<p>আখিরাতে তারাই সফল, যাদের অন্তর পরিশুদ্ধ। পরিশুদ্ধ হৃদয়ের ভাগ্যবান ব্যক্তিরাই পরকালে আলোকিত জীবনের অধিকারী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আলোকিত তথা পরিশুদ্ধ অন্তরের সফলতার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোনো উপকারে আসবে না; কিন্তু যে আলোকিত ও পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)।</p> <p>প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-ও আলোকিত জীবনের জন্য সর্বদা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন। সহিহ বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি নামাজ আদায় করে এই দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার অন্তরে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে-বাঁমে, আমার ওপর-নিচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নুর তথা আলো দান করুন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩১৬)</p> <p><strong>এক. আমলের সঙ্গে দীর্ঘ বয়স</strong> : উত্তম আমলের সঙ্গে দীর্ঘ বয়স পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এটা যেমনিভাবে পরকালে ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদাকে উঁচু করে, তেমনি দুনিয়ায়ও সবার শ্রদ্ধা ও মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার পথে যে লোক তার চুল সাদা করেছে, অর্থাৎ বুড়ো হয়েছে, তার জন্য কিয়ামতের দিন একটি আলোকবর্তিকা থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৫)</p> <p><strong>দুই. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা </strong>: শুধু আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসা এটা মুমিনের প্রশংসনীয় ও ঈর্ষান্বিত একটি গুণ। খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যাঁরা নবী নন এবং শহীদও নন। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের মর্যাদার কারণে নাবীগণ ও শহিদগণ তাঁদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবিগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের অবহিত করুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ওই সব লোক যারা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসে, অথচ তারা পরস্পর আত্মীয়ও নয় এবং পরস্পরকে সম্পদও দেয়নি। আল্লাহর শপথ! তাদের মুখমণ্ডল যেন নূর এবং তারা নূরের আসনে উপবেশন করবে। তারা ভীত হবে না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, যার অর্থ ‘জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫২৭)</p> <p><strong>তিন. অন্ধকারে মসজিদে গমন</strong> : দুনিয়াতে মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ। মুমিনের জন্য এটি আত্মিক প্রশান্তি লাভ, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও অন্তর আলোকিত করার সর্বোত্তম জায়গা। সাহাবি বুরায়দাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যারা অন্ধকার রাতে মসজিদে যাতায়াত করে তাদের কিয়ামতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬১)</p> <p><strong>চার. পবিত্র কোরআন শেখা-শেখানো</strong> : আখিরাতে আল্লাহর প্রিয় ও আলোকিত ব্যক্তি হওয়ার অন্যতম একটি উপায়, কোরআন মাজিদ শেখা-শেখানো। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ শিখবে এবং শেখাবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন একটি নূরের টুপি পরিধান করাবেন, যার আলো সূর্যের আলোর ন্যায় হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২১২৮)</p> <p><strong>পাঁচ. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় </strong>: প্রতিদিনের নির্দিষ্ট একটি আমল হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা। যারা এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে পরকালে তাদের আলোকিত জীবনের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক অংশ। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দেবে। ‘নামাজ’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। ‘সদকা’ হচ্ছে দলিল। ‘ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘কোরআনুল কারিম’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। বস্তুত সব মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর আজাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে। (মুসলিম, হাদিস : ৪২২)</p> <p><strong>ছয়. উত্তমরূপে অজু করা </strong>: নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে অজু করতে দেখলেন। অজু করতে তিনি মুখমণ্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে অজু করার পর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত অজুর প্রভাবে কেয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা যেন অধিক বিস্তৃত দীপ্তিসহ উঠার চেষ্টা করে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৮)</p> <p><strong>সাত. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ </strong>: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন জিবরাইল (আ.) নবী (সা.)-এর কাছে বসে ছিলেন। সে সময় তিনি ওপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হলো— এর আগে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বলেন, আপনি আপনাকে দেওয়া দুটি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোনো নবীকে তা দেওয়া হয়নি। আর ওই দুটি নূর হলো ফাতিহাতুল কিতাব বা সুরা বাকারার শেষাংশ। এর যেকোনো হরফ আপনি পড়বেন, তার মধ্যকার পার্থিব বিষয় আপনাকে দেওয়া হবে।  (মুসলিম, হাদিস : ১৭৬২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, কেউ যদি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০০৯)</p> <p><strong>আট. জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা</strong> : সুরা কাহাফ পবিত্র কোরআনের একটি ফজিলতপূর্ণ সুরা। যে ব্যক্তি জুমার দিন ফজিলতপূর্ণ এই সুরাটি পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে জ্যোতির্ময় আলো। বিখ্যাত সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩৩৯২)। মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া-আখিরাতে আলোকিত জীবন দান করুন।</p>