<p>দুনিয়া মানুষের জন্য পরীক্ষাগার, তাই এখানে মানুষের সামনে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ, যা তাকে সত্যের পথে দৃঢ় থাকতে বাধা দেয়। মিথ্যার পথে আকর্ষণ করে। লোভ-লালসা তাদের অন্তর্চোখকে অন্ধ করে দিতে চায়। তাই এ পথে চলতে হলে দৃঢ় ঈমান থাকা জরুরি।</p> <p>আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো ত্যাগ করার মানসিকতা থাকা জরুরি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তুমি যদি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করো, তবে তিনি তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। (মুসনদে আহমদ, হাদিস : ২১৯৯৬)</p> <p>সাখাভী (রহ.) বলেন, এই হাদিসের প্রত্যেক বর্ণনাকারী সহিহ। আলবানি (রহ.) বলেন, মুসলিমের শর্তের মানদণ্ডে এই হাদিস সহিহ।</p> <p>এ বাক্যের মূল বার্তা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু ত্যাগ করলে, তিনি তার উত্তম প্রতিদান দেন।</p> <p>একজন মুসলমান যখন তার প্রবৃত্তির চাহিদা ও কুপ্রবৃত্তির ধোঁকাকে অতিক্রম করে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করে, তখন সে আসলে নিজেকে নফসের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে। এমনকি কোনো বৈধ কাজও যদি কোনো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ত্যাগ করা হয়, যেমন রমজানের রোজার সময় বৈধ পানাহার থেকে বিরত থাকা (অর্থাৎ যা রমজানের বাইরে জায়েজ ছিল), তবে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হয়ে যায়।</p> <p>যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান মেনে চলার জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ কখনোই তাকে ব্যর্থ করেন না; বরং তিনি তাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার বাসস্থান।’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)</p> <p>সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে বড় পুরস্কার ও প্রতিদান একজন মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে?</p> <p>ইসলামে আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের প্রতিদানের বহু উদাহরণ পাওয়া, নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো :</p> <p>১. দান ও ব্যয়ের মাধ্যমে বরকত লাভ : অর্থ মানুষের খুব প্রিয় জিনিস। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অর্থ ব্যয় করে, আল্লাহ তার সম্পদে বরকত দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)</p> <p>২. প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করা : প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য কাউকে ক্ষমা করতে পারাও অনেক বড় ত্যাগের বিষয়। যার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন...। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)</p> <p>অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংযত থাকে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সৃষ্টিকূলের মধ্য থেকে ডেকে নেবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য থেকে তার পছন্দমতো যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৭)</p> <p>৩. অহংকার ত্যাগ ও বিনয়ী হওয়া : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অহংকার ত্যাগ করে এবং বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন। রাসুল (সা.) একই হাদিসে আরো বলেন, ...আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হয়, তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)</p> <p>৪. লোভনীয় বস্তু ত্যাগের প্রতিদান : আল্লাহকে খুশি করার জন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ বিলাসিতা ত্যাগ করতে পারে, তাদের মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বিশেষ সম্মাননা দেবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নম্রতাবশত দুনিয়ার আরাম-আয়েশের পোশাক বা বিলাসিতা ত্যাগ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং ঈমানের পোশাকে ভূষিত করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮১)</p> <p>সুবহানাল্লাহ, এক কথায় আল্লাহর জন্য যেকোনো ত্যাগের প্রতিদান আল্লাহ বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন।</p> <p>আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য তিন ধরনের হতে পারে :</p> <p>১. ইবাদতে ধৈর্য : ইবাদতে আন্তরিকতা, ধারাবাহিকতা ও একাগ্রতা বজায় রাখা।</p> <p>২. পাপ থেকে দূরে থাকার ধৈর্য : বিভিন্ন লোভনীয় পাপের হাতছানি উপেক্ষা করা।</p> <p>৩. পরীক্ষা-নির্যাতন সহ্য করার ধৈর্য : দুনিয়ার বিভিন্ন কষ্ট ও বিপদের মুখে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করে দিন। আমিন।</p>
