<p>আল্লাহর যেসব নাম ও গুণাবলি কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াই তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা মুতাজিলাদের মতো মানবীয় গুণাবলির সঙ্গে তা মিলিয়ে ব্যাখ্যা করে না। এ ক্ষেত্রে তাদের মূল বক্তব্য হলো, ‘পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১১)</p> <p>এই আয়াতের ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা নিজেকে যে সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত তা অস্বীকার করে না এবং আল্লাহর বাণীর ভুল ব্যাখ্যাও করে না। কোরআন ও সহিহ হাদিসে আল্লাহ তাআলার যেসব সিফাত (গুণাবলি) রয়েছে, তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন করা, অস্বীকার ও বাতিল করা, পদ্ধতি ও ধরন বর্ণনা করা এবং কোনো ধরনের উদাহরণ, উপমা ও দৃষ্টান্ত পেশ করা ছাড়াই সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।</p> <p>প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, আল্লাহর গুণাবলি ও সিফাতগুলোর প্রতি পূর্ণাঙ্গ যথাযথ ঈমান স্থাপন করা আবশ্যক। এ জন্য আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক, যেন তার যথার্থ অর্থ জানা যায় এবং তার প্রতি অন্তরে ঈমান স্থাপন করা যায়।</p> <p>পাশাপাশি মুমিন সৃষ্টিজগতের কোনো কিছুর সঙ্গেই সেই সিফাতগুলোর সাদৃশ্য ও তুলনা করা থেকে দূরে থাকতে পারে।<br /> আহলে সুন্নাতের লোকেরা সিফাতগুলো অস্বীকারও করে না এবং সেগুলোকে সৃষ্টির মাখলুকের সিফাতের সঙ্গে তুলনাও করে না; বরং পবিত্র কোরআনে আল্লাহ যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তারা সেভাবেই বিশ্বাস করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সৃষ্টিজগতের কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১১)</p> <p>এই আয়াতে সেই সব লোকের বক্তব্য খণ্ডন করা হয়েছে, যারা আল্লাহকে মাখলুকের সঙ্গে তুলনা করে। যারা বলে, আল্লাহর সিফাতগুলো মাখলুকের সিফাতের মতোই। আর আল্লাহর বাণী, ‘তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ বাক্য দ্বারা আল্লাহর সিফাতে অবিশ্বাসীদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। কেননা এর মধ্যে আল্লাহর জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টি সাব্যস্ত করা হয়েছে।</p> <p>সুতরাং আয়াতটি আসমা ওয়াস সিফাত (আল্লাহর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলি) বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম মূলনীতিতে পরিণত হয়েছে। কেননা এটি একই সঙ্গে আল্লাহর জন্য সিফাত সাব্যস্ত করে এবং মাখলুকের মধ্যে সেই সিফাতগুলোর উপমা ও দৃষ্টান্ত হওয়াকে অস্বীকার করে।</p> <p>বিশুদ্ধ হাদিসে আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নামের উল্লেখ আছে। তবে হাদিসবিশারদদের বক্তব্য হলো, আল্লাহর গুণাবাচক নাম ৯৯টিতে সীমাবদ্ধ নয়। কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর যে গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনো কোনোটি মানুষের ভেতরে পাওয়া যায়। এমনকি অন্য প্রাণীর ভেতরেও তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। যেমন—দয়াশীল হওয়া, ক্ষমা করা, রাগান্বিত হওয়া, সুবিচার করা, প্রতিদান দেওয়া ইত্যাদি।</p> <p>প্রশ্ন হলো, মানুষ ও আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার পার্থক্য কোথায়? মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকরা বলেন, আল্লাহ মানুষের ভেতর তার কিছু গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, যেন মানুষ সেই গুণগুলোর মর্ম উপলব্ধি করতে পারে। তবে আল্লাহর গুণাবলি কোনোভাবেই সৃষ্টির গুণাবলির সঙ্গে তুল্য নয়। আল্লাহর গুণাবলি সব বিবেচনায় পূর্ণ। এতটা পূর্ণ, যা মানুষের কল্পনার অতীত। অন্যদিকে মানুষের সব গুণ আল্লাহর তুলনায় অপূর্ণ। আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ তার সমকক্ষ নয়।’ (সুরা : ইখলাস, আয়াত : ৪)</p> <p>আর মানুষের গুণাবলি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৮)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।</p> <p> </p>