বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই। আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভারতকে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মাঝে তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চরে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের সভাপতিত্বে করেন 'তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি'র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে চাই।
'জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এদিন একই সঙ্গে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি স্থানে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এছাড়া পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে 'তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।
কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার চরে মঞ্চ তৈরি, খাবারের ব্যবস্থা, তাবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাবেশে শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন। যারা ভারতের কাছ থেকে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে যে আন্দোলন শুরু হলো, এটা আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে মার্চ করেছিলেন। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য। আজকে আমাদের আসাদুল হাবিব দুলুভাই হাজারো মানুষকে একত্রিত করে ডাক দিয়েছেন ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচা ‘। এটা শুধু স্লোগান নয়। তিস্তা পারের মানুষের বাঁচার আহাজারি বেড়িয়ে এসেছে। আজকে এখানের মানুষের করুণ অবস্থা। একদিকে যখন তারা বাধের গেট খুলে দেয়, পানির তোরে আমাদের ঘর, বাড়ি, গ্রাম, ফসলের মাঠ ডুবে যায়। আবার যখন গেট বন্ধ করে দেয়, তখন খরায় খট-খট হয়ে যায়। তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ আর যায় না। আজ থেকে বহুদিন আগে থেকে এই তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য কথা বলছি আমরা। পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ সময়ে আমরা বলেছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার আসলো। সবাই ভাবলো, ভারতের বন্ধু আওয়ামী লীগ। সুতরাং তিস্তার পানি মনে হয় এবার পেয়েই যাবে। লবডঙ্কা। ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেঁচে দিছে, কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টা নদী আছে, সবগুলো নদীর উজানে তারা বাধ দিয়ে দিয়েছে। তারা পানি নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ ফসল ফলাতে পারে না, জীবন-জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রত্যেক মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। একদিকে ভারত আমাদেরকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের শত্রুকে (শেখ হাসিনা) তারা তাদের দেশে বসিয়ে রেখেছে। দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, আজকের এই সংগ্রাম এই এলাকার মানুষের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেবো না। আজকে এই অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদেরকে নিরপেক্ষ সরকার বলে, কিন্তু এখানে নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, যে পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আর খুব তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেন।
উপস্থিত মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন মির্জা ফখরুল বলেন, লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না, সেই লড়াই করেই আমরা তিস্তার পানি আনবো। অধিকার আদায় করে নেবো। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শুকনো মৌসুমে ভারত উজানের পানি আটকে রাখে, আর বর্ষার মৌসুমে ছেড়ে দেয়। যার ফলে আমাদের এখানে বন্যায় সব ভেসে যায়। এটা কি কোনো বন্ধুর পরিচয় হতে পারে? কোনোভবেই না। তাই ভারত আমাদের বন্ধু না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো এখন সময় এসেছে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সরকারকে যেতে হবে। মাওলানা ভাষানীর মত প্রয়োজন হলে আবারো আমরা লং মার্চের আয়োজন করব। এবার তিস্তার লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে, যদি এই জনপদের লোকদের বাঁচাতে চাই।
জাতীয় পার্টির (জাফর অংশ) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলায় কথা আছে ঠেলার নাম বাবাজি। আজকের এই কর্মসূচি যখন ৬০ দিন আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, এরপর গত কয়েক দিন আগে ভারত পানি ছাড়া শুরু করেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করতে চাই, যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দাও তাহলে আমরা এককভাবে 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়ন করব। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার আছে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।
সভাপতির বক্তব্য 'তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি'র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বহু পথ বহু সময় আমরা অতিক্রম করেছি। দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসকের যাতাকলে আমরা পরে ছিলাম। কথা বলতে পারি নাই, শুভাযাত্রা তো দূরের কথা, মিছিল তো দূরের কথা। এখন মুক্ত বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমাদের কথা বলার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। এই রংপুর ছিল রঙ্গে রসে ভরপুর। তাকে আজ বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। ছিন্নমূল মানুষ বাড়ি ঘর হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে কোথায় চলে গেছে আমরা বলতে পারি না।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সঙ্গীতশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, লালমনিরহাটের জেলা শাখার ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা কাজী গোলাম মোস্তফা। তিস্তা নিয়ে অন্যান্য জেলার সমাবেশের অন্য ১০টি স্থানে পৃথক পৃথকভাবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্নয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সম্পর্কিত খবর

ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া এবং চাঁদাবাজি দমন করতে হবে : শিমুল বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার জন্য পুলিশ বিভাগ, বিআরটিএ এবং পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট শ্রমিক মালিকদের করনীয় নির্দেশনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ঈদ এলেই জনদুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো মানুষ।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘এয়ারপোর্টে প্রবাসীরা যখন হয়রানির শিকার হন, তা গোটা দেশের ওপর পড়ে। তেমনি পরিবহন সেক্টরে কিছু চাঁদাবাজের জন্য পুরো পরিবহন সেক্টর এর দায় নিতে পারে না।
এতে বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সরোয়ার হোসেন, যুগ্ম কমিশনার এনামুল হক, ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (মতিঝিল) জালাল উদ্দিন, মালিক সমিতির সাইফুল ইসলাম, আব্দুল বাতেন, শ্রমিক ফেডারেশনের আব্দুর রহিম বক্স প্রমুখ।
সভায় আসন্ন ঈদে নিরাপদে ঘরে ফেরা ও ফিরে আসা নির্বিঘ্ন করার জন্য মহাখালী, গাবতলী, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশনসহ ঢাকা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসিটিভি ও ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনার আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা পুলিশ, বিআরটিএ, মালিক, শ্রমিক, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়।

আ. লীগ নেতা গোলাপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৯ মার্চ) কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
আক্তার হোসেন বলেন, আব্দুস সোবহান গোলাপ সংসদ সদস্য হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কুইন্স-এ ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, যার মূল্যমান বাংলাদেশি টাকায় ৩২ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে কমিশন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি মো. আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করে ও তা ভোগদখলে রাখেন।
গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারার এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে।

নির্বাচনের জন্য আইনগতভাবে উপযুক্ত বাবর
নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্ত্র মামলার ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তোভোগী) হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর।
বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেন।
রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।
মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা হয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তার বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, এই মামলাটি করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াটিই ছিল অবৈধ। এ জন্য মামলার প্রক্রিয়াটিই অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আর যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবরকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেইসব সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, একজনের সাক্ষ্যের সেঙ্গে আরেকজনের সাক্ষ্যের কোনো মিল নেই। এগুলোর সবই ছিল এক-এগার সরকারের কারসাজি।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুৎফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের ৭ দিন পর, অর্থাৎ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ও ১৯ (চ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এস আই হেলাল উদ্দিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী ৩টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলবারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় ৭ বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা তেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলাতেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

জাগপার নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ : হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৯ মার্চ) নিবন্ধন বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে জাগপার পক্ষে শুনানি করেন দলটির চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া প্রধান নিজেই শুনানি করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ প্রধান।
২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে জাগপাকে নিবন্ধন দিলেও ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন বাতিলের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পরে হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানির পর নিবন্ধন বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল দেন।