মোটা চাল কেটে মিনিকেট নামে ব্র্যান্ডিং করার প্রতারণা বন্ধ হয়নি ঝিনাইদহে। বিভিন্ন জাতের চিকন ধানের চাল তৈরি করে মিনিকেট বলে বাজারে ছাড়ছেন চালকল মালিকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, মিনিকেট নামে কোনো ধান আমাদের দেশে উৎপাদন করা হয় না। অথচ মিনিকেট নামের চাল দেশের বাজার দখল করে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই মিনিকেট প্রতারণা বন্ধ করতে পারছে না।
জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে ভারতের একটি কিট বক্সে চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয় নতুন একটি ধানের জাত। ভারতীয় চাষিদের মাধ্যমে এ ধান বাংলাদেশে চলে আসে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা ঝিনাইদহের মহেশপুর, যশোরের শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার চাষিরা চাষ করার সময় ভারতীয় চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করে এ জাতের ধান।
এ ধান সাধারণত চিকন ও ভাত দেখতে ভালো হয়। তখন চাষিরা এ ধানের নাম দেয় মিনিকেট। সে সময় ধানটি ভালো বাজার পায়। এরপর থেকে নতুন এ জাতের ধানের চাষ বাড়তে থাকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। দিন যতই যেতে থাকে বাজারে এ ধানের চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। আর সুযোগ নেয় দেশের চালকল মালিকরা।
আরো পড়ুন
গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিল সরকার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমাদের দেশে বর্তমানে বিআর-২৮, বিআর-২৯, বিআর -২৮, বি আর-৪৯, বিনা-৭, বিআর- ৫৮, বিআর ৬৭, বিআর-৭৪, বিআর- ৮১, বিআর -৮৮, বিআর-৮৯, বিআর-৯২ ও বিআর -৯৬ জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। এসব জাতের ধান চিকন হয়। আর এসব ধানের চাল তৈরি করে মিনিকেট লেখা বস্তায় ভরে বাজারজাত করছে চালকল মালিকরা।
কোনো কোনো চালকল মালিক সুপার মিনিকেট, স্পেশাল মিনিকেট লেখা বস্তায়ও বাজারে ছাড়ছে। আর এ কারণে চালকল মালিকরা প্রতি কেজিতে অন্তত ১৫ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চালের জাত যথাযথ মনিটরিং না করায় ব্যবসায়ীরা দিনের বছরের পর বছর এ ফায়দা লুটে যাচ্ছে।
শৈলকুপার ভাটইবাজারের চাল ব্যবসায়ী লক্ষন কুমার বলেন, ‘আমাদের কাছে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করছে মিল মালিকরা। আমরাও ক্রেতাদের কাছে একই নামে বিক্রি করছি তবে বস্তার মধ্যে কোন জাতের চাল আছে সেটা আমার সঠিক জানা নেই।’
ঝিনাইদহ শহরের ছোট বাজারের চাল ব্যবসায়ী আসাদুর রহমান বলেন, ‘এটা করছে চালকল মালিকরা। তারা যা বলছেন আমরা তাই বিক্রি করছি। প্রশাসন যদি মিনিকেট চাল নিয়ে তদারকি করে তাহলে এ জটিলতা নিরসন হবে। এছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমরা কৃষকদের কাছ থেকে মিনিকেট ধান কিনে চাল তৈরি করি। মিনিকেট চাল নিয়ে আমরা কোনো প্রতারণা করছি না। এ চাল নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের গুজব সৃষ্টি করে কিছু মানুষ।’
ঝিনাইদহের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘কতিপয় চালকল মালিক ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মিনিকেটের নামে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এমন প্রতারণা শুধু এ জেলাতেই নয় সারাদেশেই চলছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের ঊর্ধতন কর্তপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আমরা নির্দেশনা পেলেই মিনিকেট চাল নিয়ে প্রতরণা বন্ধে অভিযান চালাবো।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্ঠী চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মিনিকেট নামে কোনো চাল নেই। এমনকি এ জাতের কোনো ধানও নেই। ভারতের কিছু চিকন জাতের ধান এদেশে চাষ করা হয়। সেটাকে এ দেশে মিনিকেট বলে চালানো হচ্ছে।’