ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফারাবি এক্সপ্রেস নামের একটি বাস দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ ৭ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোসহ দুর্ঘটনার ৫ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।
জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকার শরিফ জুটমিলের সামনে মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরগামী ফারাবি এক্সপ্রেস নামের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে বাবা-ছেলেসহ ৭ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়। ঘটনার পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসন এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।
এ কমিটিতে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আজমীর হোসেন, হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ, বুয়েটের এআরআই বিভাগের প্রভাষক ড. নাজমুল হক, ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।
তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়।
সেগুলো হলো, চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, ওভারটেকিং আইন অমান্য করা এবং সড়কে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড না থাকা, ফিটনেস ও ট্যাক্সটোকেন মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় সড়কে চলাচল করা এবং দুর্ঘটনাকবলিত স্থানের রাস্তাটি পার্শ্ব সড়ক অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ডার ড্রপ থাকা। তদন্ত কমিটি বাসটির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোনো তথ্য পায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি দুর্ঘটনার নিরসনে ১৪টি সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহাসড়কে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলাচল না করা, রুটপারমিট ব্যতীতে কোনো গাড়ি চলাচল না করা, বিকল্প চালক রেখে টানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, প্রতিটি গাড়িতে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা রাখা, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালানো, থ্রি-হুইলার এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় রাস্তার পাশে ট্রাফিক সাইন প্রদর্শন, পর্যাপ্ত সিগন্যাল, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সকল যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো, ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ড্রার ড্রপ মেরামত, অনুমোদনহীন পার্শ্বরাস্তা সংযোগ না দেয়া এবং রাইট অফ ওয়ের বাইরে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, বিগত দিনের দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং এ ঘটনায় পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে বাস মালিক, শ্রমিক, সড়ক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্রুত সভা করা হবে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সভায় প্রত্যেক বিভাগকে আলাদা করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হবে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের সুপারিশগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
অপরদিকে এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হলে বাস চালক সুমন গাজীকে গ্রেপ্তার করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে আদারতে সোপর্দ করা হয়।
মামলার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন জানান, আদালত পরে রিমান্ডের শুনানির তারিখ ঠিক করা হবে জানিয়ে সুমন গাজীকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।
বিআরটিএ’র ফরিদপুর কার্যালয় জানায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ২৮১ টি ডিজেল গাড়ি ফিটনেস নবায়নকালে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিড গভর্নর শিল্ড করা হয় ।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. নাসীর উদ্দীন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিতে ডিজেল দ্বারা চালিত এবং স্পিড গভর্নর শিল্ড করা পাওয়া যায়নি। এছাড়া বাসটি ফিটনেস বিহীন ছিল। বর্তমানে বাসটি বিআরটিএ থেকে সাসপেন্ড করা আছে।