'সম্প্রতি গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে আমাদের দেশেও উষ্ণতা বাড়ছে। প্রতিবছরই আমাদের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে দিন দিন এসির চাহিদাও উর্ধ্বমুখী। কয়েক বছর ধরেই এসির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
'সম্প্রতি গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে আমাদের দেশেও উষ্ণতা বাড়ছে। প্রতিবছরই আমাদের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে দিন দিন এসির চাহিদাও উর্ধ্বমুখী। কয়েক বছর ধরেই এসির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবার গরমে এসির চাহিদা কত শতাংশ বেড়েছে।
এসি রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন, এ ক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
বাংলাদেশে আমরা বিশ্বখ্যাত গ্রি এসি উৎপাদন করছি মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ লাগিয়ে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসি রপ্তানি করার। এসি রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে পণ্যটি বিক্রি করতে পারি। সরকার বিগত কয়েক বছর ধরে এ খাতের উন্নয়নে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
আমাদের আবেদন সরকার ভ্যাট-ট্যাক্সের এই সুবিধাকে দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা আবেদন করছি। তাহলে এখাতের বাজার আরো বেশি বিকশিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। স্বল্পমেয়াদি নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ থাকে কখন এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এতে করে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে অনেক বেশি সময় নেয়। এতে করে খাতগুলোতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আসে না। স্বল্পমেয়াদি নীতি সহায়তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না। কোনো শিল্প কারখানা করা হলে সেখান থেকে ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে কমপক্ষে ১০-১৫ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগের এক বছর পর নতুন নিয়ম এলে বা নীতি পরিবর্তিত হলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যাংক ঋণের দায় নিয়ে তাদের বিনিয়োগ বোঝা হয়ে ওঠে এবং একসময় শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ বা দেউলিয়া হয়ে যায়। সেজন্য সহজে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না।
পাশাপাশি সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কর অব্যাহতির মতো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয় তাহলে দেশ থেকে এসি রপ্তানি করতে পারব। চীন ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশে শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এর সুবিধা নিয়ে এ খাতকে রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিণত করতে সক্ষম হবো। এ ছাড়া সরকারের পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বহির্বিশ্বে যোগাযোগের মাধ্যমে এই শিল্পের জন্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিকল্পনা অনুযায়ী এসি রপ্তানি করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে এবং বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের নতুন একটি শিল্প খাত সৃষ্টি হবে। তবে আমাদের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বেশি।
নতুন কোন প্রযুক্তির এসি এনেছেন, ফিচারগুলো কী? কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী?
আমরা প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি পণ্যে সংযোজন করছি। আমাদের আরঅ্যান্ডডি চীনের সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তি শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এসিগুলো বাংলাদেশের পরিবেশ এবং গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই করে প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশের ক্রেতারা এসি কেনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। ক্রেতাদের এই সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে গ্রি এসি উৎপাদন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আই ফিল টেকনোলজি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে যেমন ইলেকট্রিসিটি সেভিং হবে পাশাপাশি আরামদায়ক