<p>মানবজীবনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ইসলাম। অন্যায়ভাবে রক্তপাত ও মানবহত্যা হারাম। কোরআনের ভাষ্য মতে, একজন মানুষকে হত্যা করা পৃথিবীর সবাইকে হত্যা করার নামান্তর।</p> <p>আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাঈলের প্রতি এ বিধান দিয়েছি যে কেউ যদি প্রাণের বিনিময় কিংবা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন তাবৎ পৃথিবীর সবাইকে হত্যা করল। আর যে কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন পৃথিবীর সবার জীবন রক্ষা করল।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২)</p> <p>এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা লিখেন, যদি পৃথিবীতে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড ব্যাপক হয়ে যায়, তাহলে জগতের কেউ নিরাপদ থাকবে না। এ জন্য সব ধরনের হত্যাকাণ্ড গোড়া থেকে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে কোনো একজনের হত্যাকাণ্ডকে পৃথিবীর সবার হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।</p> <p>মানুষ হত্যা মহাপাপ</p> <p>কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পাপ হলো, আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করা, কাউকে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮৭১)</p> <p>খুনি ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত। ১. যে ব্যক্তি হারাম শরিফে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। ২. যে ব্যক্তি ইসলাম-পূর্ব জাহেলি যুগের রেওয়াজ-প্রথার অনুসরণ করে। ৩. যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কেবল খুনখারাবির উদ্দেশ্যে কোনো মুসলমানের রক্তপাত কামনা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৮২)</p> <p>অন্যকে হত্যা করার দ্বারা মানুষ নিজের ধ্বংস ত্বরান্বিত করে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘যেসব অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পর তার ধ্বংস থেকে আত্মরক্ষার উপায় থাকে না, সেগুলোর একটি হলো কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮৬৩)</p> <p>মানুষ হত্যার শাস্তি</p> <p>কোনো মানুষকে হত্যা করার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। এর পার্থিব শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পরকালে তার জন্য আছে জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাতে সে সর্বদা থাকবে, আল্লাহ তার প্রতি গজব নাজিল করবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)</p> <p>এই আয়াতে পাঁচটি শাস্তির কথা বলা হয়েছে, এক. জাহান্নামের আগুন। দুই. জাহান্নামে সর্বদা থাকা। তিন. আল্লাহর গজব। চার. আল্লাহর অভিশাপ। পাঁচ. ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত থাকা। </p> <p>একজন মুমিনকে হত্যা করা পৃথিবীর সংঘটিত বড় পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন ঈমানদারকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে দুনিয়া এবং তাতে যা কিছু আছে, সব কিছুর চেয়ে বড় অপরাধ।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৯২)</p> <p>মুসলমানের খুনির ইবাদত কবুল হয় না। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হবে, তার কোনো ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২২১)</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সব অধিবাসী মিলেও কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তাহলে এর শাস্তিস্বরূপ সবাই জাহান্নামে যাবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৮)</p> <p>এমন আরো অসংখ্য শাস্তি ও ভয়াবহতার কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অথচ আমাদের সমাজে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সামান্য বিষয় নিয়ে অসংখ্য মানুষ ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পরস্পরকে হত্যা করতে উদ্যত হয়ে যায়। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব—সর্বত্র একই হালচিত্র। এটি রাষ্ট্রীয়ভাবেও গর্হিত অপরাধ। এসব গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি, নয় তো ইহকাল ও পরকালে ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।</p>