বসুন্ধরা গ্রুপের উপহার পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন চর এলাকার দরিদ্র পরিবারের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এই নারীদের জীবন হরেক রকম দুঃখগাথা এক মহাকাব্য। আয়ের উৎস বলতে গেলে তাঁদের কায়িক শক্তি।
প্রত্যেকের স্বামী দিনমজুর। হাতে রোজগার করলে মুখে খাবার জোটে, নয়তো অনাহারে-উপবাসে দিন পার করেন। কয়েকজনের স্বামী আবার জটিল রোগে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে মানসিক রোগী, রক্তশূন্যতা, কিডনি রোগসহ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীও আছেন। সেলাই মেশিন দেওয়ার পর সরেজমিনে জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা চারআনী এলাকায় গেলে দেখা যায়, শাহিন মিয়া নামের একজনের উঠানে সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ কাপড় মাপছে, কেউ কাটছে, কেউ বা সেলাইয়ে ব্যস্ত।
জিয়ারা বেগম, মিষ্টি রানী ও নুরজাহান বলেন, আসন্ন ঈদে আমরা সাময়িকভাবে এক স্থানে সেলাইয়ের কাজগুলো করব। বেশি মেশিন দেখলে গ্রাহক বেশি পাওয়া যাবে।
পরিচিতি বাড়বে। পাশাপাশি মাপ ও কাটায় ভুলত্রুটিগুলো শুধরানোসহ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করছি, এই গ্রামের নারী ও শিশুদের ঈদে কেনা কাপড়গুলো সেলাই করতে পারব। এ জন্য আমাদের মধ্য থেকে প্রচারণাও চলছে। নমিতা রানী বলেন, ‘১৮ বছর আগে পারিবারিক সিদ্ধান্তে আমার বিয়ে হয়। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়তাম। এখন আমার তিন সন্তান। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। কয়েক বছর ধরে আমার স্বামী কিডনি রোগে ভুগছে। চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটছে। অন্যের নিকট খুঁজে ধারদেনা করে মেয়েদের শিশুকালেই বিয়ে দিতে হয়েছে। তারাও স্বামীর বাড়িতে নানান রোগ নিয়ে সংসারের ঘানি টানছে। স্বামী-সন্তানের জন্য মানুষের ক্ষেতখামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়। কখনো দলবদ্ধ, কখনো বা একাই কাজ করতে হয়। একদিন নিজ পায়ে দাঁড়াব, স্বাবলম্বী হব—এমন স্বপ্ন থাকলেও কী আর করার? সাধ থাকলেও তো সাধ্য তো ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেসন্তান সুরঞ্জন সবার ছোট। সে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন শিক্ষক আপা সেলাই প্রশিক্ষণের কথা জানান। অসচ্ছল পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমার মতো অসচ্ছল ২০ নারীকে বিনামূল্যে কাপড় কাটা ও সেলাই প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে গত সপ্তাহে আমাদের প্রত্যেককে পরিবহন খরচসহ একটি করে সেলাই মেশিন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। টাকার অভাবে মেয়েদের পড়ালেখা শেখাতে পারিনি। অসময়ে তাদের বিয়ে দিতে হয়েছে। সেই দিনগুলোর কষ্ট মাড়িয়ে এখন বসুন্ধরার দেওয়া সেলাই মেশিন আমার আগামী দিনের স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে। স্বামী সিভেন্দ্র রায়ের চিকিৎসা ও সন্তান সুরঞ্জনের পড়ালেখাসহ পরিবারে যেন শান্তির বাতাস বয়, সেই আশায় সেলাই মেশিনের চাকায় আমার আগামীর স্বপ্ন ঘুরছে।’