<p>দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেহাল দশার মাঝেই আশার আলো ছিল নাটকের দর্শকপ্রিয়তা। বিগত কয়েক বছরে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপস্থিতি কমলেও ইউটিউবের কল্যানে বাংলা নাটকের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করেই যেন ছন্দপতন ঘটল। ঈদ-পার্বণ ছাড়া টেলিভিশনে এখন আর নতুন নাটক প্রচারিত হয় না। সারা বছর নাটক নির্মাণ করে থাকে ইউটিউব চ্যানেলগুলো। হঠাৎ করেই যেন নাটকের চ্যানেলগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। অভিনয়শিল্পী থেকে কলাকুশলী—সবাই বলছেন, নাটক নির্মাণ কমে গেছে। কারণ কী? জেনেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p>এ সময়ের চাহিদাসম্পন্ন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নাটক বানাতে গেলে এখন ব্যয় করতে হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। বিশেষ কোনো নাটকের ক্ষেত্রে সেই ব্যয় ছাড়িয়ে যায় ২৫ লাখও। সুলতান এন্টারটেইনমেন্ট, সিএমভি, বঙ্গ বিডি থেকে শুরু করে ক্লাব এলিভেন এন্টারটেইনমেন্ট—ছয় মাস আগেও নিয়মিত নাটক নির্মাণ করেছে চ্যানেলগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নাটক নির্মাণ করছে না বললেই চলে। মাসে বড়জোর দুটি বা তিনটি নাটক করছে তারা।</p> <p>নাটক নির্মাণে হঠাৎ এই ভাটা কেন? সিএমভির কর্ণধার শাহেদ আলী পাপ্পু জানান বেশ কিছু কারণ। “দেড় মাস আগে আমরা সর্বশেষ নাটক মুক্তি দিয়েছি—‘কাপল অব দ্য ক্যাম্পাস’। ফারহান আহমেদ জোভান ও তানজিন তিশা অভিনীত নাটকটি এত দিনে মাত্র ৮৫ লাখ ভিউ পেয়েছে! অথচ এই তারকাদের নাটক এক দিনে দুই মিলিয়ন পর্যন্ত ভিউ হয়েছে আগে। নাটকে সেই ভিউ আর নেই। সেই সঙ্গে কমেছে স্পন্সরও। আমরা একটা নাটক নির্মাণ করার আগে বিভিন্ন কম্পানির সঙ্গে বৈঠক করতাম। তারা স্পন্সরশিপে আসত। এখন সেটা কমে গেছে। আরো একটা বড় সমস্যা—ইউটিউবে অ্যাড।</p> <p>অনেকে মনে করেন, ভিউ বেশি মানে রয়্যালিটি বেশি। আসলে তা নয়। ২০ লাখ ভিউ নাটকেও অনেক সময় কোটি ভিউ নাটকের চেয়ে বেশি টাকা আসে অ্যাডের জন্য। গত তিন-চার মাসে ইউটিউবে আমরা আগের মতো অ্যাড পাচ্ছি না। যখন কম্পানি আয় করতে পারবে না তখন লগ্নি করবে কিভাবে? তবে আমরা এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছি। আশা করছি, নতুন বছরের শুরুর দিকে এসব কাটিয়ে উঠতে পারব।”</p> <p>অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের নাটক মানেই ইউটিউবে কোটি ভিউ! প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানগুলোও তাঁর শিডিউলের জন্য মুুখিয়ে থাকে। সেই ফারহানও জানালেন ব্যস্ততা কমে যাওয়ার খবর। নিজের জনপ্রিয়তা কমে গেছে বলে মনে করেন না এই অভিনেতা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউটিউব ট্রেন্ডিং—বিষয়গুলোকে মুখ্য করে দেখছেন অভিনেতা। গতকাল যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয় তখন বাসায় ছিলেন ফারহান। মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে কিছু কিছু সময় এমন পরিস্থিতি ফেস করতে হয় আমাদের। করোনার সময় তো প্রায় দুই বছর কেউ কাজই করতে পারিনি। এখন দেশে সরকার বদলেছে। মানুষ আগে পরিস্থিতি বুঝুক। তারপর না বিনোদনে মনোযোগ দেবে। আমার কিন্তু আগামী মাসে পরপর তিনটি নাটকের শুটিং আছে। হ্যাঁ, আগের মতো হয়তো বাজেট হচ্ছে না, রেগুলার নির্মাণও হচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমার মনে হয় শিগগিরই আবার নাটকে ব্যস্ততা বাড়বে।’</p> <p>বাংলাদেশের নাটকের ইউটিউব ভিউ ভারত থেকেও প্রচুর হয়। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশাতে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের দারুণ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে হঠাৎ করে এই এলাকাগুলোতে বাংলা নাটক দেখার প্রবণতা কমেছে বলে জানালেন জনপ্রিয় পরিচালক মহিদুল মহিম। তাঁর নাটক ‘নসিব’, ‘পারব না ছাড়তে তোকে’, ‘সুইট হোম’সহ বেশ কয়েকটি নাটক কোটি ভিউ পেয়েছে। সর্বশেষ তিন মাস আগে সুলতান এন্টারটেইনমেন্টে তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছে ‘বাস ট্রিপ’। এটিও দেড় কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে। সেই মহিমের আপাতত কোনো শুটিং নেই।</p> <p>এই নির্মাতা বলেন, ‘আগামী মাসে আমার দুটি নাটকের শুটিং হওয়ার কথা। আসলে ইউটিউব রেভিনিউ কমে গেছে নাটকের। সেই সঙ্গে স্পন্সরশিপটাও নেই আগের মতো। জুলাই বিপ্লবের সময় নাটকের স্পন্সররা মুভ করেছে নিউজ চ্যানেলগুলোতে। এখনো তারা সেখানেই আছেন। নাটকে আর ফেরেননি। আমার মনে হয়, যত দিন স্পন্সর পাওয়া যাবে না তত দিন এই জটিলতা থাকবেই। আমার মতো যাঁরা পরিচালক আছেন, তাঁরা কিন্তু দুই-তিন লাখ টাকায় নাটক নির্মাণ করতে পারবেন না। কারণ বড় ক্যানভাসে নির্মাণ করে অভ্যস্ত আমরা। ফলে এ সময়টা সার্বাইভ করাটা কঠিন হয়ে যাবে। দেখা যাক কী হয় সামনে!’</p>