<p style="text-align:justify">পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় দুই শিক্ষার্থী। তাদের একজন মাহবুব হাসান নিলয় (১৩)। তাকে হারানোর শূন্যতায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তার পরিবার। তবে ছেলের জীবনের বিনিময় দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে, এটাই তাদের কাছে বড় পাওয়া।</p> <p style="text-align:justify">পাবনা সদর উপজেলার ব্রজনাথপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ-দিল আফরোজ দম্পতির সন্তান মাহবুব হাসান নিলয় (১৩)। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে নিলয় ছিল তৃতীয়। সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। তার বাবা জেলা আনসার কমান্ডারের গাড়িচালক আর মা গৃহিণী। নিলয়ের জমজ বোন মাহবুবা নাজনীন। তারা সবসময় একসঙ্গে খুনসুটি করতো। নিলয়ের বড় ভাই মেহেদি হাসান মিলন সৌদি প্রবাসী। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে দেশে এসেছেন তিনি। একসঙ্গে তিন ভাই-বোন সেদিন আন্দোলনে গিয়েছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">নিলয়ের মা দিল আফরোজ বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট সকালে আমি নিজ হাতে তিন সন্তানকে খাইয়ে দেই। নিলয় কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবারো আমার কাছে খাবার চায়। আমি খাইয়ে দেই। দুই গাল ভাত মুখে নিয়েছিল। খাওয়া শেষে বাসার সিঁড়ি থেকে তিন ধাপ নামার সময় আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। বলেছিলাম তোমার খবর পাবো কীভাবে? তোমার কাছে তো ফোন নাই। ও মুখ ঝাঁকি মেরে বলেছিল- খবর নিতে হবে না। সেই যাওয়াই ছিল অন্তিম যাত্রা।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার থেকেই ছেলেমেয়েদের এই আন্দোলনে যেতে উৎসাহ জুগিয়েছি। কারণ, দেশে এত অত্যাচার হচ্ছে, বৈষম্য হচ্ছে; মানুষ অধিকার হারাচ্ছে। এজন্য তাদের আন্দোলনে পাঠিয়েছি। তার মধ্যে ছোট ছেলেটা আমার কাছে ফিরেছিল লাশ হয়ে।</p> <p style="text-align:justify">ভাইয়ের শোকে পাথর বোন মাহবুবা নাজনীন জানায়, সেদিন গুলির শব্দ পেয়ে সবাই যে যার মতো দৌড়াদৌড়ি শুরু করে, ধাক্কাধাক্কিতে নিচে পড়ে যাই। পরে আমিও দৌড়ে এক জায়গায় আশ্রয় নেই। কিন্তু আমার ভাইয়ের যে গুলি লেগেছে বুঝতে পারিনি। অনেকেরই গুলি লেগেছিল, তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।’</p> <p style="text-align:justify">নিলয়ের বড় ভাই মেহেদি হাসান মিলন বলেন, ‘ওর (নিলয়) স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরি করবে। ও বলতো আমি বড় হয়ে এমন কিছু করবো, যাতে সারা বিশ্ব ও সারা দেশের মানুষ আমার জন্য কাঁদে। যেদিন আন্দোলনে যাই সেদিন ছিল ৪ আগস্ট, যাবার আগে আমি তাকে গাড়ি ভাড়ার জন্য ১০০ টাকা দিয়েছিলাম। ওইদিন ঘটনার সময় গুলি শুরু হলে সে ছিল একদিকে আর আমি ছিলাম আরেকদিকে। আমার বোন ছিল অন্যদিকে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছোট ভাইটার গুলিবিদ্ধ নিথর মরদেহ।’</p> <p style="text-align:justify">নিলয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্বিত। কারণ, তার রক্ত বৃথা যায়নি। আমি বিচার চাই না,  কার কাছেই বা চাইবো। ছেলেটা এই দেশের জন্য মারা গেছে। যদি দেশ ও দেশের মানুষ মনে করে তাকে কোনোভাবে সম্মান দেবে, তাহলে দেবে। না দিলে নাই। কিন্তু এই দেশটা যেন আর স্বৈরাচারের হাতে না যায়, বলেন তিনি।’</p>