<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আক্তার জাহান। তিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। ৫ আগস্টের পরে বিএমডিএ অফিসে যাননি আক্তার জাহান। তবে আত্মগোপনে থেকেও বিএমডিএর নানা কাজে কলকাঠি নাড়ছেন।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ উঠেছে, প্রায় তিন বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়া, কমিশন বাণিজ্য, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য করে আক্তার জাহান অন্তত দুই শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বনি এশরাইলের মাধ্যমে এই টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বনিও এখন কোটি টাকার মালিক। তিনিও আত্মগোপনে আছেন।</p> <p style="text-align:justify">বিএমডিএ সূত্র মতে, ২০২১ সালের ৬ জুলাই দুই বছরের জন্য বিএমডিএর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আক্তার জাহান। এরপর গত বছরের ১৩ আগস্ট আবারও দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান। গত তিন-চার বছরে বিএমডিএর সাতটি প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। খাল খনন, পুকুর খনন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার, গভীর নলকূপ, পুনর্বাসন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">টেন্ডারের মাধ্যমে এসব কাজ করা হলেও প্রতিটি প্রকল্প থেকে অন্তত ১০ শতাংশ কাজ নিতেন চেয়ারম্যান। ওই কাজ তিনি বিক্রি করে দিতেন পছন্দের ঠিকাদারের কাছে। প্রতিটি কাজের বিনিময়ে তিনি আদায় করেন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা। এভাবে গত তিন বছরে তিনি অন্তত ৩০০ কোটি টাকার কাজ বিক্রি করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">বিএমডিএর একটি সূত্র জানায়, গত তিন বছরে অন্তত দুই শ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়, মন্ত্রণালয় থেকে যার একটিরও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">শুধু পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন নিয়েই এসব পদোন্নতি দেওয়া হয়। এমনকি বিএমডিএর অর্গানোগ্রামে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী না থাকলেও তিনজনকে ওই পদে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারম্যান কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এর বাইরে গত তিন বছরে অন্তত ৫০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। সেখান থেকেও কয়েক কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।  </p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার কালের কণ্ঠকে অভিযোগ করে জানান, বিএমডিএতে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। তারাই সব কাজ করতেন। এর ভাগ পেতেন প্রকল্প পরিচালকরাও। চেয়ারম্যানের পিএ বনি এশরাইল প্রতিটি কাজের জন্য অন্তত ২৫ শতাংশ কমিশন নিতেন চেয়ারম্যানের নামে। গত ২৮ এপ্রিল বিএমডিএ ভবনে গিয়ে কাজ না পেয়ে শাকির হোসেন নামের এক ঠিকাদার নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাকের জামার কলার চেপে ধরেছিলেন। এ নিয়ে ওই দিন বিএমডিএতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।</p> <p style="text-align:justify">ঠিকাদার শাকির হোসেন অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক রাজশাহীর অনেক ঠিকাদারকে কাজ দেননি। বিপুল টাকার বিনিময়ে কাজ দেওয়া হয়েছে নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর ঠিকাদারদের। একজন ঠিকাদারকে একটির বেশি কাজ দেওয়া হবে না বলে বিএমডিএ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত এপ্রিলে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ৫০টি কাজ দেওয়া হয়েছে পাঁচ-সাতজন ঠিকাদারকে। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হোন রাজশাহীর ঠিকাদাররা।</p> <p style="text-align:justify">আরেক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএমডিএর গভীর নলকূপ পুনঃস্থাপন প্রকল্পের জন্য যেসব পাইপ সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও কমিশন আদায় করেছেন চেয়ারম্যান। তাঁকে কমিশন না দিলে কোনো মালপত্র সরবরাহ করা যায়নি। ব্যক্তিগত সহকারী বনির মাধ্যমে এই কমিশন আদায় করতেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">তবে এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আক্তার জাহানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।</p>