বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালমানসহ ডিভিশন পাওয়া ভিআইপি বন্দিদের কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। এ সময় সালমানসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তার ওপর খেপে যান বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। সালমান বলেন, ‘আপনারা আমাদের ডিস্টার্ব করছেন।
কারাগারে তল্লাশি করতে গেলে খেপে যান ‘দরবেশ’
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠে “কারাগারেও তৎপর ‘দরবেশ’” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের ফোনালাপের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ খবর প্রকাশের পর যেসব কারারক্ষী এত দিন ভিআইপি বন্দিদের দায়িত্ব পালন করতেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন কারারক্ষীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এক কারা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যেসব মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা রয়েছেন, প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। ফলে তাদের সতর্কতার সঙ্গে ‘ডিল’ করতে হয়। তাদের কেউ কেউ তল্লাশি করতে যাওয়ার পর কারা কর্মকর্তা-রক্ষীদের ওপর নাখোশ হয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রভাবশালী বন্দিদের মধ্যে যারা নিয়ম-কানুন মানছেন না, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর হতে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কারাগারে নজরদারি বাড়িয়েছি। কোনো বন্দি যাতে বিধিবহির্ভূত সুযোগ নিতে না পারেন, সেগুলো খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সালমান এফ রহমানসহ অনেক প্রভাবশালী। সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে রাখা হয়েছিল তৎকালীন পুরান ঢাকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্ণফুলী সেলে। তাদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর তাদের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর শাস্তি হিসেবে তাদের ডিভিশন বাতিল করা হয়েছিল। অনেককেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দূরের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জানতে চাইলে কারা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ডিআইজি প্রিজনস মেজর (অব.) শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, প্রভাবশালী বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন। কারাগারে অনিয়ম করলে সাধারণ বন্দিদের শাস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সে ধরনের শাস্তি দেওয়া হয় না। তবে তাদের অন্য কারাগারে বদলি, ডিভিশন বাতিল, পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধের মতো শাস্তি দেওয়া যায়। কারা কর্তৃপক্ষ তার ঝুঁকি বিবেচনায় শাস্তির ব্যবস্থা করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী বন্দিরা দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জানেন। এর পরও তারা কারাবিধিবহির্ভূত সুবিধা চান। অনেকে ভয়ে বা আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলে সেটি ভয়ংকর অবস্থার সুযোগ থাকে।’
২০০৭ সালে শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনসের দায়িত্বে ছিলেন। তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও কারান্তরিন ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক জাঁদরেল নেতা একসঙ্গে বন্দি ছিলেন। তখন তারা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অতি প্রভাবশালীদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা করার সুযোগ দিইনি। তাদের কক্ষের আলাদা গেট ছিল। এর পরও যারা কারাগারের নিয়ম ভেঙেছেন তাদের ডিভিশন বাতিল, স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়ার মতো শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার নজিরও আছে।’
তিনি জানান, কারা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ভিআইপি বন্দিরা যখন একসঙ্গে হাঁটেন তখন একজন কারারক্ষীকে উপস্থিত রাখা। তারা কী আলোচনা করছেন সেটার নোট রাখবেন তিনি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা করলে সেটি আইজি প্রিজনসের কাছে পাঠাতে হবে।
কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬৮ ভিআইপি বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন আনিসুল হক, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ফরহাদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ফারুক খান, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ইমরান আহমেদ, টিপু মুনশি, হাসানুল হক ইনু, কামাল আহমেদ মজুমদার, শামসুল হক টুকু, এ বি তাজুল ইসলাম, জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ ছাড়া আছেন সাবেক এমপি হাজি সেলিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী জাফর উল্যাহ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, শহিদুল হক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল ইসলাম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ হিল কাফী, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, পুলিশের সাবেক ডিসি মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রমুখ।
