প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে হাজতে ইমাম, এলাকায় তোলপাড়

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
শেয়ার
প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে হাজতে ইমাম, এলাকায় তোলপাড়
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১৫ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে আব্দুল করিম (৪২) নামে এক মসজিদের ইমামকে হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। ধর্ষণের খবরে এলাকায় তোলপাড় চলছে।  

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজ রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ধর্ষণের খবর এলাকায় জানাজানি হওয়ার স্থানীয় কয়েকশ লোক ওই ঈমামকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে শনিবার কোর্টে চালান দেয়।

পরে আদালত তাকে হাজতে পাঠান।'

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর উত্তর পাড়া বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ঈমাম আব্দুল করিম গত ১ এপ্রিল প্রথম শান্তিপুর  গ্রামের ১৫ বছর বয়স্ক ওই শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে তার কক্ষে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযুক্ত ঈমামের বাড়ি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম ফজলু মিয়া।

তবে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও কিশোরীকে হুমকি দেন।   

এ ঘটনার দু'দিন পর আবারো ঈমামের কক্ষ ঝাড়ু দিতে গেলে দ্বিতীয় দফায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তিনি। সেসময় কিশোরী দৌড়ে পালিয়ে বাড়িতে  গিয়ে পরিবারের লোকজনকে সবকিছু জানায়। এক পর্যায়ে এ ঘটনা গ্রামে জানাজানি হলে শুক্রবার ওই ঈমামকে মারতে কয়েকশ গ্রামবাসী একত্রিত হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ওই ঈমামকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।

পরে শনিবার কিশোরীর মা ছালেহা বেগম বাদী হয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় ঈমামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরই শনিবার ঈমামকে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় গত দু'দিন ধরে নানা আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে আজ দুপুরে বলেন, 'পুলিশ যথাসময়ে ইমামকে গ্রেপ্তার না করলে উত্তেজিত জনতা তাকে মেরে ফেলতো।

ওসি আরো জানান, 'ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মসজিদের ইমাম এখন হাজতে।'
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পলাশে দুই ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা, র‌্যাবের জালে ৩ আসামি

নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদী প্রতিনিধি
শেয়ার
পলাশে দুই ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা, র‌্যাবের জালে ৩ আসামি
সংগৃহীত ছবি

নরসিংদীর পলাশে পূর্ববিরোধের জেরে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা মামলায় আত্মগোপনে থাকা পলাতক ৩ আসামিকে রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শনিবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-১১ এর সিপিএসসি নরসিংদী ক্যাম্প এবং র‌্যাব-১০ এর ফরিদপুর ইউনিটের যৌথ অভিযানে রাজবাড়ী সদর থানার শানদিআরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

রবিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১১ নরসিংদী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার উপপরিচালক মেজর সাদমান ইবনে আলম।

গ্রেপ্তারা হলেন, এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামি পলাশ উপজেলার ভাগদী এলাকার লাল মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (৪৫), ৭ নম্বর আসামি একই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে সিফাত (২০) ও অজ্ঞাতনামা আসামি আমীর আলীর ছেলে ওয়াহেদ আলী (৬০)।

র‌্যাব জানায়, এজাহারনামীয় আসামিদের সঙ্গে মামলার বাদীর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ৩১ মার্চ ভোর ৫ টায় পলাশের ঘোড়াশাল পৌরসভার ভাগদী এলাকার নিয়াজুর বাড়ির সামনে চোর সন্দেহে আসামি অজ্ঞাত একজন ব্যক্তিকে মারধর করছিল। তখন বাদীর ছেলে হাসিবুল ইসলাম রাকিব (২৫) ঘটনাস্থলে গিয়ে বলে-ওকে মারছেন কেন? অপরাধ করলে পুলিশে খবর দেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আসামিরা বাদীর ছেলেকে এলোপাতাড়ি মারধর করে জখম করে এবং হত্যার হুমকি দিলে রাকিব ভয়ে বাড়িতে চলে যায়।

