এক সময়ের সন্ত্রাসের জনপথখ্যাত খুলনায় নানাভাবে জড়ো হতে শুরু করেছিল সন্ত্রাসীরা। বেপরোয়া হয়ে উঠে চরমপন্থী গ্রুপগুলো। এক সময় যারা ছিল আতংকের নাম সেইসব সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধানরা কেউ আত্মগোপন থেকে আবার কেউ কারামুক্ত হয়ে শুরু করেছিল নানান অপকর্ম। কখনো হত্যা, কখনো ছুরিকাহত আবার কখনো বিভিন্ন অপকর্ম করে নিজেদেরকে জানান দেওয়া শুরু করেছিল এসব সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো।
পুলিশও ঈদের একদিন আগে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে আড়াই ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের পর একটি বাহিনী প্রধানসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে অস্ত্রসহ। যেটি খুলনার আন্ডার ওয়ার্ল্ডকে বড় ধরনের ধাক্কা বলেও মনে করছেন অনেকে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা।
নগরীর সোনাডাঙ্গার আরামবাগে গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের পর অস্ত্রসহ অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর আবারো জেলার রূপসা থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
এ ছাড়া একইরাতে নগরীর তিনটি এলাকায় ঘটে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ঘটনায় ওই তিনটি ঘটনায় মোট পাঁচজন আহত হন। এর আগের রাতে নগরীর নিউ মার্কেটের কাছে ছিনতাইকারীদের হাতে জখম হন একজন।
এভাবে একের পর এক অপরাধের ঘটনা প্রমাণ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর খালিশপুর থানাধীন জোড়াগেট সংলগ্ন ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়েছে মো. হাসান তালুকদার (১৯) নামের একজনকে।
হাসান তালুকদার নগরীর ৭ নম্বর ঘাট এলাকার বাসিন্দা সোহরাব তালুকদারের ছেলে। তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার কিছু সময় আগে জেলার রূপসা সেতু টোলপ্লাজা থেকে কুদির বটতলার দিকে যেতে একজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে পাঠায় হাইওয়ে থানা পুলিশ। তার মাথায় আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেলেও কিভাবে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন তা জানা যায়নি। লাশটি খুমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
একই রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকায় দুটি কোপাকুপির ঘটনা ঘটে। এতে মোট চারজন আহত হন। তাদেরকেও খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা আল আমিন মহল্লা এলাকা প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত হন, খুলনা থানাধীন বাগমারা এলাকার মোহাম্মদ কিসমত গাজীর ছেলে পলাশ (২০) ও একই এলাকার বেল্লালের ছেলে মো. হাসান (২৪)।
এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা তৃতীয় আবাসিকের মধ্যেও প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত হন, আল ফারুক সোসাইটির সামনে মো. রবিউলের ছেলে মো. আল আমিন (১৮) ও করিমনগরের মো. বাবুলের ছেলে অভি মৃধা (২৪)।
এর আগের রাতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টায়) নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন মো. ভুট্টো সরদার (৪৬) ও তার শ্যালক দিপু (২৭)। তারা দুজনে মোটরসাইকেলযোগে বৈকালী থেকে জরুরি কাজে ডাকবাংলার দিকে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এসময় ছিনতাইকারীরা ভুট্টোকে ধারাল অস্ত্রের আঘাত করে নগদ ৬৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ওই রাতে কেন তারা বৈকালী থেকে ডাকবাংলার দিকে যাচ্ছিলেন তার সঠিক কোনো কারণও জানা যায়নি। আহত ভুট্টোকেও খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এমনকি ছিনতাইকারীরা তাদের মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করে। এভাবেই একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নগরবাসী।
সম্প্রতি নগরীর জাতিসংঘ পার্কের চলমান ঈদ আনন্দ মেলা মাঠে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ছাড়াও বিগত কয়েক মাস ধরে নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটা বিব্রত।