ঢাকা, বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

১৫ বছর পর শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়াবেন সেই ইমাম

কি‌শোরগঞ্জ প্র‌তি‌নি‌ধি
কি‌শোরগঞ্জ প্র‌তি‌নি‌ধি
শেয়ার
১৫ বছর পর শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়াবেন সেই ইমাম
সংগৃহীত ছবি

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে ১৫ বছর পর পুনর্বহাল করা হয়েছে। রবিবার (২ মার্চ) জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাত উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান। এতে ঈদ জামাত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এবারও শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল ১০টা অনুষ্ঠিত হবে। 

নিরাপত্তাব্যবস্থায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ছাড়াও সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামের দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে।

প্রস্তুতিমূলক সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফু ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিনসহ অনেকেই মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে ইমাম হিসেবে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

প্রস্তুতিমূলক সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের মেজর রায়হান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মোস্তারী কাদেরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলার পিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, জিপি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি আলমগীর হোসাইন তালুকদার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, সদস্যসচিব মো. ফয়সাল প্রিন্সসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। সভা সঞ্চালনা করেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মো. এরশাদ মিয়া।

ঈদগাহ কমিটির বৈধ নিয়ম অনুযায়ী, ২০০৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শাহ কামাল তাকে বেআইনিভাবে সরিয়ে দেন।

পাশাপাশি মোতাওয়াল্লির অধিকারকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওয়াকফ দলিলকে তোয়াক্কা না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহ কামাল ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন বেসরকারি এনজিও ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিতর্কিত আলেম ফরীদ উদদীন মাসউদকে। তখন এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করে ঈদের জামাত নিয়ন্ত্রণ করে। মুফতি ছাইফুল্লাহর আগে তার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ (রহ.) ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ ১৫ বছর শোলাকিয়া ইমামের পদ থেকে সরিয়ে রাখা হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহর (রহ.) সন্তান ও কিশোরগঞ্জের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওবার পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম পরিবর্তনেরও দাবি ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সোচ্চার হন অনেকেই। তাদের দাবি, ‘চাপিয়ে দেওয়া’ ইমামকে অবিলম্বে সরিয়ে মোতাওয়াল্লি কর্তৃক নিযুক্ত আগের ইমাম সর্বজন প্রশংসিত মুফতি আবুল খায়ের মো. ছাইফুল্লাহকে আবারও ইমামের দায়িত্ব দিতে হবে। এর প্রেক্ষিতে রবিবার মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যুবলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও, অতঃপর...

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
শেয়ার
যুবলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও, অতঃপর...
সংগৃহীত ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে মারপিট ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে তার সমর্থকরা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে তার সমর্থকরা রাণীশংকৈল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরশেদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হোসেনগাঁও ইউনিয়নের উত্তরগাঁওয়ের বাসিন্দা মমতাজ আলী বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও আরো দুই জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় মারপিট, শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা এবং ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরো পড়ুন
রায় শুনে ‘অজ্ঞান হয়ে যান’ মালেকের স্ত্রী

রায় শুনে ‘অজ্ঞান হয়ে যান’ মালেকের স্ত্রী

 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে বুধবার ভোররাতে প্রধান অভিযুক্ত মতিউর রহমান মতিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়।

মতির গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে তার অনুসারীরা বেলা বাড়ার সাথে সাথে থানার সামনে জড়ো হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। তারা গ্রেপ্তারকৃত মতিউরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাফিউল মাজলুবিন রহমান। তিনি মাইকে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার এবং অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান।

তবে আওয়ামী সমর্থকরা তার আহ্বানে কর্ণপাত না করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।

ইউএনও শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, ‘থানা ঘেরাওয়ের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সেখানে যাই। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।’

ওসি আরশেদুল হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়েছে।

বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মতিউর রহমান মতিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে চাচা-ভাজিতার মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
শেয়ার
কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে চাচা-ভাজিতার মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বৈদ্যুতিক মটর বন্ধ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন—গোপীনাথপুর গ্রামের আতিকুর রহমান মোল্লার ছেলে আবুল খায়ের মোল্লা (৫২) ও তার ছোট ভাই আবু তাহের মোল্লার ছেলে জাকারিয়া মোল্লা (২২)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকাল থেকে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় মাছ ধরার কাজ করছিলেন চাচা-ভাতিজা।

