<p>দেশ স্বাধীন লড়াইয়ে বিজয়ের বেশে ফিরেছিলেন ৩০ বছরের টগবগে যুবক মো. আব্দুল খালেক। বয়সের ভারে ন্যুজ সেই মানুষটিকে এখন জীবনযুদ্ধে লড়াই করে চলতে হচ্ছে। শুধুমাত্র স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার আকুতি তাঁর চোখে মুখে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বিজয় দিবসের দিন ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবন। সেদিনের সূর্য তখন অস্তমিত।</p> <p>রেলওয়ে স্টেশনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন আব্দুল খালেক। কেউ কাছে আসছিলেন না। খবর যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কানে। তারা এসে আব্দুল খালেককে হাসপাতালে ভর্তি করায়। অবশেষে সেই মুক্তিযোদ্ধা খালেক রবিবার বাড়ি ফিরে গেছেন। দুপুরে তাঁর স্বজনরা এসে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে পরিপূর্ণ সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করে বাড়ি নিয়ে যান। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="৭ সমন্বয়ককে ভুয়া দাবি করে বিক্ষোভ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/22/1734866222-d6d55a82f7452d28747769bddd786a39.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>৭ সমন্বয়ককে ভুয়া দাবি করে বিক্ষোভ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/22/1460150" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এর আগে সেনাবাহনীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন কসবা ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। </p> <p>বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামে। আখাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথা হয় আব্দুল খালেকের। বারবার কান্না করতে করতে জানালেন তাঁর জীবন যুদ্ধের কথা।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা জানান, বিজয় দিবসের দিন রাত নয়টার পর ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা তাঁর বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কথা বলে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেন তাঁরা। বুঝতে পারেন যে, জীবনযুদ্ধে তিনি ভালো নেই।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দেশত্যাগী হাসিনা ভারতে বসে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন : হাফিজ উদ্দিন" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/22/1734865907-0453e64c69c23cc592f1dc1c92a464dd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দেশত্যাগী হাসিনা ভারতে বসে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন : হাফিজ উদ্দিন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/12/22/1460147" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এলাকাবাসী, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, পরিবারসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আব্দুল খালেকের তিন স্ত্রী। ওই তিন পরিবারে চার সন্তান। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের সঙ্গে তাঁর খুব একটা যোগাযোগ নেই। ছোট স্ত্রীর সন্তানের কাছেই তিনি থাকেন। তবে সেখানেও তিনি খুব একটা ভালো নেই। নানা ধরনের লাঞ্ছণা সয়েই তাকে চলতে হচ্ছে। </p> <p>কাঁদতে কাঁদতে আব্দুল খালেক বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে ছেলের সঙ্গে দিতে চান তাহলে বলে দেন যেন আমার চিকিৎসা করায়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আল্লাহ রিজিকে যা রেখেছে ভাই খেয়ে দিন পার হবে।’</p> <p>আব্দুল খালেক জানান, দেশ স্বাধীন হলেও তার ভাগ্যে সুখ জুটেনি। দিনমজুরের কাজ করেই চলতে হয়েছে। এ বয়সে এসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ২০ হাজার টাকাই ভরসা। তবে ওই টাকার পুরোটাও তিনি পান না। আট লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ থাকায় মাসে ১৪ হাজার টাকা ওই ভাতা থেকে কেটে যাচ্ছে। ঋণের টাকা সন্তানদের সুখের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।</p> <p>আব্দুল খালেক বলেন, ‘ট্রাকে হেলপারের কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় এক পা ভেঙে যায়। এখন বয়সজনিত কারণে নানা অসুখ বিসুখ বাসা বেধেছে। কিন্তু দুই বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সন্তানরা তাকে ভালোভাবে দেখে রাখে না। ভালো চিকিৎসাও করায় না। যে কারণে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু কখন কিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম সেটা মনে পড়ছে না।’</p> <p>ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ নেওয়াজ বলেন, ‘একজন বৃদ্ধ স্টেশনে পড়ে থাকার খবরে আমরা ছুটে যাই। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন। দুর্গন্ধে কাছেও যাওয়া যাচ্ছিলো না। এ অবস্থায় আমরা কয়েকজন মিলে হাসপাতালে ভর্তিসহ সব ধরণের সহযোগিতা করি। জানতে পারি ওনি মুক্তিযোদ্ধা। ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে তার পরিবার নিতে এসেছে। কিন্তু ওনার কাছ থেকে পারিবারিক অত্যাচারের কথা শুনে মনে হলো সবার সঙ্গে কথা বলে দেওয়া উচিত। বিষয়টি আখাউড়ার ইউএনও ও মুক্তিযোদ্ধার এলাকার ইউনয়িন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। সর্বশেষ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে তাঁর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা ওই মুক্তিযোদ্ধাকে পরিপূর্ণ সেবা দিবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।’</p> <p>আব্দুল খালেকের সন্তান মো. ফারুক বলেন, ‘আমার এক সৎ বোনকে ঘর করে দিতে গিয়ে বাবা ঋণ করেন। আমি কোনো টাকা নেইনি। আমার সঙ্গেই বাবা থাকে। যতটুকু সম্ভব সেবা করি। ভাতার টাকা আমার চাচাকে নিয়ে তোলার পর কিছু টাকা বাবার হাতেও দেওয়া হয়। কিন্তু ওনি বাড়ির বাইরে চলে যান বলে বেশি টাকা দেওয়া হয় না। বাবা অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি জেনে নিতে এসেছি। ছাত্ররা চাইছেন যেন বাবাকে ভালোভাবে দেখে রাখি সেই প্রতিশ্রুতি। আমি বলেছি যেন আমার অন্যান্য ভাইবোনদের ডেকেও এটা বলে দেওয়া হয়।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনে নতুন নেতৃত্ব" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/22/1734864811-a173da434a8acb885009baadb931a973.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনে নতুন নেতৃত্ব</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/12/22/1460143" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আব্দুল খালেকের ভাই মো. আয়াত আলী বলেন, ‘দুই পরিবারের কেউ আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের খোঁজ নেয় না। যে ছেলের কাছে থাকে সে অটোরিকশা চালায়। যতটুকু সম্ভব সে সেবাযত্ম করে। এখন থেকে আর কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করি।’</p>