দেশে মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে। মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
দেশে মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে। মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
আর দেশে দেশে যত রকমের অপরাধের ঘটনা ঘটছে তার বড় অংশ ঘটছে মাদকসংশ্লিষ্টতায়। মাদক সেবনের টাকা জোগানো ও কেনাবেচা নিয়ে সংঘটিত অপরাধ এখন সর্বত্র।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে মাদকাসক্তরা। সম্প্রতি বেশ কিছু পারিবারিক অপরাধমূলক ঘটনা ও পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তির বহু কারণের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অন্যতম। এ ছাড়া ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দারিদ্র্যের কশাঘাত, বেকারত্বের নৈরাশ্যও দায়ী।
মাদকসেবীদের মধ্যে একটি বড় অংশ বেকার। তারা মাদকের টাকা জোগাড় করতেই ঘরে-বাইরে চুরি-ছিনতাই ও খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে অহরহ। রাস্তায় মাদকসেবীদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করার মতো ঘটনাগুলোও বাড়ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, দেশে প্রায় ৩২ ধরনের মাদক সেবন চলে। মাদকের কারণে সার্বিকভাবে কী পরিমাণ অপরাধ ঘটছে, তার কোনো একক জরিপ না থাকলেও মাদকদ্রব্য জব্দ ও আসামি গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান বলছে, মাদকের বিস্তার দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে এবং প্রতিনিয়িত দেখা যাচ্ছে মাদকসংশ্লিষ্টতার কারণে ঘটছে চাঞ্চল্যকর অপরাধ। মাদকাসক্ত অনেকে নেশার টাকা না পেয়ে পরিবারের সদস্যদেরও খুন করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি পরিবারে একজন সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে সেই পরিবারে নেমে আসে বিভীষিকাময় পরিবেশ। মাদককে ঘিরে যেসব সমস্যা তৈরি হয় তা একটি পরিবারকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। তছনছ হয়ে পড়ে সাজানো সংসার। মাদক সমস্যা পারিবার থেকে ছড়িয়ে পড়ে সমাজে। শেষ পর্যন্ত তা রাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিণত হয়।
লেখক ও মনোচিকিৎসক এম এ মোহিত কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মনে করি, মাদক হচ্ছে মস্তিষ্কের রাসায়নিক দানব। কোনো কোনো মাদক ব্রেইনে ঢুকে এক বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ ফর্মে থাকে এবং চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি সব নিয়ন্ত্রণ করে। এ নিয়ন্ত্রণ সুশৃঙ্খল থাকে না, বিশৃঙ্খল করে দেয়। ব্যক্তি সহিংস হয়ে পড়ে, নিষ্ঠুর আচরণ শুরু করে। এক পর্যায়ে মাদকাসক্তরা রাগের বশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খুনখারাবিও করতে দ্বিধা করে না। মা-বাবার মুখে বালিশ চাপা দিতে পারে, তাদের ওপর ছুরি-বঁটি চালাতে পারে। সাধারণ মানুষ এসব কর্ম করতে পারে না। অনেকে বলেন, আমার সন্তান এমন (বিশৃঙ্খল আচরণ) করছে, তার ভেতর দানব ঢুকে গেছে, সেটা বের করে দেন। এই সমস্যা বর্তমানে অনেক পরিবারেই রয়েছে।’
এই মনোচিকিৎসক আরো বলেন, ‘কোথাও কোথাও দেখা যায় মাদকাসক্তরা পুলিশের ওপর হামলা করছে। সুতরাং সবাইকে এর প্রতিরোধে, প্রতিকারে এগিয়ে আসতে হবে এবং আইনের সুরক্ষা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সার্বিক অপরাধ কমে আসবে।’
ঢাকার মানসিক ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রের মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর নুসরাত সাবরিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশির ভাগ পরিবার মাদকসেবীর কথা চেপে রাখে। এ নিয়ে কারো সঙ্গে বলতে চায় না বা চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করে না। এভাবেও কিন্তু মাদকসেবী দিন দিন বাড়ছে।’
সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ড : গত ১৪ মার্চ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নে নেশার টাকা না দেওয়ায় মাদকাসক্ত ছেলে রাজিবের হাতে মা রেজিয়া খাতুন (৫০) খুন হন। ৮ মার্চ যশোর জেলায় পারিবারিক কলহের জেরে শরিফুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করেন তাঁর মাদকাসক্ত ছেলে মো. রমেন (২১)। ৪ মার্চ রংপুরের মিঠাপুকুরে মাদকাসক্ত ছোট ভাই শরিফুল ইসলামের (৪০) হাতে বড় ভাই আতিয়ার রহমানের (৫৫) মৃত্যু হয়। ৬ মার্চ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়িতে বাবা আব্দুর রহিম (৭০) এবং মা আমেনা বেগমকে (৬০) কুপিয়ে জখম করেন মাদকাসক্ত ছেলে আবুল কালাম (৩৮)।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার শহরতলির জগন্নাথপুর গ্রামে সাত বছর বয়সী ছেলে মাহিদকে মারধর করে হত্যা করেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া।
গত ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে মাদক সেবনের টাকা না দেওয়ায় ছেলে রিফাত (১৮) তাঁর বাবা শফিকুল ইসলামকে (৪৫) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। এ ছাড়া ১ ডিসেম্বর মাগুরার আঠারোখাদা গ্রামে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত ছেলে মো. মফিজুর তাঁর বাবাকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে বাবা সুরমান শেখের মৃত্যু হয়।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, মাদক সেবনে শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকার ক্ষতি হয়। নিয়মিত মাদক সেবনে ব্যক্তির সুস্থ চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ লোপ পায়। এ কারণে কোনো ঘটনা, পরিস্থিতি কিংবা কোনো বিষয়ে সঠিক বিচার-বিবেচনা, মূল্যায়ন এবং অনুধাবন করার ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে না। এরই পরিণামে সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকসেবীদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। তাদের অনেকের মধ্যে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে তারা মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহ করতে পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা কিংবা ছিনতাইকালে সামান্য টাকার জন্য খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের একাংশ মাদক সেবনের টাকা জোগাড়ে চুরি-ছিনতাইসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যও বলছে, খুন, ধর্ষণ, পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, অর্থ লেনদেন, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সব কিছুর মূলেই রয়েছে এই মাদকের নেশা।