ডোবা থেকে পানি সেচের জন্য একটি বৈদ্যুতিক মটর লাগিয়ে ছিলেন তারা। দুপুরের দিকে মটর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে অসাবধানবশত তারা বিদ্যুতায়িত হন। পরে পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়।

পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
 

মন্তব্য

চরভদ্রাসন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
চরভদ্রাসন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান
সংগৃহীত ছবি

দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপসহকারী পরিচালক মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল।

অভিযানকালে সিটিজেন চার্টার না থাকাসহ নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় কিছু রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়। সেগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর পাঠানো হবে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপসহকারী পরিচালক মো. কামরুল হাসান জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চরভদ্রাসন উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে সিটিজেন চার্টার পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনিয়মের কিছু রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর পাঠানো হবে।

এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
তদন্ত প্রতিবেদন

ফরিদপুরে বাস দুর্ঘটনার ৫ কারণ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
ফরিদপুরে বাস দুর্ঘটনার ৫ কারণ
পুরোনো ছবি

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফারাবি এক্সপ্রেস নামের একটি বাস দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ ৭ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোসহ দুর্ঘটনার ৫ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।

জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকার শরিফ জুটমিলের সামনে মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরগামী ফারাবি এক্সপ্রেস নামের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে বাবা-ছেলেসহ ৭ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়। ঘটনার পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসন এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।

এ কমিটিতে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আজমীর হোসেন, হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ, বুয়েটের এআরআই বিভাগের প্রভাষক ড. নাজমুল হক, ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।

তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়।

সেগুলো হলো, চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, ওভারটেকিং আইন অমান্য করা এবং সড়কে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড না থাকা, ফিটনেস ও ট্যাক্সটোকেন মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় সড়কে চলাচল করা এবং দুর্ঘটনাকবলিত স্থানের রাস্তাটি পার্শ্ব সড়ক অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ডার ড্রপ থাকা। তদন্ত কমিটি বাসটির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোনো তথ্য পায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি দুর্ঘটনার নিরসনে ১৪টি সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহাসড়কে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলাচল না করা, রুটপারমিট ব্যতীতে কোনো গাড়ি চলাচল না করা, বিকল্প চালক রেখে টানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, প্রতিটি গাড়িতে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা রাখা, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালানো, থ্রি-হুইলার এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় রাস্তার পাশে ট্রাফিক সাইন প্রদর্শন, পর্যাপ্ত সিগন্যাল, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সকল যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো, ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ড্রার ড্রপ মেরামত, অনুমোদনহীন পার্শ্বরাস্তা সংযোগ না দেয়া এবং রাইট অফ ওয়ের বাইরে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, বিগত দিনের দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং এ ঘটনায় পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে বাস মালিক, শ্রমিক, সড়ক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্রুত সভা করা হবে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সভায় প্রত্যেক বিভাগকে আলাদা করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হবে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের সুপারিশগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

অপরদিকে এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হলে বাস চালক সুমন গাজীকে গ্রেপ্তার করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে আদারতে সোপর্দ করা হয়।

মামলার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন জানান, আদালত পরে রিমান্ডের শুনানির তারিখ ঠিক করা হবে জানিয়ে সুমন গাজীকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।

বিআরটিএ’র ফরিদপুর কার্যালয় জানায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ২৮১ টি ডিজেল গাড়ি ফিটনেস নবায়নকালে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিড গভর্নর শিল্ড করা হয় ।

বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. নাসীর উদ্দীন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিতে ডিজেল দ্বারা চালিত এবং স্পিড গভর্নর শিল্ড করা পাওয়া যায়নি। এছাড়া বাসটি ফিটনেস বিহীন ছিল। বর্তমানে বাসটি বিআরটিএ থেকে সাসপেন্ড করা আছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