<p>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা দিতে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি সমর্থনকারী অনেক শিক্ষার্থী এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ছেন। তা ছাড়া মামলায় থাকা কয়েকজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ায় তাদের অনেকের মনে শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। </p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শুভ্র দেব সাহা। গত ১ অক্টোবর সকাল ১১টায় তার অনার্স চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে শুভ্র দেব সাহা পরীক্ষা দিতে আসবেন, এমন খবরে সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিভাগের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দিতে আসতে পারেননি।</p> <p>এরপর গত ১৭ অক্টোবর পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলফি শারিন আরিয়ানা। ওই দিন দুপুরে চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়। এতে তিনি অংশগ্রহণ করতে এলে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হন। পরে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে শুক্রবার দুপুরে এক মামলায় তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়।</p> <p>একই দিনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (আইবিএর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও অনুষদ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হান পরীক্ষা দিতে এলে নিজ বিভাগ ও ফ্যাসিবাদ নির্মূল কমিটির কয়েকজন তাকে পরীক্ষার পর আটক করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরদিন শুক্রবার দুপুরে রাবি শাখা ছাত্রদলের এক নেতার করা মামলায় তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়।</p> <p>একই দিনে মার্কেটিং তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেন মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন শেখ স্পর্শ। কিন্তু পরীক্ষার হলে প্রবেশের পরপরই বাইরে থেকে একদল শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে ঢুকে তার পরীক্ষায় বাধার সৃষ্টি করে। পরে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় পরীক্ষা শুরু করলেও ৩০ মিনিটের মতো পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান এই শিক্ষার্থী। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাকে বিভাগীয় সভাপতির কক্ষে নিয়ে যান।</p> <p>তা ছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল শাখার দপ্তর সম্পাদক মেনহাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগকর্মী তাশরীফ আহমেদ, নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা, ইংরেজি বিভাগের প্রিন্স মাহমুদ, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সৃজন আজিজ।</p> <p>এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফজলে রাব্বি, বঙ্গবন্ধু হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একই ব্যাচ ও বিভাগের আব্দুল্লাহ আজমীরও তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের চারটি কোর্সের মধ্যে একটির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। </p> <p>এ বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল শাখা দপ্তর সম্পাদক মেনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাবের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, শিক্ষার অধিকার পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার সবার আছে। যদি কেউ অপরাধী হয়, যার যতটুকু অপরাধ, দেশের আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হোক। কিন্তু পরীক্ষায় বাধা দেওয়া, মব জাস্টিস করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’ </p> <p>মেনহাজ আরো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ক্যাম্পাসে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও চাঁদাবাজির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। তবু নিরাপত্তার শঙ্কায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমি ছাত্র উপদেষ্টা এবং বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলছি, কিন্তু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাইনি। আমার শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখে। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের শিক্ষাজীবন যাতে হুমকির মুখে না পড়ে এই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা, উপাচার্য স্যার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।’</p> <p>এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা মব জাস্টিস থেকে তাদের বাঁচাতে পরীক্ষার হল থেকে বের করে নিয়ে এসেছি। আমরা কখনো তাদের রাজনৈতিক ভিউ থেকে দেখি না। তারা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। তাদের প্রত্যেকের নিরাপদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তবে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে আইন ও নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারা যদি আইন ও নিয়মের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিবেচিত হয় তবে অবশ্যই তারা অংশ নেবে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, আটক হওয়া দুই জনের নামে মামলা ছিল বলে তাদের আটক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা যদি জেলহাজতে বসে পরীক্ষা দিতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে তাদের আবেদন করতে হবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জেলে বসে পরীক্ষা নেওয়ার নজির রয়েছে। তবে আটক হওয়া দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এখনো কোনো আবেদন করেনি। এ জন্য তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি।</p> <p>এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা কখনোই চাই না কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক। কোনো শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বাধার সম্মুখীন করতে পারে না। কিছু কিছু জায়গায় শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে শুনেছি। এমন কাজকে আমি কখনোই সমর্থন করি না। বিশেষ পরিস্থিতিতে জেলে বসে বা বিভাগের কোনো কক্ষে আলাদা করেও পরীক্ষা নেওয়ার নজির আছে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অবশ্যই এ ব্যাপারে বিবেচনা করবে।’</p>