<p>সিঙ্গাপুরে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক শিশুকে বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন জহির নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি। তার সঙ্গে ছিলেন সা থা ইয়ু নামের মিয়ানমারের এক প্রবাসী।</p> <p>গত ২০ অক্টোবর দেশটির ৩৫০সি ক্যানবেরা রোডের একটি বাড়ির তিনতলা ভবনের সানশেডের ওপর চলে আসে তিন বছর বয়সী একটি শিশু। শিশুটি এমন জায়গায় ছিল যে পা ফসকে গেলেই তিনতলা থেকে নিচে পড়ে যেত। সেখানে শিশুটি ভয়ে জমে গিয়েছিল এবং সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল। পথচারী ও অন্যরা ব্যস্ত ছিল ছবি ও ভিডিও নেওয়ায়। </p> <p>এ সময় সাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছিলেন বাংলাদেশি প্রবাসী জহির। শিশুটিকে এই অবস্থায় দেখে সবার মতো তিনিও সেখানে দ্রুত ছুটে যান। ওই সময় সেখানে উপস্থিত হন মিয়ানমারের প্রবাসী সা থা ইয়ু।</p> <p>জহির শিশুটিকে বাঁচাতে প্রথমে ভবনের সিঁড়ি দিয়ে তিনতলার ওই ফ্ল্যাটটিতে যান এবং দরজায় ধাক্কা দেন। কিন্তু কেউ দরজা না খোলায় তিনি নিচে নেমে আসেন। জহির দেখেন চারজন লোক একটি কম্বল ধরে রেখেছে, যাতে শিশুটি পড়ে গেলে তারা তাকে ধরতে পারে। তখন মিয়ানমারের ওই প্রবাসীর সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নেন তিনতলারও ওই সানশেডে ওঠে শিশুটিকে উদ্ধারের।</p> <p><iframe frameborder="0" height="476" sandbox="allow-scripts allow-same-origin" scrolling="no" src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fasiaonecom%2Fvideos%2F2137068666694599%2F%3Fref%3Dembed_video&show_text=0&width=267" style="border:none;overflow:hidden" width="267"></iframe></p> <p>জহির লম্বা থাকায় ধাক্কা দিয়ে সা থা ইয়ুকে দোতলার সানশেডে ওঠান। এরপর তাকে তোলেন সা থা ইয়ু। এরপর জহির তৃতীয় তলায় সা থা ইয়ুকে ওঠান। আর নিজে দোতলায় অপেক্ষা করতে থাকেন। থু ইয় ধীরে ধীরে দেয়ালের সঙ্গে লেগে শিশুটির দিকে এগিয়ে যান, যাতে শিশুটি ভয় না পায়। সানশেড চওড়া থাকায় থা ইয়ুর কোনো সমস্যা হয়নি। এরপর সা থা ইয়ু খুব সতর্কতার সঙ্গে তৃতীয় তলায় উঠে শিশুটিকে ফ্ল্যাটের ভেতর রাখেন। ওই সময় তিনি ফ্ল্যাটে প্রাপ্তবয়স্ক এক ব্যক্তিকে দেখতে পান।</p> <p>জহির বলেন, ‘আমি যখনই তাকে দেখেছি, আমার বাংলাদেশের বাড়িতে থাকা সাত বছরের ছেলের কথা মনে পড়েছে। আমি শুধু ছেলেটিকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। অপেক্ষা করার সময় ছিল না। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে সে পড়ে যাবে।’</p> <p>সা থা ইয়ু বলেন, ‘তার ছয় বছরের এক ভাগ্নি ও চার বছরের এক ভাগ্নে আছে। এই ছেলেটিকে দেখে তাদের কথা মনে পড়ে। আর আমি ভাবছিলাম যে আমার নিজের ভাগ্নি ও ভাগ্নে যদি সেখানে থাকত, তাহলে আমি চাইতাম কেউ তাদের বাঁচাক।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমি ছেলেটির জন্য এতটাই ভীত ছিলাম যে নিজের জন্য ভয় পাইনি। আসলে আমি অনেক মানুষ দেখে বেশি নার্ভাস ছিলাম। আর ছেলেটিও এতটাই ভীত ছিল যে তার হাত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল এবং সে শক্ত করে আমার কাঁধে ধরে ছিল।’</p> <p>ঝুঁকি নিয়ে শিশুটিকে বাঁচানোয় এ দুজনকে এসসিডিএফ কমিউনিটি লাইফসেভার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এমন মানবিক কাজের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন তারা দুজন। এ দুজনকে নিয়ে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একাধিক খবর প্রকাশ করা হয়েছে।</p> <p>জহির বলেন, ‘পুরস্কারটা শুধু একটা বোনাস। আসল পুরস্কার হলো ছেলেটিকে বাঁচাতে পেরেছি।’</p> <p>এসসিডিএফ কমান্ডার লিম বেং হুই বলেন, ‘থা ইয়ু ও জহিরের সাহসিকতা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আশা করি, তাদের এই জনহিতৈষী কাজটি আরো অনেক মানুষকে দুঃসময়ে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করবে।’</p> <p>সূত্র : এশিয়া ওয়ান</p>