তাপমাত্রা পাওয়ার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। যেমন বাইরে টেম্পারেচার ৪০ ডিগ্রি, তাহলে আমার কমফোর্টেবল টেম্পারেচার আসলে কত, এটি আমরা জানি না। যার কারণে কখনো ১৬, কখনো ১৮, কখনো ২০ এ আমরা টেম্পারেচার সেট করছি। তবে আই ফিল অপশনটি যদি চালু করা হয় সেই ক্ষেত্রে এসি অটোমেটিক রুমে টেম্পারেচারকে আরামদায়ক করে দেবে। আমাদের রয়েছে বিশ্বের সর্বপ্রথম জি বুস্ট ইনভার্টার কম্প্রেশার। যার মাধ্যমে এসির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সর্বোচ্চ লেভেলের ইলেকট্রিসিটি সেভিং করে। আমাদের জি বুস্ট ইনভার্টার কম্প্রেসার সমৃদ্ধ গ্রি এসিগুলো ৬৮ ডিগ্রি টেম্পারেচারেও স্বাভাবিক ভাবে চলবে। এ ছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার যেটি কোল্ড প্লাজমা প্লাস এবং হিউমিডিটি কন্ট্রোলার। এর মাধ্যমে রুমের ভেতরের বাতাসে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থাকে সেগুলোকে ৯৯.৯৯% পর্যন্ত ডিঅ্যাক্টিভ করে এবং হিউমিডিটি ব্যালেন্স করে। যার ফলে লং টাইম এসির মধ্যে থাকলেও ত্বকের শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে, হাঁচি-কাশিজনিত সমস্যা বা কোল্ড অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা হয় না। বর্তমানে ঢাকা সিটির ওয়েদার মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ার কারণে আমরা আমাদের এসিতে ছয় স্তরের ফিল্টার যোগ করেছি। যার মাধ্যমে রুমের বাতাস থাকবে ৯৯.৯৯% পর্যন্ত বিশুদ্ধ। এ কারণেই প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের গ্রি এসি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ২০০টিরও অধিক দেশে বেশ সমাদৃত।
এসি দূর্ঘটনা নিয়ে এখন ক্রেতাদের একটা দুশ্চিন্তা দেখা যায়। এ রকম দুর্ঘটনা কেন হয়? এড়ানোর জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
আসলে এসিতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটে না। এটা একটা ভুল ধারণা যে এসি থেকে বিস্ফোরণ হয়। আমরা যখন গ্রাহকের এসি ইনস্টল করি তখন মানসম্পন্ন এক্সেরসরিজ ব্যবহার করি। তবে গ্রাহকদেরকে বলবো, এসি ইনসটেলশনের ক্ষেত্রে যে সকল এক্সেসসেরিজ ব্যবহার করা হয়, যেমন সার্কিট, সকেট, ইলেকট্রিক ক্যাবল, সুইচ ইত্যাদি যাতে ভালো ও মানসম্মত মানের হয়। এর ফলে সকল প্রকার ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং কোনো ধরনের দুঘর্টনার সম্ভাবনা থাকে না। এ ছাড়া প্রতি বছর দুবার এসির সার্ভিসিং করা ভালো। সেই সঙ্গে এসির ফিল্টারটা মাসে অন্তত দুবার, তা নাহলে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত। এটা কেউ চাইলে নিজেই পরিষ্কার করতে পারেন।
গ্রাহকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতে চান...
গ্রাহকদের আমরা বলবো যে, কোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং ভালো মানের ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয়ে বিশেষ বিবেচনা দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিজেদের অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক হবে। এ ছাড়া দেশে তৈরি এসি এবং বিদেশে তৈরি এসির মধ্যে কোনো ফারাক নেই। বরং দেশে তৈরি এসির ক্ষেত্রে দেশের আবহাওয়ার কথা এবং গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই করে প্রস্তুত করা হয়। অন্যদিকে বিদেশে তৈরি এসি আমাদের দেশের আবহাওয়া নিয়ে চিন্তা করে না। তাই আমি মনে করি, পরিবেশ বিবেচনায় বিদেশে তৈরি এসি থেকে আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো বেশি ভালো। আর আমাদের এসির কথাও যদি বলা হয়, যেহেতু আমরা গ্রি-এর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে প্রযুক্তি শেয়ার করছি, বিদেশের মতোই আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো একই রকম যন্ত্রাংশ এবং নিত্য নতুন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের সাম্প্রতিক সব প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের পণ্যে সম্পৃক্ত করছি। অনেক গ্রাহক মনে করেন বিদেশ থেকে এসি নিয়ে আসলে সেটা বেশি ভালো হবে কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাংলাদেশে যে এসি উৎপাদিত হচ্ছে, সেটিও বিশ্বমানের এবং বিশ্বের ২০০টিরও অধিক দেশে সমাদৃত।
সম্পর্কিত খবর
বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ও খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে এক প্রশ্নে জবাবে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে শুধুমাত্র প্রান্তিক মানুষ না, এখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত যারা আছেন, তারাও মূল্যস্ফীতির একটা চাপের মধ্যে আছেন। আমাদের কর্মসংস্থান-বিনিয়োগ এগুলোও একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, আমদানি আরো একটু উদার করা সম্ভব হচ্ছে, যেটা নিয়ন্ত্রিত করতে হয়েছিল বাধ্য হয়ে। ব্যাংকিং সেক্টরকে কিছুটা পুনর্গঠন করা, সংস্কার করা; এগুলো সহজ না এবং এগুলো এই সরকারও পারবে বলে মনে হয় না।
আপনারা তো শ্বেতপত্র করলেন এবং সেখানে আপনি সদস্য ছিলেন। তার মূল্যায়ন বর্তমান সরকার কিভাবে করেছে বা করছে- এমন প্রশ্নে জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের ম্যানডেট ছিল ‘স্টেট অব দ্য ইকোনোমি’টা কি? প্রকৃত অবস্থা কি- আমরা সেটা বের করার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা যেরকম আশা করেছিলাম আশানুরূপভাবে হয়নি। এখন প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে বলা হচ্ছে, একটা হলেও সংস্কার যাতে তারা বাস্তবায়ন করেন।
রাজধানীর একটি ফ্যাশন আউটলেটে চার লাখ টাকায় বিক্রি করছে একটি পাঞ্জাবি। অন্য একটি ফ্যাশন আউটলেটে শাড়ির দাম দেড় লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন উঠছে, পাঞ্জাবি ও শাড়ির কী বিশেষত্ব রয়েছে যে, এত দামে বিক্রি করতে হয়েছে? এ ছাড়া কারা এসব পাঞ্জাবি ও শাড়ির ক্রেতা?
বিক্রেতারা বলছেন, পাঞ্জাবি ও শাড়ির বেশি দাম হওয়ার অন্যতম কারণ উন্নতমানের কাপড় ও দক্ষ কারিগরের নিপুণ কাজ। এ ছাড়া পারসেপশন ভ্যালুকেও কেউ কেউ দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন।
তারা জানান, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষার্থীরাও এসব পাঞ্জাবি ও শাড়ির ক্রেতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাই ছিলেন এসব দামি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। সরকার পতনের পর এসব দামি পোশাকের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।
রাজধানীর বনানীর কয়েকটি ফ্যাশন আউটলেট ঘুরে বেশি দামি পাঞ্জাবি ও শাড়ি এ তথ্য জানা গেছে।
প্রিমিয়াম ফ্যাশন ব্র্যান্ড আনজারায় চার হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯৫ হাজার টাকার পাঞ্জাবি রয়েছে। তাদের আউটলেটে কাফতান শাড়ির দাম ১৪ হাজার ৮০০ থেকে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
একই এলাকায় আরেকটি ব্র্যান্ড জেকে ফরেন পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস বিক্রি করছে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায়। এই দোকানে ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শাড়ি।
আনজারার জনসংযোগ ব্যবস্থাপক নওশিন নাওয়ার জানিয়েছেন, তাদের কাপড়ে হাতের মাধ্যমে এমব্রয়ডারির কাজ করা হয়। এ ছাড়া ভালো মানের ফেব্রিক, নিখুঁত ডিজাইন ও ডায়িংয়ের কারণে দাম বেশি।
কয়েকটি দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জানান, ঈদকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা থাকে। ক্রেতাদের এই চাহিদা মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্রিমিয়াম পোশাক আমদানি করে মজুত রেখেছিল।
তারা জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দামি পোশাকের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।
বনানীর আবায়া অ্যান্ড গাউন ব্র্যান্ডের ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু সাঈদ সাদ্দাম বলেন, আমরা নিজেরাই এসব পণ্য তৈরি করি। পাশাপাশি কিছু পণ্য দুবাই ও চীন থেকে আনা হয়।
নিখুঁত ডিজাইন ও ভালো ফেব্রিক শুধু নয় পারসেপশন ভ্যালুকে দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন দেশীয় ব্র্যান্ড কে ক্রাফটের পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান। তিনি বলেন, বেশি দামের পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো পারসেপশন ভ্যালু। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এখানে শুধু উৎপাদন খরচ কত সেটা বিষয় নয়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বের কোথাও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণের লিগ্যাল ফ্রেম নেই। যদিও বাংলাদেশে সরকার কিছু নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, যদি কোনো ক্রেতা মনে করেন তিনি দামের ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়েছেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া উচ্চমূল্যের পণ্য নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এই দামগুলো আদৌ ন্যায্য কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে এবং বিক্রেতারা সবসময় এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবে কিছু ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিচ্ছেন।