সম্পর্কিত খবর

সৌদিতে বাড়িভাড়া হয়নি ১০ হাজার হজযাত্রীর
বিশেষ প্রতিনিধি

চলতি বছরের হজযাত্রীদের ভিসা ৩ এপ্রিল থেকে দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব। কিন্তু প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশির হজে গমন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তাঁদের জন্য বাড়ি বা হোটেল ভাড়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। দুই দফা সময় বাড়িয়ে ৩ এপ্রিল রাত ১২টায় সৌদি আরবে হজযাত্রীদের বাড়িভাড়ার সময় শেষ হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন পাঁচ হাজার জন। এসব সরকারি হজযাত্রীর বাড়িভাড়া সম্পন্ন হয়েছে আগেই।
এমন পরিস্থিতিতে বাড়িভাড়ার সময়সীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব।
এ ব্যাপারে হাব মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূলত সৌদি আরব ও বাংলাদেশে সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। সৌদি আরবের অনেক হোটেল ও বাড়ির তাসরিয়া (অনুমোদন) ছিল না। এ ছাড়া সৌদি সরকার হজের ব্যাপারে নতুন করে সিট প্ল্যান করেছে বলে অনলাইনে অনেক বাড়ি ভাড়া করা যায়নি। আমরা কাল (রবিবার) এ বিষয়ে সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেব।
সৌদি আরবে হজযাত্রীদের এখনো বাড়ি বা হোটেল ভাড়া সম্পন্ন করতে পারেনি এমন হজ এজেন্সির তথ্য চেয়ে গতকাল শনিবার ধর্ম মন্ত্রণালয় জরুরি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘সৌদি আরবে বাড়ি বা হোটেল ভাড়া নির্ধারিত সর্বশেষ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়নি—এমন এজেন্সির তথ্যসংবলিত রিপোর্ট সৌদি ই-হজ সিস্টেমে আপলোড এবং সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়কে শনিবারই বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দার মাধ্যমে অবহিত করা হবে। সে লক্ষ্যে বাড়ি বা হোটেল ভাড়া সম্পন্ন না হওয়া হজযাত্রীর সংখ্যা ও অনলাইনে ভাড়া সম্পন্ন না হওয়ার কারণ সংবলিত ব্যাখ্যা রাত ৮টার মধ্যে নির্দিষ্ট ছক অনুসারে জরুরি ভিত্তিতে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ সৌদি মুয়াল্লিম অফিস বন্ধ ছিল। বাংলাদেশি হজ এজেন্সিগুলোর মালিক প্রতিনিধিরা মক্কা-মদিনায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। মুয়াল্লিম অফিস ও ব্যাংক বন্ধ থাকায় তাঁরা বাড়ি ভাড়া করে মুয়াল্লিম অফিসের সঙ্গে চুক্তি করতে পারছেন না। ব্যাংক বন্ধ থাকায় বাড়িভাড়ার টাকা ট্রান্সফার করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সময় আর না বাড়ালে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি হজযাত্রী এবার হজে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশি হজযাত্রী ও এজেন্সির মালিকরা উৎকণ্ঠায় মধ্যে রয়েছেন।

অভিমত
মিডিয়া সংস্কারে একচোখা সুপারিশ কার স্বার্থে?
মাহফুজ জুয়েল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে সামনে আসে। সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় গঠন করা হয় সাতটি কমিশন। কমিশনগুলো হলো জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
এর মধ্যে গত বছর ১৮ নভেম্বর ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিশনের সদস্যদের অনেকে স্বনামখ্যাত ও জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি। তাঁরা তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে ১৮০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
কমিশনের সুপারিশমালার শুরুতে গণমাধ্যমের মালিকানার কথা বলা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়—একই কম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের মালিক হতে না পারে, সে জন্য বিশ্বের বহু দেশে ‘ক্রস-ওনারশিপ (টেলিভিশনের মালিক সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না বা সংবাদপত্রের মালিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ করেছে।
কমিশন মনে করে, বাংলাদেশেও অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ‘ক্রস-ওনারশিপ’ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া যায়। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে। যেসব কম্পানি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যেকোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করতে পারে।
