জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে থানায় হামলা এবং চাঁদা না পেয়ে চার যুবককে মারপিটের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুটি মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তাররা হলেন- বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন (৪৭), বিপ্লব হোসেন (৪০), ফারুক হোসেন (৩২), উজ্জল হোসেন (৩৪) ও সজিব হোসেন (২৮)।
আজ বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি ছারোয়ার জাহান ক্ষেতলাল থানাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলার পর থেকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মেহেদি আশিক পার্থ দলবলসহ পলাতক আছেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার ক্ষেতলালের শাখারুঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ক্রয়কৃত জমির দলিল করার জন্য সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসেন। সেখানে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
কিন্তু তোফাজ্জল টাকা না দিলে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি আশিক পার্থর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা তোফাজ্জল ও তার বন্ধুদের মারপিট করেন। এতে তোফাজ্জল হোসেন (৩৫), তার বন্ধু বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার ফুলদিঘী মধ্যপাড়ার রফিক (৩৭) ও আব্দুল মুমিন (৩৮) এবং শাখারুঞ্জ গ্রামের সামিরুল ইসলাম (২৪) গুরুতর আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নেয়। এ ঘটনায় তোফাজ্জল মামলা করতে চাইলে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে তাদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা করেন।
হামলার ঘটনাটি ভিডিও করলে নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে তাদের মারপিট করেন। এ ঘটনায় কাজী জাফর ও সুমন নামের দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময় মধ্যস্থতা করতে এসে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হন।
সূত্র আরো জানায়, আহত তোফাজ্জলকে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে তার মাথায় ৮টি সেলাই দেওয়া হয়।
রাতে তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বাদি হয়ে বিএনপি নেতা মেহেদি আশিক পার্থসহ বিএনপি অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। একইভাবে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশকে মারপিট করার অভিযোগে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে পুলিশের এসআই সঞ্জয় কুমার বাদি হয়ে মামলা করেছেন।
তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, ‘১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে তার স্বামী ৫ শতক জমি কিনেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সেই দলিল করতে গিয়ে বিএনপির নেতা পার্থ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দেওয়ায় তারা দলবল নিয়ে আমার স্বামী ও তার বন্ধুদের সবার সামনে মারপিট করে। আমি এর বিচার চাই।’
ক্ষেতলাল থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চাঁদা না পেয়ে মারপিট করা যুবকদের উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি ওই যুবকরা মামলা করতে চাইলে তাতেও তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের অবৈধ ও আইনবিরোধী দাবি উপেক্ষা করায় তারা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশকে মারপিট করে। এ ঘটনায় মামলার পর ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ক্ষেতলাল থানা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান বলেন, ‘দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা মঙ্গলবার দলীয় প্যাডে পাঠানো ওই নোটিশে পার্থকে সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।’