<p>মহানবী (সা.) মানুষকে আল্লাহর পুরস্কার ও প্রতিদানের ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে পবিত্র কোরআনে শাস্তির চেয়ে সুসংবাদকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটাই ছিল নবী (সা.)-এর কর্মপন্থা। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন কোরো না। সুসংবাদ দাও, ঘৃণা ছড়িয়ো না।’ (সহিহ বুখারি, আয়াত : ৬৯)</p> <p><strong>যাদের জন্য সুসংবাদ</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বিভিন্ন শ্রেণির মুমিনদের সুসংবাদ দিয়েছেন। এমন কয়েকটি  শ্রেণি হলো—</p> <p>১. যারা মুমিন : যারা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রুকুকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; এই মুমিনদের তুমি সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)</p> <p>২. যারা বিনয়ী : আল্লাহ বিনয়ীদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বিনয়ীদের সুসংবাদ দিতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদ দাও বিনয়ীদের। যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৪-৩৫)</p> <p>৩. যারা ধৈর্য ধারণ করে : ধৈর্যশীলদেরও আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়। আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)</p> <p>৪. যারা সৎকর্মপরায়ণ : যারা ভালো কাজ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘এর আগে ছিল মুসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব এর সমর্থক—আরবি ভাষায়, যেন এটা অবিচারকারীদের সতর্ক করে এবং যারা সৎকাজ করে তাদের সুসংবাদ দেয়।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১২)</p> <p><strong>যেসব বিষয়ে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুমিনদের যেসব সুসংবাদ দিয়েছেন তার কয়েকটি হলো—</p> <p>১. সাহায্যের সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের সাহায্যের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১৭১-১৭৩)</p> <p>২. খিলাফতের সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের পৃথিবীতে খিলাফত তথা শাসনক্ষমতা দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বিনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের অবশ্য নিরাপত্তা দান করবেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)</p> <p>৩. বিজয়ের সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের চূড়ান্ত বিজয় দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরো একটি অনুগ্রহ। আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়; মুমিনদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : সাফ, আয়াত : ১৩)</p> <p>৪. সহজতার সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের দুঃসময়ের বিপরীতে সুসময়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই আছে স্বস্তি। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আছে স্বস্তি।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)</p> <p>৫. উচ্চ মর্যাদার সুসংবাদ : যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর বিধান মেনে চলে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে আমি তাদেরই একজনের কাছে ওহি প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে তুমি মানুষকে সতর্ক করো এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে উচ্চ মর্যাদা।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২)</p> <p>৬. ক্ষমার সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘তুমি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারো, যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব, তাকে তুমি ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের সংবাদ দাও।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ১১)</p> <p>৭. জান্নাতের সুসংবাদ : আল্লাহ মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে ও ভালো কাজ করে তাদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য আছে জান্নাতগুলো, যার পাদদেশে ঝরনা প্রবাহিত হয়।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে তাঁর সুসংবাদ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।<br />  </p>