শরীয়তপুরের জাজিরায় বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচর এলাকায় সংঘর্ষ এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরা থানার উপ-পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে এ মামলা দায়ের করেছেন। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৮০০ থেকে ১০০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের অভিযানে বিলাসপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাবের একটি দল ঢাকা থেকে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারীকে আটক করেছে।
গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, এবং এসময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ১৫ জন আহত হন, যাদের মধ্যে মারুফ (২৫) নামে একজনের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর হাসান মুন্সী (৫০) নামের একজন গুরুতর আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এবং বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কুদ্দুস বেপারী এবং বিলাসপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল মাদবরের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরে এলাকায় অন্তত ৫০টিরও বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং গত দুই বছরে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে।
গত বছর ৫ আগস্টের পর পুলিশ চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও যুবলীগ নেতা জলিল মাদবরকে জেল হাজতে পাঠায়।
এতে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে ছিল। পরে কুদ্দুস বেপারী জেলখানা থেকে ছাড়া পান। এবং জলিল মাদবর এখনো জেলখানায় রয়েছে। ওই সংঘর্ষেরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে কথা কাটাকাটির জেরে কাজিয়ারচর এলাকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এবং সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল ব্যবহার করে চলে হামলা-পাল্টা হামলা। এ সময় সংঘর্ষস্থলে শতাধিক হাত বোমা বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হয়। বোমার বিকট শব্দে এলাকাবাসী আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তবে এবারের সংঘর্ষে সরাসরি অংশ নেয় কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক মৎস্যজীবীলীগ নেতা সালাউদ্দিন মাস্টার ও জলিল মাদবর গ্রুপ। সংঘর্ষের সময়ের ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিরা হেলমেট পরে বালতি থেকে ককটেল বের করে নিক্ষেপ করছে এবং বিস্ফোরণের ফলে ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। খবর পেয়ে জাজিরা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে গতকাল শনিবারের সংঘর্ষ ও ককটেল বোমা বিস্ফোরণের পর বিলাসপুরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। তখন এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে আটক করা হয়।
রবিবার সকালে জাজিরা থানার উপ-পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দুই পক্ষের সমর্থকদের আসামি করা হয়। আটক সাতজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠানো হয়েছে। র্যাবের একটি দল ঢাকা থেকে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারীকে আটক করেছে।
এ বিষয়ে জানতে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিলাসপুর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে পুলিশ উপ-পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বাদী হয়ে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এর সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও শুনেছি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এ বিস্ফোরক মামলার আসামি কুদ্দুস বেপারীকে র্যাব আটক করেছে। তবে তাকে এখনো পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। ওই মামলার এজারভুক্ত ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। আর বাকিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।