 

র‌্যাব জানায়, একইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাকিব তার বাবা মো. আসাব উদ্দিন ও ছোট ভাই শাকিবসহ (২০) স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন নিয়ে তাকে মারধর করার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভাগদী এলাকায় নিয়াজুর বাড়ির সামনে পৌঁছালে এজাহারনামীয় আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন আসামি পূর্বপরিকল্পিতভাবে চাপাতি, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, হকিস্টিক, লোহার রড, ছেনিসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে রাকিব, শাকিব ও তাদের বাবা আসাব উদ্দিনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত গুরুতর জখম করে। 

এ সময় তাদের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন এবং রাকিবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। এ ঘটনায় পলাশ থানায় একটি হত্যা মামলার পর থেকে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

 

এ ঘটনায় গত শনিবার দিবাগত রাতে রাজবাড়ী সদর থানার শানদিআরা এলাকায় কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১১ নরসিংদী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার উপপরিচালক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের পলাশ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
 

মন্তব্য

চৈত্রের শেষ প্রহরে খনার মেলার উদ্বোধন কেন্দুয়ায়

আসাদুল করিম মামুন, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
আসাদুল করিম মামুন, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
শেয়ার
চৈত্রের শেষ প্রহরে খনার মেলার উদ্বোধন কেন্দুয়ায়

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্যন্ত গ্রামে খনার মেলা শুরু হয়েছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) ভোরে উপজেলা গড়াডোবা ইউনিয়নে আঙ্গারোয়া গ্রামে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এ মেলার উদ্বোধন করেন। ১৩ এপ্রিল সূর্যোদয় থেকে পরদিন ১৪ এপ্রিল সূর্যোদয় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাব্যাপী দিন-রাত চলবে এই আয়োজন। 

মঙ্গল ঘর নামের একটি সংগঠনসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান কুল এক্সপোজার এ মেলার আয়োজন করেছে।

 

বাংলা ১৪৩১-কে বিদায় জানাতে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা কবি সাহিত্যিকের উর্বর ভূমি ও ময়মনসিংহে গীতিকার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের আঙ্গারোয়া গ্রামে এই আয়োজন করা হয়েছে। 

খনার ওপর বিশেষ আলোচনাপর্বে 'জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা'  প্রতিপাদ্যের আলোকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক গবেষক পাবেল পার্থ, প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক দেলোয়ার জাহান, কবি আহমেদ নকিব, লেখক সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক বাকী বিল্লাহ, শিল্পী ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক বিথী ঘোষ, কবি আসমা বিথী, সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক আবুল কালাম আজাদ, লোক সাহিত্য গবেষক বাবু রাখাল বিশ্বাস, চর্চা সাহিত্য আড্ডার সমন্বয়ক রহমান জীবন, মঙ্গলঘর পরিসরের প্রধান সংগঠক বদনূর চৌধুরী লিপন প্রমুখ। 

মেলায় উপস্থিত থেকে প্রখ্যাত বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার, প্রবীণ কৃষক বাউল মিয়া হোসেন, বাউল শিল্পী শেফালী গায়েন, শিল্পী কফিল আহমেদসহ অনেকে গান পরিবেশন করবেন। 

এ ছাড়াও কৃষ্ণকলি ও তার দল, সংগঠন সমগীত, ব্যান্ড সহজিয়া, মুসা কলি মুকুল, নূপুর সুলতানা, মঙ্গলঘরের শিল্পী কৃষক দুদু কাঞ্চনসহ আরো অনেকেই গান পরিবেশন করবেন।

 

