<p>পাবনায় নিহত শহীদ জাহিদের পিতার একান্ত প্রত্যাশা, তাদের সন্তানের রক্ত যেন বৃথা না যায়। জাতি যেন আর কখনো দ্বিতীয়বার নির্যাতনের শিকার না হয়।</p> <p>গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পাবনায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন দুই শিক্ষার্থী। তাদের একজন ছিলেন জাহিদুল ইসলাম (১৯)। সন্তান হারানোর শোক আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার পরিবার। জাহিদের রক্তে অর্জিত নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজছেন তারা।</p> <p>পাবনা সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিন ও আফিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান জাহিদুল ইসলাম পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাহিদ ছিল তৃতীয়। তার বাবা একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মা গৃহিণী।</p> <p>জাহিদের মা-বাবা এখনো সন্তান হারানোর শূন্যতা মেনে নিতে পারছেন না। জাহিদের বাবা দুলাল উদ্দিন বলেন, ওই দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় জাহিদ আমাকে বলেছিল, ‘আব্বু, টাকা দিয়ে যাননি।’ তখন বললাম, ‘ড্রয়ারে আছে, নিয়ে নাও।’ এটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। বলেছিলাম, ‘যেখানেই যাও, দেখে শুনে যাও, সাবধানে থেকো।’ কিন্তু সে আর ফিরে এলো না।</p> <p>জাহিদের মা আফিয়া খাতুন কাঁপা গলায় বলেন, সেদিন দুপুরের পর থেকেই সবাই মোবাইলে ঘটনা দেখছিল। এদিক-ওদিক গিয়ে অনেকে কাঁদছিল। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, আমার তিন ছেলের একজনের কিছু একটা হয়েছে। তবে এইটুকু সান্ত্বনা যে আমার ছেলে না থাকলেও দেশের মানুষ আজ শান্তিতে আছে, বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছে।</p> <p>জাহিদের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সমাবেশে গুলিবর্ষণ শুরু হলে আমি জাহিদের থেকে ২-৩ মিটার দূরে ছিলাম। হুড়াহুড়িতে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে জানতে পারি, জাহিদ গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং হাসপাতালে মারা গেছে। আমাদের স্বপ্ন ছিল জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবে।’</p> <p>জাহিদের বাবা আরো বলেন, ‘আমার ছেলে এবং আরো অনেক সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রী রক্ত দিয়েছে। তাদের রক্তের জন্যই আজ আমরা স্বাধীন। আমার একমাত্র চাওয়া, তাদের রক্ত যেন কখনো বৃথা না যায় এবং জাতি যেন আর কখনো কোনো নির্যাতনের শিকার না হয়।’</p>