মাদকে শারীরিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের কর্মকর্তারা জানান, পুরনো মাদকের পাশাপাশি নতুন অনেক মাদকও দেশে আসছে। নতুন মাদকের মধ্যে আইস সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের জটিলতা হতে পারে। এভাবে প্রতিটি মাদকই মানবদেহের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, মাদকাসক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা। এ ছাড়া পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, বিবাহবিচ্ছেদে সংসার ভেঙে যাওয়া, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশা ইত্যাদি কারণেও যুবসমাজ মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। এভাবে স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক পৌঁছে গেছে অনেক আগ থেকেই। বেশির ভাগ মাদক ব্যবহারকারী বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়াকে দোষারোপ করে। প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণের জন্য কৌতূহল অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।
এদিকে বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চললেও অভিযান চালানো হয় না বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ফলে দেশে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ মাদক গ্রহণের স্থানে পরিণত হচ্ছে বলে জনপরিসরে আলোচনা আছে।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। মাদকের এই নীল দংশন থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হলে গড়ে তুলতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা। এতে সমাজ, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া দেশে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে মাদকের সরবরাহ চেইন বন্ধ করতে চোরাচালানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সম্পর্কিত খবর
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রম সারা দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম কুমিল্লা জেলায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিন দিনের এ কার্যক্রমের শেষ দিনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, চৌদ্দগ্রাম, লাঙ্গলকোর্ট, বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার তুলে দেওয়া হয়।
কুমিল্লা বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম সদস্যকে হারিয়ে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। এ বাস্তবতায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ঈদ আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে এসব শহীদ পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কুমিল্লা বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী উমাশা উমায়ন মনি চৌধুরী বলেন, ডা. মজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সারাদেশের মধ্যে কুমিল্লা জেলায় সর্বপ্রথম নির্ধারিত সময়ের আগেই ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যাত্রাপথের অবর্ণনীয় কষ্ট হাসিমুখে মেনে তিনি নিজ হাতে শহীদদের মাঝে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। দুর্দিনে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার জন্য ডা. মজিবুর রহমানের অঙ্গীকার কুমিল্লাবাসীকে উদ্বেলিত করেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) ঢাকার নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন থাইরয়েড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারী। গত মঙ্গলবার পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান কামরুল হুদা তাকে পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এ সময় নিনমাসের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর এ কে এম ফজলুল বারী নিনমাসসহ পরমাণু শক্তি কমিশনের গবেষণাসেবা আরও উন্নততর করে নিনমাসকে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সিলেন্স সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তুলতে সব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকের সহযোগিতা চান।
অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারী বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। ২০০৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন নিনমাসে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একজন আজীবন সদস্য এবং ডব্লিউএমআইম ভারতের সম্মানিত ফেলো।
অধ্যাপক বারী ২০১৭ সালে বঙ্গবীর ওসমানী পদক, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।
শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর তথ্য ভবনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওই সময় সাংবাদিক সংগঠনগুলো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতা করে পরিচালিত হয়েছে। এটি আমাদের জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে মালিক ও সম্পাদকদের প্রভাব থেকেও সাংবাদিকদের মুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি গণমাধ্যম সংস্কারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম মালিক, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের প্রধান এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেছেন, সামনের ঈদে প্রচুর মানুষ ঢাকা ছেড়ে ঈদ উদযাপন করতে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিবেন। মানুষের এই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক বিভাগ থেকে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলমান, অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বাস মালিক সমিতির সাথে কার্যকর আলোচনা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও সড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ তৎপর রয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বিআরটি বাস ডিপোতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি ও তথ্য অধিকার সংক্রান্ত অংশীজন সভায় সভাপতির বক্তব্যে সড়ক সচিব এসব কথা বলেন।
সড়কে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে অংশীজন সভায় আগত অতিথিদের পরামর্শ ও মতামত সাদরে গ্রহণ করা হবে বলে সড়ক সচিব আরো জানান, সড়ক বিভাগের ব্যাপারে অনেকের অভিযোগ আছে, তবে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি রাস্তায় শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যাতে করে মানুষ নির্বিঘ্নে এবারের ঈদ পালন করতে পারে। এ সময় সভায় আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সড়ক সচিব প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সকলকে ধন্যবাদ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ইয়াসীন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. অনুপম সাহা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ।
এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আজকের এই অংশীজন সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধিরা, বাস মালিক সমিতির সদস্যরা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।