আয়োজনে বয়াতি পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান, লাঙ্গল, কোপিবাতি, বিন্দা, মাটির পাত্র, বাঁশের তৈরী বিভিন্ন তৈজসপত্রসহ গ্রামের ঐতিহ্যের সকল কিছু এখানে তুলে ধরা হয়। তবে মেলা বলতে সাধারণত নানা পণ্যের পসরা বোঝালেও এই মেলা সেই মধ্যে মেলা নয়। এখানে কথা-গানের ভরপুর আয়োজন চলে। আর সেই কথায় বা গানে গানে গ্রামীণ চিরায়ত চিত্র ফুটে উঠেছে।

বয়াতিরা নিজেদের ভাষায় পালা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেন এই গ্রামীণ সংস্কৃতি। খনার মেলার মূল প্রতিপাদ্যই ছিল  'জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা'। অর্থাৎ কৃষি উপজীব্যকে সামনে তুলে আনতেই এমন আয়োজন।

আর এই আয়োজনে গ্রামে বেড়াতে আসা বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি-পেশার মানুষও উপস্থিত থেকে ঈদ এবং বৈশাখের ছুটির আনন্দ উপভোগ করেছে। শুধু গ্রামের মানুষই নয় জেলা ছাড়াও ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকেই।

বিভিন্ন শিল্পীরাও পরিবেশন করেছেন স্থানীয় বাউল সাধকদের গান। এ ছাড়াও স্থানীয় বয়াতিরা পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান পরিবেশন করে। সবাই মিলে গ্রামীণ খাবার খেয়েছেন মাটির পাত্রে। পুরনো আসবাবপত্র তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মকে চিনিয়ে দিতে।

খনার মেলায় ময়মনসিংহ থেকে আসা রুবিনা আক্তার বলেন, এই যে গ্রামে এই সময়ে আনন্দ করছে মানুষ, এটাই তো হারিয়ে গিয়েছিল। এটি আবারো  জাগ্রত হলে আবার গ্রামে ফিরবে মানুষ।

এই খনার মেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিল্পকলা ও নাট্যকলা শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শুনেছি গত বছরও এ আয়োজন হয়েছিল। খনাকে নিয়ে আয়োজন এটা দ্বিতীয়বারের মতো। আমরা চাই প্রতিবছর আয়োজনটি বড় পরিসরে হোক এবং গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখুক। 

মেলা উদযাপন কমিটির উদ্দোক্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর থেকে আঙ্গারোয়া গ্রামে তারা এ মেলা শুরু করেছে। মেলার আয়োজন করতে পেরে তাদের এক দরনের নতুন অনুভূতি ও আত্মতৃপ্তির সৃষ্টি হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কবি ও সংস্কৃতিকর্মী ছাড়াও নানা শ্রেণির মানুষজন আসে।  

প্রধান আয়োজক গড়াডোবা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বদনূর চৌধুরী লিপন জানান, মঙ্গল ঘর নামে তাদের একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে যেখানে প্রতিদিন আড্ডা হয়। এ সকল আড্ডায় ভালো ভালো চিন্তা বেরিয়ে আসে। আর সেখান থেকেই এই খনার মেলার আয়োজন। এ বছর দ্বিতীয়বারে মতো এমন আয়োজনে স্থানীয় গ্রামের মানুষ আনন্দ নিচ্ছে এটাই অনেক বড়। বিশেষ করে খনার বচন এখন আর শোনাই যায় না। এগুলো নতুন প্রজন্ম শুনবে এবং ধারণ করবে। খনার বচনের সাথে প্রকৃতির সকল কিছু মিশে আছে।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

প্রতিবন্ধী মা-দুই মেয়ে, ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
প্রতিবন্ধী মা-দুই মেয়ে, ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার
ছবি: কালের কণ্ঠ

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দিন পার করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের গণোপৌত বিলপাড়া গ্রামের প্রমিলা ও তার দুই কন্যা। পরিবারের পাঁচ সদস্যের এই সংসার চলছে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে, যাদের একমাত্র আয়ের পথ ভিক্ষাবৃত্তি।

প্রমিলা নিজেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার দুই মেয়ে—অনামিকা (১০) ও সনজিতা (৮)—জন্ম থেকেই একই প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে।

