প্রাণিসম্পদের ক্ষতি মোকাবেলায় করোনা পরিস্থিতিতে করণীয়

ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
শেয়ার
প্রাণিসম্পদের ক্ষতি মোকাবেলায় করোনা পরিস্থিতিতে করণীয়

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস আমাদের সদ্য উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষিতেও প্রভাব ফেলেছে এই অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস।

বাংলাদেশের উদীয়মান কৃষির গুরুত্বপূর্ণ সাব-সেক্টর প্রাণিসম্পদে এরই মধ্যে নীরবে ঘটে গেছে বিরাট আর্থিক ক্ষতি। 

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ (Livestock) উপখাত অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গবাদি পশুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া, যা জনসংখ্যার বৃহত্ অংশের জন্য মাংস ও দুধের প্রধান উত্স। পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জাতীয় উত্পাদনের (জিডিপির) প্রায় ১.৪৭% জোগায় প্রাণিসম্পদ উপখাত এবং এটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৩.৪৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন ও প্রজনন কর্মসূচির আওতায় জীবিকা নির্বাহ করে। (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ২০১৮-১৯) 

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়নে আমিষের ভূমিকা :
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে চাইলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়ন ও মেধা বিকাশে মাংস, ডিম ও দুধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোল্ট্রি শিল্পের মাধ্যমে আমরা সহজলভ্য ডিম এবং ব্রয়লার মাংস পেয়ে থাকি।

ডিম এ দেশের সবচেয়ে সস্তা এবং সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস। ডিম একটি সুপার ফুড। ডিমে রয়েছে মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় সব অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, মিনারেলস, ফ্যাট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন ডিম রাখতে হবে। অন্যদিকে ব্রয়লার মাংস সুস্বাদু ও সহজে হজমযোগ্য এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ব্রয়লার বা সোনালি বা দেশি—এসব মাংসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৬ রয়েছে, যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয়তার অর্ধেক পূরণ করে এবং সরাসরি লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। প্রাণিজ আমিষ না খাওয়ার ফলে শরীর জিংক, কপার ও ভিটামিন বি-৬ কম পাবে, ফলে শরীরে অ্যান্টিবডি উত্পাদন কমে গিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যাবে এবং রক্তে লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা ও নিউট্রোফিলের ফ্যাগোসাইটিক কার্য পরিচালনা করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে না। 

করোনাভাইরাসের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিশেষ কিছু করার নেই। মাংস, ডিম, দুধ আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে এবং ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই সময়ে আমাদের সবার উচিত নিয়মিত মুরগির মাংস, ডিম ও দুধ খেয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

কর্মসংস্থানে ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের গুরুত্ব :
বাংলাদেশের ডেইরি এবং পোল্ট্রি শিল্প ক্রমবিকাশমান শিল্প। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিকল্পিত কর্মপ্রক্রিয়ায় গত ১০ বছরে ধারাবাহিকভাবে ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং উত্পাদন বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। গ্রামে গ্রামে উন্নত জাতের গাভি এবং মাংস ও ডিম উত্পাদনকারী পোল্ট্রি খামার এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চোখে পড়ে। 

ব্রয়লার উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক লাখ মানুষ। নারিশ, কাজি, আফতাব, সিপি, প্রোভিটা, প্যারাগনসহ ৩০০-র ওপর কম্পানি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। যেহেতু স্বল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে ব্রয়লার পালন সম্ভব, পাশাপাশি ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই মাংস উত্পাদন করে বাজারজাত করা যায়, তাই অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ছোট-বড় অনেক উদ্যোক্তা এই শিল্পে নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করেছে।

দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য দেশে এখন হাজার হাজার ছোট-বড় ডেইরি ও গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। সেখানে কাজ করছে লাখ লাখ মানুষ। দেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এবং চামড়ার সামগ্রী তৈরির অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা রয়েছে। কয়েক হাজার লোক এসব কারখানায় কর্মরত আছে। 