বেকার সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী ও নতুন উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। তবে নতুন উদ্যোগ বা ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা তহবিল সংকট। বিনিয়োগের জন্য গঠিত স্টার্টআপ ফান্ডে এক হাজার কোটি টাকার বেশি পড়ে থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই ফান্ড থেকে গত সাড়ে চার বছরে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি টাকা।
উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে তিন বছর আগে ২০২১ সালের মার্চে বিনা জামানতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াতে ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। একই সঙ্গে প্রতি ব্যাংকের নিট মুনাফা থেকে ১ শতাংশ আলাদা রেখে নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল গঠন করতে বলা হয়। ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ৫০৫ কোটি টাকার ফান্ড গঠনও করেছে।
দুটি মিলিয়ে গত আগস্ট পর্যন্ত স্টার্টআপে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে এক হাজার পাঁচ কোটি টাকা। অথচ গত সাড়ে চার বছরে ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ২৭ কোটি টাকা।
স্টার্টআপ বলতে বাজারজাত করার জন্য নতুন পণ্য, সেবা, প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও অগ্রগতিকে বোঝায়। এ পর্যন্ত শেয়ারট্রিপ, চালডালের মতো হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কম সুদের ঋণ পেয়েছে।
বর্তমানে যেকোনো উদ্যোগে ঋণ নিতে যেখানে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ সুদ গুনতে হচ্ছে। আবার ঋণের বিপরীতে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখা লাগে। স্টার্টআপ তহবিল থেকে শুধু ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ কিংবা কারিগরি প্রশিক্ষণের সনদ ব্যাংকের কাছে জামানত রেখে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নেওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্টার্টআপ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আগ্রহী অনেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, স্টার্টআপ একেবারে নতুন উদ্যোগ হওয়ায় ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। আবার এ ধরনের কর্মসূচি থেকে ঋণ দিতে গেলে অনেক ধরনের নিয়ম মানতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কেস ধরে ধরে পরিদর্শন করে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা ঋণ গ্রাহক থেকে আদায় হোক বা না হোক, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেয়। এসব কারণে উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য গঠিত তহবিল দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।’
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী গত আগস্ট পর্যন্ত ৫২টি ব্যাংক নিট মুনাফার ১ শতাংশ হারে দিয়ে ৫০৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে ২৭টি ব্যাংক ১৫৩টি প্রকল্পে দিয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি টাকা। যদিও গত ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি ৯০ লাখ। ২৫টি ব্যাংক এক টাকার ঋণও দেয়নি। ফলে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিলেই ৪৬২ কোটি টাকা পড়ে আছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার পুরোটাই পড়ে আছে।
ঋণের জন্য যারা উপযুক্ত
সম্পূর্ণ নতুন ও সৃজনশীল উদ্যোগের জন্য ঋণ আবেদন করা যায়। বয়স যদি ২১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে ব্যাংকের শাখায় আবেদন করতে পারেন উদ্যোক্তারা। যে কাজের জন্য তাঁরা ঋণ নিতে আগ্রহী, সেই ব্যবসা পরিচালনা, বাজারজাতসহ কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সনদ থাকতে হবে। একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। তবে পুরো ঋণ একবারে বিতরণ করা যাবে না। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে কমপক্ষে তিন কিস্তিতে বিতরণ করতে হবে। একই গ্রাহককে একাধিক ব্যাংক বা একের বেশি প্রকল্পের জন্য ঋণ দেওয়া যাবে না।
