হয়েছে। দোয়াটি হলো-

اللهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالثَّلْجِ وَالْمَاءِ وَالْبَرَدِ

উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা বাইদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতায়ায়া কামা বায়াত্তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব, আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল খাতায়ায়া, কামা য়ুনাক্কাস সাওবুল আবয়াদু মিনাদ দানাস, আল্লাহুম্মাগসিল খাতায়ায়া বিল মায়িল অসসালজি অলবারাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি আমার ও আমার গুনাহগুলোর মধ্যে এতটা দূরত্ব তৈরি করে দাও, যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব রেখেছ।

হে আল্লাহ, তুমি আমাকে গুনাহগুলো থেকে পরিষ্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ, তুমি আমার গুনাহগুলোকে পানি, বরফ ও করকি দিয়ে ধৌত করে দাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