কমিশনের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে—একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজ স্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এই ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যমান এই ব্যবস্থার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করা যেমন বাজারের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে, একই মালিকানায়, একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ জন্য ‘এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম’ (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া) নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায় বলে মনে করে কমিশন।
গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা এই বিষয়গুলো পড়ার পর মনে খটকা লাগে। বুঝতে মোটেও কষ্ট হয় না, প্রতিবেদনটি অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। মুহূর্তে ‘এক গামলা দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গোমূত্র পড়ার’ চিত্রকল্প ভেসে ওঠে চোখের সামনে। বুঝতে বাকি থাকে না প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট। দেশ ও জনগণ, গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা নয়, বরং এই প্রতিবেদনে গতানুগতিক অপরাজনীতি ও গোষ্ঠীস্বার্থ কাজ করেছে; যে ‘গোষ্ঠীস্বার্থ’ নিতান্তই ‘ব্যাবসায়িক বিদ্বেষতাড়িত’। বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা থেকেই কমিশন এই ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ করেছে এবং এর জন্য ‘ক্রস-ওনারশিপ’-এর প্রসঙ্গ টেনেছে।
বিদ্বেষ দিয়ে কখনো সর্বজনীন ভালো কিছু হয় না। ফলে কমিশনের এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমকে ইতিবাচক নতুন কিছু দেওয়ার পরিবর্তে বরং আরো অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলবে। অসংখ্য ক্ষত বয়ে চলা নাজুক গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বা ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেওয়ার প্রেসক্রিপশন দিয়েছে গণমাধ্যম কমিশন।
কোন প্রতিষ্ঠান কয়টি পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি নেই। বৈধ অর্থে গণমাধ্যম কেন চালু করা যাবে না? কোনো একটি শিল্পগোষ্ঠীকে মাথায় রেখে এই সুপারিশমালা সামনে আনা হলে মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক।
কারণ এর বিপরীত চিত্রটাই বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান। চোখের সামনে এর অনেক উদাহরণও রয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের কথাই ধরুন। তাদের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে?
রয়েছেন মিডিয়া মোগল রুপার্ট মার্ডক। তাঁর কম্পানি নিউজ করপোরেশন। তিনি বিশ্বজুড়ে শত শত স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমুখী প্রকাশনা ও সম্প্র্রচার প্রতিষ্ঠানের মালিক। এই একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে যুক্তরাজ্যে রয়েছে দ্য সান ও দ্য টাইমস, অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, হেরাল্ড সান ও দ্য অস্ট্রেলিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউইয়র্ক পোস্ট। এ ছাড়াও তিনি টেলিভিশন চ্যানেল স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়া ও ফক্স নিউজ (ফক্স করপোরেশনের মাধ্যমে), টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরিস ফক্স এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের (বর্তমানে বিলুপ্ত) মালিকও ছিলেন।
আছেন জন কার্ল মেলোন। এই আমেরিকান মিডিয়া মোগল লিবার্টি মিডিয়ার চেয়ারম্যান। তিনি ‘কেবল কাউবয়’ নামেও পরিচিত। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ ও বিনোদন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
জন কার্ল মেলোন ১৯৯২ সালে ‘ফাইভ হান্ড্রেড চ্যানেল ইউনিভার্স’ ধারণাটি ব্যবহার করেন ভবিষ্যতের মিডিয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য, যেখানে বিপুলসংখ্যক টিভি চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তাকে ইঙ্গিত করেন। তাঁর ডিসকভারি কমিউনিকেশনস, যা এখন ডিসকভারি ইনকরপোরেটেড—এই এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল, টিএলসি (দ্য লার্নিং চ্যানেল), এনিম্যাল প্লানেট, এইচজিটিভি (হোম অ্যান্ড গার্ডেন টেলিভিশন), ফুড নেটওয়ার্ক, ওডব্লিউএন (অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক), ইউরোস্পোর্ট (ইউরোপীয় স্পোর্টস চ্যানেল নেটওয়ার্ক), কিউভিসি (গুণ-মান, মূল্য, সুবিধা, যা একটি হোম শপিং নেটওয়ার্ক, যা সৌন্দর্য, ইলেকট্রনিকস, ফ্যাশন এবং আরো অনেক কিছু বিপণন ও পণ্য সরবরাহ করে লাইভ শো সম্প্রচার করে। কিউভিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ একাধিক অঞ্চলে কাজ করে)।