ঋণ বাড়াতে যা ভাবা হচ্ছে
স্টার্টআপের আওতায় ঋণ বাড়াতে নীতিমালায় শিথিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বয়সসীমা ২১ থেকে ৪৫ বছরের শর্ত শিথিল করে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সী ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আবার একজন উদ্যোক্তার ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা এক কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি টাকা করা হতে পারে। এ ছাড়া অন্তত তিন কিস্তিতে ঋণ বিতরণের যে শর্ত রয়েছে, তা তুলে দিয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে কিস্তি অথবা এককালীন বিতরণের সুযোগ রাখা হচ্ছে। স্টার্টআপের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে আরো কিছু বিষয় ঋণের আওতায় আনা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্টার্টআপে বিনিয়োগ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ১০ স্টার্টআপের মধ্যে ৯টাই ফেল করে। তাই ব্যাংকগুলো এখানে বিনিয়োগ করতে চায় না। এসব জায়গায় বিনিয়োগ করার কথা বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটালের। তারা পুঁজিতে বিনিয়োগ করতে পারে। আর ব্যাংক মূলত ঋণ দেয় বা চলতি ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। তাই স্টার্টআপে বিনিয়োগের এই উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। ভবিষ্যতেও দেখবে কি না তাতে সন্দেহ আছে।’
আলোয় আলোয় সেজেছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক, বিপণিবিতান আর সুপারশপ। হেসেছে কৃত্রিম চাঁদ আর তারা। লাল-নীল বাতির ঝলমলে আলো মার্কেটগুলোতে তৈরি করেছিল আলাদা আকর্ষণ। ঈদের আগেই যেন ঈদের আমেজ ফুটে উঠেছিল রাজধানীজুড়ে।
নতুন পোশাকে নিজেকে সাজাতে প্রতিটি মার্কেটে ভিড় করেছে শিশু, নারী, তরুণ, যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। শপিংয়ের আনন্দ দ্বিগুণ করেছে ডিজিটাল পেমেন্টে হরেক রকম অফার। তাই তো এক বছরের ব্যবধানে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ক্রেতারা কার্ড ও মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাশলেস পেমেন্টের বিভিন্ন সুবিধা ও নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে ব্যাংক ও এমএফএসগুলোর দেওয়া ডিসকাউন্ট ও অফার ক্রমেই বাড়তে থাকাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় থেকেই নগদবিহীন লেনদেন বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এটিএম, পিওএস, সিআরএম ও ই-কমার্সভিত্তিক লেনদেন ছিল ৪০ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে সেটি বেড়ে ৪৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসের মাধ্যমে মোট এক লাখ ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু সাত মাসের ব্যবধানে তা ৩৯.৬৫ শতাংশ বেড়ে মোট লেনদেন এক লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ব্যাংকগুলো এখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ঈদের পোশাক, জুতা, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ইনফিনিটি, রিচম্যান ও লুবনান শোরুমের ক্যাশিয়ার ফয়সাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, এখানে বেশির ভাগ গ্রাহকই কার্ডে পেমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ বিকাশ বা নগদে। ক্যাশ পেমেন্টের পরিমাণ খুবই কম। ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহক এখানে ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন।
একই এলাকায় অবস্থিত আরেক অভিজাত বিপণিবিতান আর্টিসান। কাপড়ের দোকান হিসেবে দেশজুড়ে খ্যাতি আছে তার। আর্টিসানের ম্যানেজার শাকিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শোরুমে ৮০ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন। যদিও আগের বছর এই হার আরো কম ছিল।’
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার জুলফিকার শাহীন বলেন, ‘কার্ডের কোনো বিকল্প নেই। নগদ টাকা বহনের ঝক্কি ঝামেলা করার চেয়ে কার্ডে পেমেন্ট করাই ভালো।’
তেজগাঁওয়ের আড়ংয়ের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ‘আমাদের এখানে ৭০ শতাংশের বেশি অনলাইন পেমেন্ট হয়েছে।