রমজান মাস বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাসকে তিনি অপার মহিমায় মহিমান্বিত করেছেন। এই মাসকে তিনি বান্দার জন্য বরকতময় করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস।
রমজান মাস বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাসকে তিনি অপার মহিমায় মহিমান্বিত করেছেন। এই মাসকে তিনি বান্দার জন্য বরকতময় করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস।
বরকতের পরিচয়
বরকতের শাব্দিক অর্থ প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য। সাধারণত কোনো ইতিবাচক বিষয়ে প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিকে বরকত বলা হয়। ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.) বরকতের সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন, কোনো বিষয়ে আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকে বরকত বলা হয়। অর্থাত্ আল্লাহ যে জিনিসে যে কল্যাণ রেখেছেন সে কল্যাণ অর্জন করাকেই বরকত লাভ করা বলে।
রমজানের বরকত কী
ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.)-এর সংজ্ঞা অনুসারে রমজান মাসে আল্লাহ যেসব কল্যাণ রেখেছেন সেগুলোই রমজান মাসের বকরত। যে ব্যক্তি এসব কল্যাণ অর্জন করতে পারবে সেই রমজানের বরকত অর্জন করতে পারবে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এমন কয়েকটি কল্যাণ হলো—
১. আল্লাহর ক্ষমা : আল্লাহ রোজাদারের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্য আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী নারী, আল্লাহকে বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও বেশি স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫)
২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি : রমজান হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় কতিপয় বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং তা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।
৩. আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি : রমজান মাসে আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অনুসন্ধান করবে তাকে অন্য মাসের ফরজের সমান সওয়াব দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে। এই মাস ধৈর্যের মাস এবং এই মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’ (সুনানে বায়হাকি)
৪. দোয়া কবুল হওয়া : পূর্বসূরি আলেমরা রমজান মাসকে দোয়ার মাস বলেছেন। কেননা রমজান মাসে দোয়া কবুলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)
যেভাবে বরকত লাভ করব
কোরআন ও হাদিসের আলোকে রমজান মাসে বরকত লাভের কয়েকটি উপায় হলো—
১. কোরআন তিলাওয়াত : আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে বরকতময় বলেছেন। তাই কোরআন তিলাওয়াত ও তা অনুসরণের মাধ্যমে বরকত লাভ করা সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, তাহলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫৫)
২. কদরের রাত অনুসন্ধান করা : আল্লাহ কদরের রাতকে বরকতময় করেছেন এবং এই রাতকে হাজার রাতের চেয়ে উত্তম বলেছেন। তাই কদরের রাত অনুসন্ধানের মাধ্যমে রমজান মাসের বরকত লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩)
৩. মসজিদে সময় কাটানো : আল্লাহ সাধারণভাবে মসজিদকে বরকতময় করেছেন। আর বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন তিনটি মসজিদকে। তাহলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা। তাই রমজানে সম্ভব হলে উল্লিখিত তিন মসজিদে সময় কাটানো। আর তা না হলে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে সময় কাটানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)
৪. তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করা : মহান আল্লাহ মুত্তাকি বান্দার জন্য তাঁর বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। আর রমজানের একটি উদ্দেশ্যও তাকওয়া অর্জন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
৫. ইস্তিগফার করা : পাপ থেকে তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর বরকত লাভ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)
৬. ব্যবসায় সততা অবলম্বন করা : সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা (একে অপরের সঙ্গে) বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষ-ত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনাবেচায় বরকত হবে, আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও (ত্রুটি) গোপন করে, তবে তাদের কেনাবেচার বরকত নষ্ট হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১১০)
৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)
৮. বরকতের দোয়া করা : মুমিন বান্দা দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর বরকত লাভ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে বরকত লাভের দোয়া করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে মৌসুমের প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেওয়া হতো। তিনি তখন বলতেন : ‘হে আল্লাহ! আমাদের মদিনায়, আমাদের ফলে, আমাদের মুদে ও আমাদের সা-তে বরকত দান করুন, বরকতের ওপর বরকত দান করুন। অতঃপর তিনি ফলটি তাঁর কাছে উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২২৬)
আল্লাহ সবাইকে রমজানের বরকত দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত খবর
আল্লাহর নবী মুসা (আ.) একবার ক্রুদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তিকে থাপ্পর দেন। এরপর তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং এই দোয়া পাঠ করেন-
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي
উচ্চারণ : রব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফির লি।
অর্থ : ‘হে আমার রব, আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি।
মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। ওই মুসাফির রোজা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোজা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক—সর্বাবস্থায় তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অন্য কোনো দিন (রোজা) গণনা করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৪)
সফরে রোজা না রাখা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো, সফর পরিমাণ মতো দূরত্বের হতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওনা হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবি। তখন হিজরত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা রোজা অবস্থায় মক্কা অভিমুখে রওনা হন।
স্মরণ রাখতে হবে যে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় দিনের শুরু থেকেই রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুতরাং কোনো মুসাফির রোজা না রাখার ইচ্ছা করলে রোজা না রাখা অবস্থায় দিন শুরু করবে। কিন্তু যদি এই ছাড়ের ওপর আমল না করে রোজা শুরু করে দেয়, তাহলে বিনা ওজরে তার জন্য তা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়; বরং ওই রোজা পুরো করা তার ওপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে এর কারণে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : হানাফি মাজহাব মতে, সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে, তা ভাঙা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাজা করবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৩১)
মাসআলা : যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছেন, তাঁর জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গুনাহগার হবেন, তবে শুধু রোজার কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৬)
মাসআলা : সফর অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ এবং সওয়াবও আছে। তবে যদি না রাখে, তাহলে সেটা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৩/৭৩)
এক দিনের ভ্রমণেও কি রোজা রাখা যায়?