লিবার্টি গ্লোবালের অধীনে রয়েছে ভার্জিন মিডিয়া, যা যুক্তরাজ্যের একটি প্রধান টেলিযোগাযোগ এবং মিডিয়া কম্পানি, কেবল টেলিভিশন, ইন্টারনেট পরিষেবা এবং মোবাইল যোগাযোগ প্রদান করে। ইউনাইটেড প্যান-ইউরোপ কমিউনিকেশনস (ইউপিসি), রয়েছে টেলিনেট, যা বেলজিয়ামের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ প্রদানকারী, প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট, টেলিভিশন এবং টেলিফোন পরিষেবা প্রদানকারী।
রয়েছে লিবার্টি লাতিন আমেরিকা, সিরিয়াসএক্সএম, ফর্মুলা ওয়ান, লাইভ নেশন, জিসিআই (জেনারেল কমিউনিকেশন, ইনকরপোরেটেড) এবং লায়ন্সগেটসহ আরো অনেক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।
শুধু রুপার্ট মার্ডক বা জন কার্ল মেলোন নন, এ রকম এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক মিডিয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনের নাম আমরা উল্লেখ করেছি, যাঁদের সব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলে এই লেখার আকার অনেক বড় হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা শুধু ব্যক্তি বা তাঁর মূল প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলাম। আগ্রহী পাঠক-পাঠিকারা চাইলে হাতের মুঠোয় পৃথিবীর সুবিধা নিয়ে মুহূর্তেই সেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ধরুন, সামনার রেডস্টোন, ভায়াকমসিবিএস, যা বর্তমানে প্যারামাউন্ট গ্লোবাল; টেড টার্নার, টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (টিবিএস) ও সিএনএন; জেফ বেজোস অ্যামাজন, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক; ওয়াল্ট ডিজনি, দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানি, ডিজনি মিডিয়া নেটওয়ার্ক; ডেভিড গেফেন, গেফেন রেকর্ডস, ড্রিমওয়ার্কস এসকেজি; মাইকেল ব্লুমবার্গ, ব্লুমবার্গ এলপি, ব্লুমবার্গ নিউজের; ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন, গুগল, বর্তমানে যা অ্যালফাবেট, ইউটিউব এবং গুগল নিউজ ইত্যাদি।
প্রতিবেশী দেশে রয়েছেন সুভাষ চন্দ্র। তাঁর জি এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারপ্রাইজেস, জিটিভি; কালানিথি মরনের সান গ্রুপ, সান টিভি নেটওয়ার্ক, রেডিও ও চলচ্চিত্র; রাঘব বাহলের নেটওয়ার্ক১৮ গ্রুপ, সিএনবিসি-টিভি১৮, সিএনএন-নিউজ১৮-এর মতো মিডিয়া আউটলেট রয়েছে। আবার বিভিন্ন ডিজিটাল ও টেলিভিশন সম্পত্তির মালিক; এম কে আলাগিরি দ্য হিন্দু গ্রুপ, ভারতের অন্যতম ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য হিন্দু এবং অন্যান্য প্রকাশনার মালিকানার সঙ্গে জড়িত। টাইমস অব ইন্ডিয়া, বেনেট, কোলম্যান অ্যান্ড কোং, আগরওয়াল পরিবারের নেতৃত্বে টাইমস গ্রুপ ভারতের বৃহত্তম মিডিয়া গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি, যারা টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রধান সংবাদপত্র প্রকাশ করে এবং জুমের মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিক। রজত শর্মা ইন্ডিয়া টিভি, হিন্দি ভাষার সংবাদ চ্যানেল ইন্ডিয়া টিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের মিডিয়াশিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এন আর নারায়ণ মূর্তি, ইনফোসিস, যদিও প্রাথমিকভাবে একজন প্রযুক্তিসম্রাট; মূর্তির বিনিয়োগ মিডিয়া ও বিনোদনেও বিস্তৃত। বিজয় মালিয়া, কিংফিশার, ইউবি গ্রুপ এবং মিডিয়া ভেঞ্চারস। কিংফিশার এয়ারলাইনসের জন্য পরিচিত; মালিয়ার কিংফিশার টিভি এবং অন্যান্য বিনোদন উদ্যোগসহ মিডিয়া কম্পানিগুলোতেও অংশীদারি ছিল। শিব নাদার এইচসিএল এবং মিডিয়া ইনভেস্টমেন্টস, এইচসিএলের প্রতিষ্ঠাতা। নীতা আম্বানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নেটওয়ার্ক১৮, টিভি১৮, জিও প্ল্যাটফর্মের মালিক।
ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যম এমনিতেই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ছাপা পত্রিকা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। অনেক স্বনামখ্যাত বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনোটি বন্ধ হওয়ার পথে, কোনোটি রূপান্তরের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
তাই ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ চিন্তার পেছনে জনহিতকর, গঠনমূলক বা ইতিবাচক কিছু নয়, বরং রয়েছে প্রতিহিংসাপরায়ণ চিন্তা ও কূটকৌশল। এতে লাথি মারা হবে অসংখ্য মিডিয়াকর্মীর পেটে। তাতে বেকারত্বের সংখ্যা আরো বাড়বে, নানামুখী অসন্তোষ, সীমাহীন হতাশা আরো ভারী হবে।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক

বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামও কমাবে শুল্ক
বাণিজ্য ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন। এই শুল্ক আগামী ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ৯০ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি তো লাম। গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি এই প্রস্তাব দেন।
আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তো লাম দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করার ব্যাপারে একমত হন। তো লাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির হার বাড়াতে চান। ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়াতে মার্কিন ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ফোনালাপের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। ভারতের ওপর ২৭ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ভিয়েতনামের ওপর থেকে আরোপিত ৪৬ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়া হলে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম গত বছর ৪০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। একই সঙ্গে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.০৯ শতাংশ। নিজেদের সাফল্যের পথে শুল্ক বাধা সরাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। আগামী সপ্তাহেই বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ভিয়েতনাম এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যিক যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ আকর্ষণে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ভিয়েতনাম। ভৌগোলিক অবস্থান ও স্বস্তা শ্রমও উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। অ্যাপল, গুগল, নাইকি, ইন্টেলসহ অনেক মার্কিন বহুজাতিক কম্পানির অফিস রয়েছে দেশটিতে। এই কম্পানিগুলোর পণ্য ভিয়েতনামে অনেক বড় পরিসরে উৎপাদিত হচ্ছে।
এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দ্বিগুণ বেড়েছে। ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছর ধরেই ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভিয়েতনামের অবস্থান অষ্টম। গত বছর ভিয়েতনাম থেকে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েতনামের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ৯৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম, যা দেশটির মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ১৬.৫ শতাংশ। সূত্র : ভিয়েতনাম ব্রিফিং, দ্য নেশান

বিএনপি-হেফাজত ডিসেম্বরে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা যেমন সংস্কার চাই, বিচার চাই আওয়ামী লীগের, তেমনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে চাই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জোরালো দাবি, প্রধান উপদেষ্টা অতি অবশ্যই দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন, যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায়। এই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলামও একমত হয়েছে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। জাতির সামনে অনেকবার তিনি বলেছেন। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যাচ্ছে কিছুদিন পর পর বলা হচ্ছে, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনে, আবার জুন থেকে ডিসেম্বরে এ রকম শিফটিং দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন বিলম্বিত করারও বিভিন্ন রকম পাঁয়তারা আমরা লক্ষ করছি।
তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সেই অপরাধে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’ এর জন্য প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের লোকবল বৃদ্ধি করার দাবি জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার দাবি আমরা প্রকাশ্যে করেছি, লিখিতভাবে করেছি, সরকারকে জানিয়েছি। জনগণের সামনে প্রস্তাব আকারে আমরা তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আওয়ামী লীগকে গণহত্যার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনা হোক। এ জন্য সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন করা যায় এবং আইন সংশোধন করা যায়। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাহলে এ দেশের জনগণ তা মেনে নেবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলা করা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তাঁর মন্ত্রী-এমপি ও তাঁর দোসরদের বিরুদ্ধে, সেই মামলাগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি আমাদের সামনে নেই। জাতি প্রত্যাশা করে, এই মামলাগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের ওপর যে নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তার সঠিক সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি। সেই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি ও বিচার চাওয়া হয়েছে। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত।’
বৈঠকটি গতকাল শনিবার রাত সোয়া ৮টায় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত পৌনে ১০টায়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। হেফাজতে ইসলামের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, হেফাজত নেতা ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।