<p>আগামী ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থীদের জোড় ইজতেমা ঘিরে সংঘাতের দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। জুবায়েরপন্থীরা ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের সব গেটে লাঠি হাতে নিশ্ছিদ্র প্রহরা বসিয়েছে। আর কালকের মধ্যে সারাদেশ থেকে সব ভক্তদের ময়দানের চারপাশে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাদপন্থীরা। তুরাগ নদের দুই তীরে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে আতঙ্ক হয়ে পড়েছেন টঙ্গী-উত্তরা-আশুলিয়াসহ ময়দানের আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা।</p> <p>মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের চারিদিকে ১৪টি পয়েন্ট করে প্রতি পয়েন্ট ১৫ জন করে পাহারা টিম বসিয়েছে জুবায়েরপন্থীরা। দুই ঘণ্টা পর পর পাহারা টিম পরিবর্তন হচ্ছে, চলবে তিন দিন। পাহারা টিম কেউ লাগেজ নিয়ে যাওয়ার সময় মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মোটকথা মাঠের ভেতরে ও বাইরে ১৪টি পয়েন্ট ১৫ জন করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মাঠের চারদিকে পাহারা দিচ্ছেন জুবায়েরপন্থীরা, যাতে সাদপন্থী কোনো ব্যক্তি মাঠে প্রবেশ করতে না পারে।</p> <p>পুলিশের একটি সূত্র জানায়, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমান খানার ২ নম্বর গেটে বাদ মাগরিব সন্দেহভাজন মাওলানা সাদপন্থী হিসেবে মাওলানা জুবায়েরপন্থীর পাহারাদার দুইজন ব্যক্তিকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা এমনিতেই বেড়াতে এসেছিলেন বলে দাবি করছেন।</p> <p>জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে বর্তমানে এপিবিএনের চেকপোষ্টে ডিউটিরত সদস্যদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা হলেন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের মৃত ইসাহাকের ছেলে আহমদ উল্লাহ (৩৭) ও একই উপজেলার মৌচাকের হাদি ইসলামের ছেলে জুয়েল মিয়া (২৮)।</p> <p>টঙ্গী পূর্ব থানার মোড়ে ডিউটিরত সোহাগ মিয়া, লোকমান হোসেন, ইমাম হোসেন, আলী হোসেন ও বেলাল মিয়া (হালকা লং ২১২) জানান, সিডিএল ভবন, স্টেশন রোড ইজতেমার সাত নাম্বার গেট এলাকাসহ ময়দানের চারপাশে বেশ কয়েকটি গ্রুপ লাঠি হাতে দায়িত্বরত। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর তাদের ডিউটি পরিবর্তন হয়। এভাবে একটানা তিন দিন চলবে। আজ রাত ৮টা থেকে তাদের ডিউটি শুরু হয়েছে। ইজতেমার ময়দানের ভিতরেও একইভাবে ময়দানের চারপাশের সীমানায় লোক পাহারায় আছে।</p> <p>তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরে সাদপন্থীরা অবস্থান করছেন। সারাদেশ থেকে দলে দলে লোক জমায়েত হচ্ছে এখানে। রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার সাদপন্থী ভক্ত জমায়েত হয়েছেন। সারাদেশ থেকে সাদভক্তদের বুধবারের মধ্যে ময়দানের চারপাশে আসার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইজতেমা ময়দান এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জুবায়ের গ্রুপ সন্দেহজনক দুইজনকে ধরে আমাদের দিয়েছিল। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি।'</p> <p>আগামী বছর দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭-৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বেও প্রস্তুতি হিসেবে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন ও জুবায়েরপন্থিরা করতে দিবে না বলে বিরোধ চলছে। এ অবস্থায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। </p> <p>জুবায়েরপন্থিদের সাংবাদিক সম্মেলনের পর সাদপন্থিরাও সম্মেলন করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এই অবস্থায় সাদপন্থীদের পূর্ব ঘোষিত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে ১৮ ডিসেম্বর করেছে তারা। এই অবস্থায় আজ সকাল থেকে জুবায়েরপন্থীদের সমর্থনে টঙ্গীবাসী ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে টঙ্গী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে একই দাবিতে কয়েকটি মানববন্ধন হয়। বুধবার সাদপন্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।</p>