স্বামী প্রশন্ন চন্দ্র রায় (৫৫) একহাত প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কর্মক্ষমতার বাইরে। টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে তিনিই ভিক্ষা করে চলেন।

সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর মিললেও নেই খাবারের নিশ্চয়তা, নেই কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস। প্রমিলা ও তার মেয়েরা প্রতিবন্ধী ভাতা এবং তার বৃদ্ধা মা জোছনা বয়স্ক ভাতা পান।

তবে এই ভাতা দিয়ে ওষুধ, খাবার কিংবা প্রয়োজনীয় খরচ চালানো সম্ভব হয় না। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসাও থেমে আছে টাকার অভাবে।

অভাবের মাঝেও প্রমিলা তার দুই কন্যাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। অনামিকা স্থানীয় বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে এবং সনজিতা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যসংকট আর দারিদ্র্যের বেড়াজাল তাদের শিক্ষাজীবন কতটা এগোতে দেবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

স্থানীয় দোকানদার ফয়েজ উদ্দিন বলেন, এই পরিবারটা খুব অসহায়। প্রশন্ন মাঝে মাঝে দোকানে এসে সাহায্য চায়, আমি যা পারি করি।

শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহিমউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রমিলাদের অবস্থা খুব করুণ। সমাজের হৃদয়বান মানুষদের এখনই পাশে দাঁড়ানো উচিত।

এলাকাবাসীরও দাবি, এই পরিবারকে বাঁচাতে শুধু সরকারি সহায়তা নয়, দরকার বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের মানবিক সহযোগিতা।

মন্তব্য

অপার সম্ভাবনা, পর্যটনে পিছিয়ে কয়রা

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা, খুলনা
ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা, খুলনা
শেয়ার
অপার সম্ভাবনা, পর্যটনে পিছিয়ে কয়রা
ছবি: কালের কণ্ঠ

খুলনার কয়রা উপজেলা সুন্দরবনের সবচেয়ে কাছাকাছি জনবসতি হওয়া সত্ত্বেও পর্যটন খাতে এখনো পিছিয়ে। অথচ এখান থেকে হিরণপয়েন্ট, শেকের টেক, কলাগাছিয়া ও বঙ্গোপসাগর খুব সহজেই দেখা যায়। রয়েছে ৯০০ বছরের প্রাচীন মসজিদকুঁড় মসজিদ, রাজা প্রতাপাদিত্যের বাড়ি, খালে খাঁর দিঘির মতো ঐতিহাসিক স্থাপনাও। তবুও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না এলাকাটি।

২০২১ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কয়রার গোলখালীতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিলেও বন বিভাগের আপত্তির কারণে কাজ শুরু হয়নি। পরে স্থান পরিবর্তন করে কেওড়াকাটায় কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু চার বছর পার হলেও কাজের গতি মন্থর। অন্যদিকে, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও খুলনার কয়রা উপজেলায় এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল আলম বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন, কিন্তু মানসম্মত হোটেল, রিসোর্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের কারণে তারা দ্রুত চলে যান।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, কয়রায় পর্যটন সুবিধা বাড়াতে নতুন ওয়াচ টাওয়ার ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সড়ক ও হোটেলের সমস্যা দূর করতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলি বিশ্বাস জানান, মসজিদকুঁড় মসজিদ ও কেওড়াকাটায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।

এটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুন্দরবনে ২ লাখ ১১ হাজার ৫৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ৬২২ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে কয়রার মতো সম্ভাবনাময় এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এই আয় কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।

সুন্দরবন-নির্ভর জেলেদের জন্য পর্যটন একটি বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে বলে মনে করেন সমাজকর্মী আশিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে বনজীবীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা সুন্দরবন সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কয়রাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এখানকার অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি বিশ্বের দরবারে সুন্দরবনের সৌন্দর্য আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