আশির দশকে শুরু হয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প এখন ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০-৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। করোনা সংক্রমণের কারণে এই শিল্প আজ ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রাণিসম্পদে করোনার প্রভাব :
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের শুরুতে প্রথমেই ধাক্কা খায় ব্রয়লার মুরগি উত্পাদনকারী খাত। লকডাউনে ভোক্তা হারায় পোল্ট্রি শিল্প। ব্রয়লার পচনশীল ও সংরক্ষণ করা সহজ নয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে অতি অল্প মূল্যে এবং বড় অঙ্কের ক্ষতিতে বিক্রি করতে বাধ্য হয় খামারিরা। আর এই সময় ব্রয়লার খামারিরা প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করে স্থানভেদে মাত্র ৮০-৯০ টাকায়। মাত্র কিছুদিন আগেও খামারি পর্যায়ে ১৮০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে এখন ১৪০ টাকায়।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) দেওয়া তথ্য মতে, লকডাউনের শুরু থেকে শুধু ২১ দিনেই পোল্ট্রি শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সংগঠনটির দেওয়া তথ্য মতে, ওই কদিনে বাচ্চা উত্পাদন খাতে ক্ষতি ২৭১ কোটি টাকা, খাদ্য উত্পাদন খাতে ক্ষতি ১১১ কোটি টাকা, ব্রয়লার ও ডিমে ক্ষতি ৮৬৮ কোটি টাকা, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে ক্ষতি পাঁচ কোটি এবং ওষুধ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।

বাজারে ডিমের দামও অনেক কমে গেছে। একটি ডিম, যার উত্পাদন খরচ পড়ে ৫.৫০ টাকা, তা খামারিরা বিক্রি করছে চার-পাঁচ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় চার কোটি ডিম উত্পাদিত হয়, ফলে খামারিরা দিনে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এক দিনের বাচ্চা উত্পাদনকারী হ্যাচারি বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে তা ধ্বংস করছে।

উৎপাদিত খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে ডেইরি খামারিদের উত্পাদিত দুধ। গ্রামে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়, যা ন্যূনতম বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। 

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সামনে আসছে ঈদুল আজহা। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় ৬০ লাখ গরু, মহিষ কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য হূষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। দেশের করোনার এই সংকটকালে হূষ্টপুষ্ট করা প্রায় এক কোটি ২০ লাখের বেশি গবাদি পশুর ৫০ শতাংশ বিক্রি করা যাবে কি না বা উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারবে কি না তা নিয়ে খামারিদের মধ্যে ভয় ও হতাশা কাজ করছে। 

অন্যদিকে করোনার কারণে পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ থাকা এবং মিলগুলোতে খাদ্য উত্পাদন কমে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ফিড মিলগুলো উত্পাদিত ফিড বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনা দুর্যোগের আগেও ৩৭ কেজি গমের ভুসির দাম ছিল এক হাজার ১০০ টাকা, যা বর্তমানে খামারিদের কিনতে হচ্ছে ১৪শ টাকায়। এ পরিস্থিতিতে খামারিরা গবাদি পশুর খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। 
বিভিন্ন মিডিয়ায় হাঁস, মুরগি, বিভিন্ন পোষা প্রাণী থেকে করোনা ছড়াতে পারে বলে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সারা দুনিয়ায় কোথাও হাঁস, মুরগি বা অন্য কোনো পোষা প্রাণী থেকে করোনা ছড়িয়েছে এমন কোনো রেকর্ড নেই। আর এটাও হচ্ছে পোল্ট্রি, ডেইরি সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এরই মধ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে খামারিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্রয়লার মুরগি, ডিম, দুধ খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে খামারিরা কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে। 

খাদ্য নিরাপত্তায় করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় : 
করোনাভাইরাসের কারণে সামনে আসছে অর্থনৈতিক মহাদুর্যোগ, যাতে প্রথম আঘাত আসবে খাদ্য নিরাপত্তায়। সরকার যেমন একা পারবে না এটি মোকাবেলা করতে, তেমনি বেসরকারি খাতও এ যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না সরকারের সহায়তা ছাড়া। তাই এখনই সময় কৌশল নির্ধারণের, যাতে এই খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। 

করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো :

১. দেশের গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খামারিদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের প্রতিটি খামারের বিপরীতে সরকারিভাবে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। 
২. করোনার এই সংকটময় সময়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থেকে গবাদি পশুর চিকিত্সা, খামারিদের পণ্য বাজারজাতকরণ ও কৃত্রিম প্রজননের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। 
৩. পশুর খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য কৃষকদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য ভর্তুকি প্রদান। ৪. পশু-পাখিজাত পণ্যসামগ্রীর সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ সুবিধা প্রদান। ৫. প্রাণিসম্পদের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করা। 
৬. গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন কৃষক ও গ্রামীণ মহিলাদের জন্য গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ। প্রান্তিক খামারিদের জন্য এ লক্ষ্যে বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। 
৭. প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় কৃষক, খামারিদের উত্পাদিত প্রাণিজ পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করার জন্য বিপণন বিভাগ চালু করা দরকার। 
৮. দেশের প্রাণিজ খাতের অনুকূলে বিদ্যমান ব্যাংকঋণের সুদহার পুনর্বিন্যাস করা এবং খামারিদের জন্য অত্যন্ত স্বল্প সুদহার নির্ধারণ করা। 
৯. কভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক খামারিদের সরকার কর্তৃক প্রণোদনা প্রদান এবং তা খামারিদের তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করা। 
১০. প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 
১১. ভোক্তা পর্যায়ে তথা জনমনে ভ্রান্ত ধারণা নিরসনকল্পে প্রাণিজ আমিষের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে সরকারি পর্যায়ে প্রচারণা বাড়ানো। 

দুধ, মাংস ও ডিমের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশীয় বিকাশমান পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মাংস, ডিম, দুধের জোগান দিতে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৬০-৭০ লাখ মানুষ জড়িত। করোনার প্রাদুর্ভাবে তারা কোনো কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই সেক্টরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায় থেকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে সরকারের আর্থিক এবং অন্যান্য প্রণোদনার প্রয়োজন অনেক বেশি। বিভিন্ন পণ্যের শুল্কমুক্তি, ব্যাংকঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য চাপ অন্তত ছয় মাসের জন্য স্থগিত, বিগত ছয় মাসের ঋণ মওকুফ, স্বল্পসুদে নতুন ঋণ প্রদান জরুরি। প্রাণিসম্পদ উপখাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি। অতএব, এ উপখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে আয়, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অসমতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাতে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়ে যাবে, তাদের পুষ্টিহীনতা হ্রাস পাবে এবং আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্য কমে আসবে। তাতে খাদ্য নিরাপত্তাসহ দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য সফল হবে।

লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রাণিসম্পদ বিভাগ) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল

মন্তব্য

১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন
সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে পুনর্জীবিত করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকৃতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কলোসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে এবং একটি স্ত্রী শাবক ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম নিবে।

নেকড়ে শাবক দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে রোমিউলাস ও রেমিউস।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ হাজার বছর পূর্বের ডায়ার উলফের পুরোনো একটি দাঁত ও ৭২ হাজার বছর আগের একই প্রাণীর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে এ প্রজাতির নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বর্তমানে এই তিনটি শাবক গোপন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।

যেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া, ড্রোন, নিরাপত্তাকর্মী ও লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফের পুনর্জন্ম নিয়ে তাদের কাজ এখন পর্যন্ত গোপন ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাদের মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট করা। যদিও কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ভবিষ্যতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো প্রাণী ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

সূত্র : সি এন এন

মন্তব্য

সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’
সংগৃহীত ছবি

‘আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি, কামরাঙা পাটি নারে’—পল্লি কবি জসীম উদ্দিন তাঁর নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন।

শীতল পাটি বাংলা সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ এই শীতল পাটি। বাংলাদেশের শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আগেকার দিনে গরমের সময়ে যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন হাত পাখা যেমন ব্যবহৃত হতো তেমনি শীতল পাটিও ছিল ঘরে ঘরে। কাঁথা বা তোশকের উপরে এই পাটি বিছিয়ে দেয়া হতো এবং এতে গা এলিয়ে দিলে হৃদয় মন সব শীতল হয়ে যেতো বলেই এর নাম শীতল পাটি। এই শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা এবং এটি একটি নল খাগরা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ জঙ্গলে, ঝোঁপে ঝাড়ে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা- আপনি জন্মায়।

এই গাছ থেকে এর বাকল পাতলা করে কেটে সংরক্ষণ করে বোনা হয় শীতল পাটি। 

শীতল পাটি বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা হয়। বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে কখনো ফুল, পাখি, লতাপাতা কখনো বা জ্যামিতিক আকৃতি আবার মসজিদ, মন্দিরের আকৃতিতেও বোনা হয়। কখনো বা রং ছাড়াও বোনা হয়।

