খুলনা মহানগরীর ৩৬৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাড়িটিতে এক সময় নিত্যই ছিল ঈদের আমেজ। বাড়িটিতে কোনো নামফলক না থাকলেও সেটি পরিচিত ছিল ‘শেখবাড়ি’ নামে। শেখ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতে সরব থাকতো বাড়িটি। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে এমনটি দেখা গেলেও এই প্রথমবারের মতো বাড়িটি ছিল জনমানবশূণ্য।
শুধু শেখবাড়িই নয়, খুলনার এক সময়ের দাপুটে মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের ২ নম্বর কাস্টম ঘাটের বহুতল বিশিষ্ট ভবনটিও ছিল শুনশান। গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে তিনি ও তার পত্নী তৎকালীন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার লাপাত্তা। দেশে আছেন না দেশের বাইরে তা জানা যায়নি।
এমনকি তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপালের মল্লিকেরবেড় গিয়েও আত্মীয়-স্বজন বা এলাকাবাসীর কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।
কাস্টম ঘাটের বহুতল বিশিষ্ট ভবনটিতে যেসব ভাড়াটিয়ারা ছিলেন তারা ভয়ে-আতংকে ছেড়েছেন আগেই। যেখানে প্রতিদিন শত-শত লোকের সমাগম ঘটতো সেই বাড়ি ঈদের দিনও (৩১ মার্চ) ছিল জনমানবশূণ্য।
হালের পরিচিত নেতা, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানার টিবি ক্রস বাড়িতে আগে থেকেই খুব বেশি একটা লোক সমাগম থাকতো না। তবে নগর সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন তদ্বিরের জন্য লাইন পড়ে যেতো।
৪ আগস্ট শঙ্খ মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি আহত হন। তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে পাঠানোর পর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
বাবুল রানার পাশাপাশি ওই সময় আ’লীগ অফিসে আহত হয়েছিলেন, নগর যুবলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নগর সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন।
ভর্তি হয়েছিলেন একই হাসপাতালে। লাশের মতো করে ওই সময় তাকেও বের করে অজ্ঞাত স্থানে পাঠাতে সহায়তা করেছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক, আলোচিত সিনিয়র স্টাফ নার্স ও হাসপাতালের কর্মচারীরা।
এমনিভাবে ওই সময়ের ডাকসাঁইটে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সদর থানা আ’লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির পতিত সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলামের পূর্ব বানিয়াখামারের বাড়িটিতেও আগের মতো যৌলুস নেই। শোনা যাচ্ছে খুলনা বারের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই খুলনার নিম্ন আদালতে হাজির হতে পারেন।
এভাবে অন্যান্য আ’লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তৎকালীণ সময়ের আলোচিত এমনকি বহর নিয়ে চলা নেতারাও আজ লাপাত্তা। কেউ কেউ অবশ্য মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজেদের জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
পক্ষান্তরে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বাড়িতে ঈদের দিন যেভাবে শুভেচ্ছা বিনিময়, লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে তাতে বিগত দেড় দশকের বিপরীত চিত্রই মিলেছে। তবে এ দু’টি দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকায়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুর বারী হেলাল রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় এবং ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন খালিশপুরের বাড়িতে।
নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনও দলীয় নেতাকর্মী এবং পেশাজীবীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন।
বিএনপির পাশাপাশি খুলনার ছয়টি আসনে ঘোষিত দলীয় প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় ঈদের জামাতে অংশ নেওয়াসহ দলীয় কর্মকাণ্ড, শহীদদের বাড়িতে গমনসহ নানা আয়োজনে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার যেমন তাঁর নির্বাচনী এলাকা ডুমুরিয়া-ফুলতলায় কাটিয়েছেন তেমনি খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ঈদ করেছেন কয়রা-পাইকগাছা এলাকায়।
এমনিভাবে নগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান খুলনা-৩ ও সেক্রেটারি অ্যাড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল খুলনা-২ আসনের মধ্যেই নিজের কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছেন। অন্যান্য আসনের মধ্যে খুলনা-১ এ মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ ও খুলনা-৪ এ অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম ঈদ করেছেন।