প্রশ্ন : এক দিনের ভ্রমণের জন্যও কি রোজা না রাখতে পারবে?
উত্তর : যদি ৪৮ মাইলের ভ্রমণ হয়, তখন রোজা ভাঙা জায়েজ আছে। সেটি এক দিনের ভ্রমণ হলেও। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৭৩, রাদ্দুল মুহতার : ২/১০৮)
১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফরে রোজার বিধান
যদি রাস্তার মধ্যে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে, তাহলে আর রোজা ভাঙা জায়েজ নেই। কেননা শরিয়তের মধ্যে এখন সে মুসাফির নয়। ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফর করলে সফরকারী মুকিম হয়ে যায়। সুতরাং যদি ১৫ দিনের কম অবস্থান করার নিয়ত করে সফর করে থাকে, তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ আছে। এই রোজাগুলো পরে কাজা করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, শামি : ২/১৬৮)
দ্বিপ্রহরের আগে ঘরে পৌঁছে যাওয়া
কারো ভ্রমণে রোজা না রাখার নিয়ত ছিল, কিন্তু দ্বিপ্রহরের এক ঘণ্টা আগেই স্বীয় ঘরে পৌঁছে গেল, তাহলে তখন রোজার নিয়ত করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, হিদায়া : ১/২০৩)
সফরে তীব্র গরম হওয়ায় রোজা ভেঙে ফেলা
প্রশ্ন : যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে এ ধরনের ভ্রমণের সম্মুখীন হয়, যে সফরের দ্বারা শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির হয় না। এ কারণে রোজা অবস্থায় ভ্রমণ করে আর দ্বিপ্রহরে মারাত্মক রোদ ও তীব্র গরম হওয়ায় অসহ্য হয়ে রোজা ভেঙে দিয়েছে, তাহলে তার ওপর কাজা ওয়াজিব হবে, নাকি কাফফারাও আবশ্যক হবে?
উত্তর : এ অবস্থায় এই ব্যক্তির ওপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। শুধু কাজা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪৪, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)
তৃষ্ণার কষ্ট অথবা সফরে রোজা ভেঙে ফেলা
প্রশ্ন: রোজাদার ব্যক্তি মারাত্মক তৃষ্ণার কারণে রোজা ভেঙে ফেলল অথবা ভ্রমণের মধ্যে রোজা ভেঙে ফেলল, তখন তার জন্য কী বিধান?
উত্তর : তৃষ্ণা যদি এত মারাত্মক হয় যে প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে এ অবস্থায় রোজার কাজা আবশ্যক। একইভাবে ভ্রমণের মধ্যে ভ্রমণের দিন রোজা ভাঙা উচিত নয়। কিন্তু যদি ভেঙে ফেলে তাহলে কাজা আবশ্যক হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪০, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)
সফরে ছুটে যাওয়া রোজার বিধান
সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া রোজা পরে কাজা করা আবশ্যক। আর যদি মৃত্যুর আগে কাজা না করে থাকে, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। শর্ত হলো, সম্পদ রেখে যাওয়া। আর যদি ভ্রমণ অবস্থায় মৃত্যু হয়ে থাকে অথবা মুকিম হয়ে মারা যায়; কিন্তু রোজা কাজা রাখার সময় পায়নি, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত আবশ্যক নয়। আর যদি কিছু রোজা কাজা রাখার সময় পায় তাহলে সে রোজাগুলোর কাজা আবশ্যক। আর যদি কাজা করতে না পারে, তাহলে সেসব দিনের ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ : ২/৩৪, শামি : ২/১৬০)
মাসআলা : যদি মুসাফির ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর অথবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করার মতো সময় না পায়, তাহলে তার কাজা আবশ্যক নয়। ভ্রমণ থেকে ফিরে অথবা অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়ার পর, যত দিন পায় তত দিনের কাজা আবশ্যক। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ১/৩৮১)
রোজাদার মুসাফিরের ভ্রমণে মৃত্যু হয়ে যাওয়া
প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রমজানে মুসাফির হলো। সে রোজা রাখেনি। সফরে তার মৃত্যু হয়ে গেল, তখন তার রোজার বিধান কী?
উত্তর : তার দায়িত্বে রোজার কাজা আবশ্যক নয় এবং ফিদিয়ার অসিয়তও আবশ্যক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৩২, দুররে মুখতার : ২/১৬০)
ইসলামে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোনো রাতে তা হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সা.) এই রাতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو قَالَ "تَقُولِينَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي"
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তাহলে আমি কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি বলবে,
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।
ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।
জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা
আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।
২. জুমার নামাজ আদায়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)
৩. জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা
জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।
৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
৬. সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)
৭. গুনাহ মাফ হয়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
৮. দরুদ পাঠ
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)