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের কাজ করে থাকেন কারিগরেরা। নারী-পুরুষ একসাথে এ কাজ করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে নারীরাই শীতল পাটি বোনার কাজ করেন।

অতীতে জমিদার বাড়ি, সরকারি অফিস-আদালতে শীতল পাটির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে শীতল পাটির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কমে গেছে।

কিন্তু শৌখিন মানুষের ঘরে এখনো শীতল পাটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাজসজ্জার উপকরণ, সুকেস, ব্যাগ, চশমার খাপ ইত্যাদিতে শীতল পাটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট ও ঝালকাঠি অঞ্চলে এখনো শীতলপাটি তৈরি হয়। তবে সব থেকে উন্নত ও উৎকৃষ্ট মানের শীতল পাটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে শীতল পাটি উৎপাদন কম হওয়ার কারণ কারিগরেরা ন্যায্য মূল্য পায়না বলে অন্য পেশার সাথে তারা জড়িত হচ্ছে। যদি সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কারিগরদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় তবে আমাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : বিলকিস নাহার মিতু
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি
ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ। তিনি  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের উপপ্রধান।

রেল উপদেষ্টাকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পেরিয়েছে ৫৪ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও দেশের প্রতিটি বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও যখন দেশে মেট্রোরেল, হাই-স্পিড ট্রেন, উন্নত স্টেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখনও রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।

 ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে কিছু সামান্য স্থানে ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনই কেবল যথেষ্ট, যেমন- আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সংযোগ রেলপথে আপগ্রেড, এই রেলপথ চালু হলে রাজশাহী অঞ্চল তথা উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহর, কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল, মৎস্য ও আম রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনা।

কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার খোলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও সরাসরি রেল যোগাযোগ।

বর্তমানে রাজশাহী হতে চট্টগ্রামগামী যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করতে হলে একাধিক বার ট্রেন বদল, সময় অপচয় এবং বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ অনুৎসাহিত হন। আর এই বাধাগুলো দূর করতে হলে প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন।

তিনি আরো লিখেছেন, মাননীয় উপদেষ্টা, রেল যোগাযোগ শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি অঞ্চলের জীবনরেখা। এটি যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমায়, তেমনি পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও প্রশংসিত। রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিভাগকে একই সুঁতোয় গাঁথা সম্ভব।

আমরা চাই, আপনি এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করবেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি কার্যকর, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা কেবল একটি বিভাগের চাওয়া নয়—এটা দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

"রেল সংযোগ মানে অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রগতির সংযোগ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা, রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনগণ, আপনার সদয় দৃষ্টি ও ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করছি।

মন্তব্য

পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য
সংগৃহীত ছবি

অনেকেই রহস্যময় ও গা ছমছম করা জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। যা চলতি ভাষায় গোস্ট হান্টিং নামে পরিচিত। এমন স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, তা রোমাঞ্চকর। পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট এমনই একটি রহস্যময় স্থান।

পোল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে, পশ্চিম পোমেরানিয়ার গ্রিফিনো শহরের কাছে নোভা জার্নোভো গ্রামে অবস্থিত এই ক্রুকেড ফরেস্ট। দেখতে খুব সুন্দর এই অরণ্যটির প্রধান আকর্ষণ এর অদ্ভুত আকৃতির পাইনগাছ। প্রায় ৪০০টি গাছের মধ্যে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো এবং তারপর ওপরের দিকে সোজা হয়ে উঠেছে। এসব গাছের এই বিশেষ আকৃতিই তৈরি করেছে নানা রহস্য, যা পর্যটকদের প্রতিবছর আকর্ষণ করে।

ক্রুকেড ফরেস্টের এই গাছগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতির কারণ আজও অজানা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কোনোটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। কথিত রয়েছে যে ১৯৩০ সালে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা বিশেষ উদ্দেশ্যে গাছগুলোকে বাঁকিয়েছিলেন। হয়তো নৌকা বা আসবাবপত্র তৈরি করতে।

তবে এর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা হলেও গাছগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য এটিকে পোল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত করেছে।

সূত্র : অল দ্যাটস ইন্টারেস্টিং

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