রাত পোহালেই বর্ষবরণ, বৈশাখী মেলাকে রঙ্গিনসহ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দুয়ার মৃৎশিল্পীরা। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা এ শিল্পকে নিয়ে হতাশ। এ শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি সহযোগিতা দাবি তাদের।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে সারা বাংলাদেশের ন্যায় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ইউনিয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বসবে বৈশাখী মেলা।
আরো পড়ুন
টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল, হাজার হতে কত বাকি রোনালদোর
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, আশুজিয়া ইউনিয়নের বীরগঞ্জ বাজার, সান্দিকোনা ইউনিয়নের সাহিতপুর বাজার, রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের রোয়াইলবাড়ী বাজার, গড়াডোবা ইউনিয়নে ভূঞারবাজার, উপজেলার পৌরসদরসহ আরো ছোট বড় বিভিন্ন বাজারে বসবে বৈশাখী মেলা ১৪৩২।
এমেলাগুলোকে রঙ্গিন করতে উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের লস্করপুর ও মোজাফরপুর ইউনিয়নে গগডা গ্রামের মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাশাপাশি মৃৎশিল্পীরা তাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর বলে জানান তারা।
বৈশাখী মেলায় প্রধান উপকরণই হলো মৃৎশিল্পীদের হাতে তৈরি পণ্যগুলো। তবে শিশুরাই এই শিল্পের পণ্য বেশি কিনে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা লক্ষ করা গেছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উপজেলার বলাইশিমুল ও মোজাফরপুর ইউনিয়নের লস্করপুর ও গগডা গ্রামে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণে। বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখনো জীবন্ত রয়েছে এই দুই গ্রামে। পরিবার ভিত্তিক এই শিল্পে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী, পুরুষ, কিশোর-কিশোরীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
বলাইশিমুল ইউনিয়নে লস্করপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের ৫ থেকে ৭টি পরিবার মাটি দিয়ে তৈরি করছেন নানান রকমের শিল্পপণ্য- ব্যাংক, পুতুল, ষাঁড়, গরু, ঘোড়া, হাতি, থালা-বাসনসহ নানা খেলনা ও গৃহসজ্জার সামগ্রী। এসব তৈরির জন্য পুকুর, হাওর ও বিল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে কাদা মাটি। তৈরি শেষ হলে চলছে রঙ ও ভার্নিশের কাজ, অনেক ক্ষেত্রে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে চিত্রকর্মও।
আরো পড়ুন
পহেলা বৈশাখে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বৈশাখী মেলা ও উৎসব
এ ব্যাপারে ৬০ বছর বয়সী মৃৎশিল্পী নওমিতা রাণীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাগোর পরিবার অনেক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি। পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ কিংবা স্থানীয় মেলা এলে কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়।
তখন পরিবারের ছোট-বড় সবাই সহযোগিতা করে। আমরা বাপ-দাদার পেশাকে ধরে রেখেছি, কারণ আমাদের আর কোনো পেশা জানা নেই। তবে এই শিল্প চর্চা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও পরিশ্রমের। নেই আধুনিক কোনো প্রযুক্তি কিংবা যন্ত্রপাতির সহায়তা। সম্পূর্ণ হাতে গড়া এসব পণ্য আজো বাজারে কদর পাচ্ছে, তবে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা।
মৃৎশিল্পীদের কাজ দেখতে আসা নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হারিফ উদ্দিন হানিফের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, ‘এই শিল্প আমাদের বাঙালিয়ানা ও সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতীক। যেভাবে তারা কাজ করছেন, তা না দেখলে বোঝা যাবে না কতোটা নিষ্ঠা ও শ্রম লাগে এতে।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রফিক বলেন, ‘এই শিল্পীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা করা হয় না। এ সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে একদিকে যেমন এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মও আগ্রহী হবে এই শিল্পে।’
মুঠোফোনে উপজেলা মোজাফরপুর ইউনিয়নের গগডা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক আবুল কাশেম আকন্দের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মৃৎশিল্পীরা অনেক কষ্ট করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। সরকারের সহযোগিতা পেলে তারা এ শিল্পকে আরো ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে।’
আরো পড়ুন
সন্ধ্যার মধ্যে ১১ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা
কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতিকজন জিয়াউর রহমান জীবন বলেন, ‘এক সময় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই দেখা যেত এমন মৃৎশিল্পের চর্চা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে গেলেও লস্করপুর ও গগডা গ্রামের এই পরিবারগুলো এখনো সেই ধারা বহন করে চলেছে। প্রয়োজন শুধু একটু যত্ম ও সহযোগিতা- তাহলেই বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ফিরিয়ে পাবে তার হারানো গৌরব।’