<p>মহান আল্লাহ মানুষকে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, নামাজের ভেতর নির্ধারিত দোয়ার বাইরে অন্য কোনো দোয়া করা যাবে বা আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়া যাবে?</p> <p><strong>নামাজে দোয়া করার বিধান </strong></p> <p>বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, নামাজের ভেতর বিভিন্ন ধরনের দোয়া পাঠের বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই নামাজের ভেতর দোয়া করা জায়েজ। তবে হানাফি মাজহাব অনুসারে মানুষের কথার সঙ্গে মিলে যায় এমন জাগতিক দোয়া নামাজ ভঙ্গের কারণ, সেটা ফরজ নামাজে হোক বা অন্য কোনো নামাজে। যেমন—হে আল্লাহ! আমাকে অমুক সুন্দরী নারীর সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করুন, হে আল্লাহ! আমাকে অমুক মজাদার খাবার খাওয়ার তাওফিক দিন ইত্যাদি। নামাজে মানুষের কথার সঙ্গে মেলে না এমন পার্থিব ও অপার্থিব দোয়া করা জায়েজ।</p> <p><strong>কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ার বিধান </strong></p> <p>যেসব দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে নামাজে পাঠ করেছেন, তবে নিয়মিত পাঠ করেননি, এমন দোয়া নামাজে মুস্তাহাব হিসেবে পাঠ করা যাবে। তবে উত্তম হলো ফরজ নামাজে এমন দোয়া না পড়া, বরং এমন দোয়া করতে চাইলে তার জন্য নফল নামাজ বেছে নেওয়া। কোরআনে বর্ণিত দোয়া যদি কিরাত হিসেবে পাঠ না করে, তবে একই বিধান।</p> <p><strong>নামাজে একই দোয়া বারবার পড়ার বিধান </strong></p> <p>ফকিহ আলেমরা আরো বলেন, শেষ বৈঠকে দুরুদ পাঠ করার পর ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত সব ধরনের নামাজে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা যায়, একাধিক দোয়া পড়া যায় এবং একই দোয়া বারবার পড়া যাবে। কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায়, মধ্যবর্তী বৈঠক, সিজদা ইত্যাদির মধ্যে দোয়া করতে চাইলে উত্তম হলো নফল নামাজে দোয়া করা।</p> <p><strong>ইমাম ও মুক্তাদির পার্থক্য </strong></p> <p>কেউ যদি কোনো কারণে একাকী ফরজ নামাজ আদায় করে, অথবা কেউ মুক্তাদি হয় অথবা ইমাম বৈঠকে এত দেরি করে যে তাতে দোয়া পড়া সম্ভব, তবে ব্যক্তি এমন দোয়া করতে পারবে। বিজ্ঞ আলেমরা ইমামদের নির্ধারিত দোয়ার বাইরে অন্য দোয়া পড়তে নিরুৎসাহ করেন। কেননা এতে অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিদের কষ্ট হতে পারে। (আল বাহরুর রায়িক : ১/৩৪৯; ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৫০৫; ফয়জুল বারি : ২/৩৭৯)</p> <p><strong>নামাজে দোয়া করার উত্তম সময় </strong></p> <p>নামাজের ভেতর দোয়া করার উত্তম সময় হলো তিনটি : ক. সিজদার মধ্যে দোয়া করা, খ. সালাম ফেরানোর আগে, গ. বিতরের নামাজে কুনুতের সময়। এই তিন সময় দোয়া করার বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। সিজদার সময় দোয়া করতে নবীজি (সা.) উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিজদায় তোমরা দোয়া করতে চেষ্টা করো। তোমাদের জন্য দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১০৪৫)</p> <p>এর বাইরে রুকুর সময়, রুকু থেকে ওঠার পর, দুই সিজদার মাঝেও দোয়া করার বিষয়টি হাদিসে এসেছে। এমন কয়েকিট দোয়া নিম্নে বর্ণনা করা হবে।</p> <p><strong>নামাজে পঠিতব্য কয়েকটি দোয়া</strong></p> <p>নামাজে নির্ধারিত দোয়াগুলোর বাইরে হাদিসে বর্ণিত কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করা হলো।</p> <p>১. রুকু ও সিজদায় পড়ার দোয়া</p> <p>উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফির লি।</p> <p>অর্থ : হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করে দিন।</p> <p>সূত্র : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকু ও সিজদায় এই দোয়া পাঠ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২৯৩)</p> <p>২. রুকু থেকে ওঠার পর পড়ার দোয়া</p> <p>উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদু, মিলউল সামাওয়াতি ওয়া মিলউল আরদি ওয়া মা বায়নাহুমা ওয়া মিলউ মা শিতা মিন শাইয়িম বা’দু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি। লা মানিয়া লিমা আ’তায়তা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়াংফাউ জাল জাদ্দি মিনকা জিদ্দা।</p> <p>অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহ! আপনার জন্য ওই পরিমাণ প্রশংসা, যা আসমান, জমিন ও উভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা পূর্ণ করে দেয়। এ ছাড়া আপনি যা কিছু চান তা পূর্ণ করে দেয়। হে প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী! আপনি যা দান করেন তার কোনো বাধাদানকারী নেই, আপনি যা দেন না তার কোনো দাতা নেই, আপনার ক্রোধ ও শাস্তি থেকে কোনো ক্ষমতাধরের ক্ষমতা উপকারে আসে না।</p> <p>সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকু থেকে মাথা ওঠানোর পর এই দোয়া পড়তেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭৮)</p> <p>৩. সিজদায় পড়ার দোয়া</p> <p> উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আউওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু ওয়া আলানিয়াতাহু ওয়া সিররাহু।</p> <p>অর্থ : হে আল্লাহ! আমার সব পাপ ক্ষমা করে দিন; ছোট পাপ  ও বড় পাপ, আগের পাপ ও পরের পাপ, প্রকাশ্য পাপ ও গোপন পাপ।</p> <p>সূত্র : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদায় এই দোয়া পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮৩)</p> <p>৪. দুই সিজদার মধ্যে পড়ার দোয়া</p> <p>উচ্চারণ : রাব্বিগ-ফিরলি ওয়ারহামনি ওয়াজবুরনি ওয়ারফা’নি ওয়ারজুকনি ওয়াহদিনি।</p> <p>অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর দয়া করুন, আমার ক্ষতি পুষিয়ে দিন, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন, আমাকে (প্রশস্ত) জীবিকা দান করুন, আমাকে সঠিক পথের দিশা দিন।</p> <p>সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদায় এই দোয়া পাঠ করতেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৪)</p> <p>৫. সালাম ফেরানোর আগে পড়ার দোয়া</p> <p>উচ্চারণ : আম্মাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু, আনতা ইলাহি লা ইলাহ ইল্লা আনতা।</p> <p>অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ক্ষমা চাই, যে পাপ আমি আগে করেছি, যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি, যা আমি প্রকাশ্যে করেছি। আপনি আমার উপাস্য, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।</p> <p>সূত্র : আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাম ফেরানোর পর এই দোয়া পড়তেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫০৯)</p> <p><em>নামাজে পঠিতব্য দোয়াগুলো জানতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত <a href="https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2020/02/27/879303">‘নামাজে পঠিতব্য দোয়া ও তাসবিহ’</a> শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ুন।</em></p>