ট্রান্সজেন্ডার প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
ট্রান্সজেন্ডার প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতীকী ছবি

প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ট্রান্সজেন্ডার মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে চরম সীমালঙ্ঘন। এটি আল্লাহর সৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন আনা, সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতাসহ নানা বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত পরিবার ও সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ। এখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:

ট্রান্সজেন্ডার বিশ্লেষণ ও উদ্দেশ্য

ট্রান্সজেন্ডার হলো দুটি ইংরেজি শব্দ Trans ও gender-এর সংমিশ্রণ। Trans অর্থ পরিবর্তন করা এবং gender মানে লিঙ্গ।

Transgender এমন একজন পুরুষ বা নারীকে বোঝায়, যাকে আল্লাহ তাআলা একজন পূর্ণ পুরুষ বা নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তারা এই সৃষ্টিতে অসন্তুষ্ট। তারা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হতে চায়। ট্রান্সজেন্ডারবাদের উত্থানের পেছনে সরাসরি সম্পর্ক খুঁজতে গেলে এ বিষয়গুলো উঠে আসে :

১. পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলন, বিশেষ করে নারীবাদী আন্দোলনের তৃতীয় ধারা (Third wave feminism), যা নারীত্ব ও পুরুষের ধারণাকে আক্রমণ করেছে।

২. আমেরিকায় হওয়া সমকামী অধিকার আন্দোলন, যার মাধ্যমে সমকামিতাসহ নানা বিকৃত যৌনতা এবং সমকামী বিয়ে আইনি বৈধতা পেয়েছে।

৩. ষাটের দশকে আমেরিকায় ঘটা যৌন বিপ্লব, যা যৌনতার ব্যাপারে সব ধরনের মূল্যবোধ মুছে ফেলেছে।

৪. এই তিনের মিশ্রণে তৈরি হওয়া জেন্ডার আইডেন্টিটি (Gender Identity) মতবাদ।

৫. চিকিৎসাশাস্ত্র, চিকিৎসক ও ফার্মাসিউটিকাল ইন্ডাস্ট্রির একটি অংশ।

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়ার পার্থক্য

আমাদের সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ধারণা আছে।

ট্রান্সজেন্ডারবাদের কথা শুনলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, এটা হয়তো হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন। এটি মারাত্মক ভুল ধারণা। এই দুটি জিনিস একেবারেই আলাদা। দুই মেরুর জিনিস। মানুষ হয় সম্পূর্ণ পুরুষ অথবা নারী।

যাদের দেহ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা পুরুষ আর যাদের দেহ ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা নারী। এটা শুধু বাহ্যিক যন্ত্রপাতির বিষয় নয়, পুরো প্রজননব্যবস্থার বিষয়। সুতরাং এখন যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং কিছু যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যাকে আমরা হিজড়া বলি, ইংরেজিতে তাদের বলা হয় ইন্টারসেক্স (Intersex)। পক্ষান্তরে  ট্রান্সজেন্ডাররা ইন্টারসেক্স নয়, তারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষ বা নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এবং পরে লিঙ্গ পরিবর্তন করে।

মূলত বর্তমানে যারা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছে তাদের বেশির ভাগই ইন্টারসেক্স নয়। তাদের কোনো ধরনের ডিএসডি (Disorders of sex development) নেই। তাদের জন্ম হয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ নিয়ে।

ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত : ৪)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে একে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের অধিকার কারো নেই। লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামে জঘন্যতম হারাম ও কবিরা গুনাহ। এর সঙ্গে আপস করার কোনোই সুযোগ নেই।

পুরুষকে আল্লাহ যে পুরুষালি বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন, তা সেভাবেই বজায় রাখা এবং নারীকে যে নারীত্বের বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা-ও সেভাবে ধরে রাখাই আল্লাহর বিধান। এটা এমনই এক ব্যবস্থা, যা না হলে মানবজীবন যথাযথভাবে চলবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন’। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৫)

সব ইসলামী আইনবিদ এ বিষয়ে একমত যে ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে বিকৃতিসাধন, যা সুস্পষ্ট হারাম। আবার অনেকের ভাষ্য মতে এটি কুফরি। তাফসিরে কুরতবিতে ইমাম কুরতবি (রহ.) বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনোরূপ পরিবর্তন করা নাজায়েজ। (তাফসিরে কুরতবি : ৫/৩৯৩)

তথ্যঋণ

১. ট্রান্সজেন্ডার কানুন ওয়া হাকায়ীক আওর উসকি খতরনাক আছরাত, শায়খ ইকরাম ইলাহি
২. ইসলাম অ্যান্ড ট্রান্সজেন্ডার, মুহাম্মদ বাহরুল আফিফ
৩. ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ, আসিফ আদনান

