<p>পৃথিবীর উন্নয়নের মডেল ও দর্শন না বদলালে জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে যত টাকাই পাক না কেন তাতে দেশের জনগোষ্ঠী মানচিত্র ও ভূখণ্ড রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। </p> <p>আজ শনিবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সেমিনার কক্ষে ‘জার্নালিজম ইন দ্য এজ অব এনার্জি ট্রানজিশন : কপ ২৯ কাভারেজ স্ট্রাটেজিস অ্যান্ড মেন্টরিং’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। দেশের সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কপ ২৯-এর সংবাদ গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য ২৪টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সহযোগিতায় এই কর্মশালাটির আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।</p> <p>সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ বছর আমরা গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি গরমের মধ্যে পড়েছি। এ বছর আমরা যে বন্যা দেখেছি, যেসব এলাকায় বন্যা হয়েছে সেসব এলাকার লোকেরা বলছেন তাদের দাদি-নানিরাও এই মাত্রার বন্যা কখনো দেখেননি। তার অর্থ হলো, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ কয়েক যুগ কষ্ট করে যতটুকু উন্নয়ন অর্জন করেছে তা ধরে রাখা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে উপর্যুপরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পৌনঃপুনিকতা ও ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ার কারণে।’</p> <p>জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটা চাপ আমাদের সৃষ্টি করতে হবে যাতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কার্বন ইনটেনসিভ উন্নয়ন মডেল থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। উন্নত বিশ্ব এখন আস্তে আস্তে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাচ্ছে। তবে যেটুকু কমানোর কথা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে কিন্তু এই সম্মেলনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি রাখতে হবে এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।’</p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণগুলোর একটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘একেকবার একেকটা জলবায়ু সম্মেলন আসে, সেখানে সিদ্ধান্তের অগ্রগতি হয়। আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষে ১.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ানোতে আটকে দিতে সম্মত হয়েছি। কিন্তু এটাই এখনো চূড়ান্ত আইনি কথা না। যদি ১.৫ ডিগ্রিতে আমরা আটকে দিতে না পারি তাহলে বাংলাদেশের মানচিত্র নতুন করে আঁকতে হবে।’</p> <p>জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে তারা সেই সহযোগিতা যথাযথভাবে প্রদান করেনি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের লক্ষ্যে আমাদের রেসপন্স মেকানিজমকে উন্নত করতে হবে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সরাসরি ও পরোক্ষ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।’</p> <p>ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘উন্নত শহরগুলো যারা বর্তমানে পরিবেশবিষয়ক নীতিনির্ধারণ করছে ১০০ বছর আগে তারাই দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ দূষণের ফল হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ <br />  <br /> কর্মশালার সমাপনী পর্বের সভাপতির বক্তব্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আজকে পশ্চিমা বিশ্ব ও বিশ্ব পুঁজিবাদ যে সমাধান আকারে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান দেখাচ্ছে সেটার মধ্যে মানবিকতা নেই। তারা এটাকে ব্যবসা হিসেবে দেখছে। জলবায়ু তহবিলের নামে কই মাছের তেলে কই মাছ ভাজার কারবার হচ্ছে। জলবায়ু সংকট ও বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ এই সার্বিক সংকট কিন্তু তাদের (পশ্চিমাদের) তৈরি করা।’  </p> <p>সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকদের জ্ঞান কাজে লাগনো যেতে পারে উল্লেখ করে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘একজন সাংবাদিক যে বিষয়ে কাজ করছেন সে বিষয়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দাঁড়াতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের এই জ্ঞানটা অনেক বাস্তব জায়গা থেকে তৈরি হয়, বুকিশ (পুঁথিগত) জায়গা থেকে নয়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নিষ্ঠাবান, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকদের কোনো না কোনোভাবে পরামর্শকের ভূমিকায় রাখা যেতো তাহলে হয়তো অনেক কাজ অনেক কাজ অনেক বাস্তবভাবে দ্রুত করা সম্ভব হতো। এরকম একটা প্রস্তাব আমাদের দিক থেকে গেছেও। হয়তো কোনো একটা কিছু হতেও পারে। ... কারণ শুধুমাত্র আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে এই ধরনের সংস্কার বা পরিবর্তন করা যায় না।’</p> <p>অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেপুটি হেড, ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন সেকশনের নাইওকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, অ্যাকশনএইডের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।</p>