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আমল

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আমল
সংগৃহীত ছবি

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজেকে যাচাইয়ের সুযোগ পান একজন শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষার্থীর মেধা ও মান যাচাইয়ের মানদণ্ড হচ্ছে এই পরীক্ষা।

ইসলাম ভালো ফলাফলের জন্য অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে।

তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য যে কাজটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কঠোর পরিশ্রম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সবার জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।
’ (সুরা আল-আহকাফ : ১৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ-পরিচয় তাকে কখনোই এগিয়ে দিতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম : ৭০২৮)

আরো পড়ুন
আমল কবুল হওয়ার দোয়া

আমল কবুল হওয়ার দোয়া

 

আল্লাহর ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে পড়ালেখা না করেই উত্তম ফলাফলের অপেক্ষায় থাকবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। তাই পড়ালেখা করতে হবে।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ : ১৭৩০)

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হওয়া যেতে পারে।

কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘সালাতুল হাজত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ : ১৩১৯)

এটি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়া জরুরি নয়। বরং সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজ প্রয়োজনগুলো মহান আল্লাহর কাছে পেশ করা ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। 

তাড়াহুড়ার কারণে ভুল হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, তাড়াহুড়া শয়তানের অভ্যাস। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কাজে ধীরস্থিরতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (সুনানে বায়হাকি : ২০৭৬৭)। 

যেকোনো ভালো কাজই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তাই পরীক্ষার্থীরাও প্রশ্নপত্র গ্রহণ করার সময় এবং উত্তর লেখা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সঙ্গে দরুদ শরিফও পাঠ করে নিতে পারেন। কারণ কোনো ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ওপর একবার দরুদ পড়লে মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। বিসমিল্লাহ পড়ার ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যেসব কাজ আল্লাহর নাম না নিয়ে শুরু করা হয়, সেগুলো বরকতশূন্য। কোনো বর্ণনায় আল্লাহর প্রশংসার কথাও বলা হয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, ভালোভাবে মুখস্থ করে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে না। কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পারেন।

উচ্চারণ : ‘রব্বিশরাহলি সদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি, ইয়াফকহু কওলি।’

অর্থ : ‘সে বলল, হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন—যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা ত্বহা : ২৫-২৮)

এই দোয়া মৌখিক পরীক্ষার সময় বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।

মন্তব্য

মুমিনের দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর নির্দেশনা

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
মুমিনের দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর নির্দেশনা

বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলায় মসজিদে আকসা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে গাজাবাসী। কাঁদছে নিষ্পাপ শিশুরাও। এক লাখ ১৭ হাজার মানুষের শহর রাফাহ, সেখানে হয়তো কেউ বেঁচে নেই।

এমন রূঢ় বাস্তবতায়ও মহান আল্লাহর অভয় বার্তায় আস্থা রাখতে চাই—‘তোমরা হীনবল হইয়ো না এবং দুঃখিতও হইয়ো না; তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)

অচিরেই অলৌকিক সাহায্য ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি হবে। কেননা, মজলুম জনগণের হাহাকার আল-কোরআনের শাশ্বত আবেদন : ‘আর তোমাদের কী হলো যে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে—যারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অত্যাচারীদের এ জনপদ থেকে উদ্ধার করো। তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক পাঠাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও।

’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)

মুসলমানদের বিপদ-বিপর্যয়ের কারণ

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসমৃদ্ধ সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী না থাকা

ইস্পাতকঠিন একক মুসলিম নেতৃত্ব না থাকা

তাওবা, তাকওয়া ও দোয়ার পথ ছেড়ে দেওয়া

ইলম আমলের ত্রুটি ও প্রযুক্তিবিমুখিতা

অনৈক্য, বিলাসিতা ও বিধর্মীদের সঙ্গে সখ্য ইত্যাদি।

দুঃখজনক সত্য—ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ গাজার মুসলমানদের রক্ষার্থে একটি বোমাও ফাটায়নি। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের রয়েছে বিপুল তেল সম্পদ। কিন্তু গাজার অ্যাম্বুল্যান্সগুলো দাঁড়িয়ে থাকল নিরূপায় নীরব আর্তনাদে।

তবু তেল দিয়ে কেউ সহযোগিতা করেনি।

জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণে শীর্ষস্থানের অধিকারী বাংলাদেশ; গোটা বিশ্বের মুসলমানদের ৫০ লাখ সৈন্য, অসংখ্য ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট এবং ঈমানি শক্তি নিয়ে গাজার দিকে কেউ হাঁটেনি। বিশ্ব মুসলমান ও তাদের বিবেক নিশ্চুপ... অথচ সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াত ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব।’ (আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী)!

মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা নয় “...দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগবালা তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। তারা এত দূর বিচলিত হয়েছিল যে রাসুল ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীরা বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

” (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৪)।

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে আয়াতটির সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা যখন ইহুদি, মুনাফিক ও আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া ও কষ্ট পেতে লাগল, তখন কোনো কোনো মুসলিম নবী করিম (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলে, মুসলিমদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এ আয়াত নাজিল হয় এবং রাসুল (সা.)ও বললেন যে ‘তোমাদের আগের লোকদের তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চেরা হতো এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত ও চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু এ অকথ্য জুলুম-নির্যাতন তাদেরকে তাদের দ্বিন থেকে ফেরাতে পারেনি।’ অতঃপর বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এই দ্বিনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, ...আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় থাকবে না।’ (বুখারি)

মদিনার মুসলমানরা যখন রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে নিরাপদে জাগবে কি—এমন আতঙ্কগ্রস্ত, তখন ঘোষিত হলো মহান আল্লাহর আশ্বাসবাণী—‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি তাদের পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন; যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছেন। তিনি তাদের দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করবেন, যে দ্বিন তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন...।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)

পরিশেষে প্রিয় নবী (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করছি—খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্র হবে। এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বলেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক দূর করে দেবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দেবেন। আরেক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ‘আল-ওয়াহন’ ভীরুতা কী? তিনি বলেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আবু দাউদ)
 

মন্তব্য

অন্যের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রতিদান

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
অন্যের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রতিদান

গিবত বা পরনিন্দা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। তাই কেউ কেউ গিবত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও গিবত শোনাও যে একটি বড় পাপ, সে বিষয়ে আমরা উদাসীন। তাই নিজে গিবত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও অসতর্কতাবশত গিবতকারীদের গিবত শুনে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনর্থক কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তুমি তাদেরকে দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)

যারা এ ধরনের কথাবার্তা শোনা থেকেও নিজেদের বিরত রাখে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সুনাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা থেকে বিমুখ হয়।

’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)

অর্থাৎ অর্থহীন ও অসার কাজ—এটি এমন সব কথা ও কাজকে বোঝায়, যা অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক কিংবা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মুমিন কখনো এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যারা অহেতুক বিষয় পরিহার করে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)

তাই কেউ আমাদের সামনে এসে কোনো গুনাহের কথা কিংবা পরনিন্দা ইত্যাদি করলে, আমাদের উচিত তাদের এড়িয়ে চলা।

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সামনে কেউ কারো ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বলতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতেন। এবং ওই ভাইয়ের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। ইতিবাচক কথা বলতেন। ইতবান ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) সকালে আমার কাছে এলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে না।
তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি এ কথা বলোনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যেকোনো বান্দা কিয়ামতের দিন ওই কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৩৮)

তা ছাড়া পরনিন্দা করার মাধ্যমে নিন্দিত ব্যক্তির সম্মানহানি করা হয়, তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়, যে ব্যক্তি পরনিন্দাকারীকে যেকোনোভাবে তা থেকে বিরত করবে এবং যার নিন্দা করা হচ্ছিল তার সম্মান রক্ষার্থে ইতিবাচক কথা বলে তার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের মানসম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ‌ তাআলা তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

আমাদের সবার উচিত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, কেউ অন্যের পরনিন্দা করলে তা শোনা থেকেও বিরত থাকা।

মন্তব্য

ফরজ নামাজের পর রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ফরজ নামাজের পর রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন

ফরজ নামাজের পর দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিস শরিফে বিভিন্ন দোয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইসতেগফা পাঠ করা। এরপর নিম্নের দোয়া পাঠ করা- 

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম।

তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়া ইকরাম। 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি শান্তিময়। আপনার কাছ থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী।

’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯১)।

হাদিস শরিফে এসেছে,

 عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلاَتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلاَثًا وَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ الْوَلِيدُ فَقُلْتُ لِلأَوْزَاعِيِّ كَيْفَ الاِسْتِغْفَارُ قَالَ تَقُولُ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ ‏.‏

অর্থ : রাসুল (সা.)-এর মুক্ত করা দাস সাওবান (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) যখন নামাজ সম্পন্ন করতেন তখন তিন বার ইসতিগফার পাঠ করতেন। এরপর উল্লিখিত দোয়াটি পড়তেন। বর্ণনাকারী ওয়ালিদ বলেছেন, আমি আওজায়ি (রহ.)-কে বললাম, ইসতিগফার কীভাবে পড়বে? তিনি বলেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ।

আসতাগফিরুল্লাহ।’
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