<p>বৃষ্টি আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের নিদর্শন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে বৃষ্টির উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বৃষ্টি এলে মানুষের মন প্রফুল্ল হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতিতে প্রকাশ পায় স্বস্তির ছাপ। বৃষ্টির সময় মুমিনের কিছু করণীয় আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে একজন মুমিন মহান আল্লাহর এই বিশেষ নেয়ামতকে যেমন উপভোগ করতে পারবে, তেমনি এই সময়টুকু তার ইবাদতে শামিল হবে। নিচে বৃষ্টির দিনে রাসুল (সাঃ)-এর কিছু আমল তুলে ধরা হলো—</p> <p> </p> <p><strong>এক. আল্লাহর রহমত কামনা করা : </strong>বৃষ্টি একদিকে যেমন রহমতের, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আজাবেরও হতে পারে। এ কারণে রাসুল (সাঃ) বৃষ্টি দেখলেই মহান আল্লাহর দরবারে উপকারী বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন বৃষ্টি হতো তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সয়্যিবান নাফিআহ’, (অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান এবং উপকারী করে দাও)। (নাসায়ি, হাদিস : ১৫২৩)</p> <p> </p> <p><strong>দুই. ঝোড়ো হাওয়া বইলে আল্লাহকে ভয় করা : </strong>রাসুল (সা.) কখনো দমকা হাওয়া ও মেঘের ঘনঘটা দেখলে তাঁর চেহারায় আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠত এবং তিনি আগে-পেছনে উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। এরপর যখন বৃষ্টি হতো খুশি হয়ে যেতেন, আর তাঁর থেকে এ অস্থিরতা দূর হয়ে যেত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা হয় যে, আমার উম্মতের ওপর কোনো ‘আজাব’ এসে পতিত হয় নাকি। তিনি বৃষ্টি দেখলে বলতেন, ‘রহমাতান’ এটা (আল্লাহর) রহমত। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৯)</p> <p>তাই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে আমরাও ‘রহমাতান’ বলে রাসুল (সা.)-এর এই সুন্নতটি আদায় করতে পারি। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) আকাশের প্রান্তে মেঘ উঠতে দেখলে যাবতীয় (নফল) ইবাদত ছেড়ে দিতেন, এমনকি তিনি নামাজে থাকলেও। অতঃপর তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ যদি বর্ষা হতো তাহলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! বরকতপূর্ণ ও সুমিষ্ট পানি দান করুন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৯)</p> <p> </p> <p><strong>তিন. অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে দোয়া : </strong>অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে আল্লাহর কাছে অতিবৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) একবার অতিবৃষ্টিতে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’ অর্থ—হে আল্লাহ! তুমি বৃষ্টি আমাদের আশপাশে বর্ষণ করো, আমাদের ওপরে নয়। (নাসায়ি, হাদিস : ১৫২৭)</p> <p>উল্লেখ্য, এখানে এটি উদ্দেশ্য নয় যে আমাদের পাশের এলাকা ডুবিয়ে দাও, বরং উদ্দেশ্য হলো, জনবসতিহীন কোথাও বৃষ্টি সরিয়ে নাও।</p> <p> </p> <p><strong>চার. বৃষ্টি শেষে দোয়া পড়া : </strong>বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো—‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ’। এর অর্থ হলো, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৩৮)</p> <p>কারণ মক্কার কাফেররা ভাবত আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র আমাদের বৃষ্টি দেয়। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। রাসুল (সা.) বৃষ্টি শেষে এই দোয়া পড়ে এ কথার সাক্ষ্য দিতেন যে মহান আল্লাহই আমাদের বৃষ্টি দেন।</p> <p> </p> <p><strong>পাঁচ. বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা : </strong>হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় বৃষ্টি নামল। তখন রাসুল (সা.) তাঁর শরীরের কিছু অংশ থেকে কাপড় তুলে নেন। ফলে তাতে বৃষ্টির পানি পৌঁছে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, কেননা এটা মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসার সময় খুবই অল্প। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৮)</p> <p> </p> <p><strong>ছয়. বৃষ্টির সময় দোয়া করা : </strong>কেননা বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, বৃষ্টির সময়ের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪০)</p> <p> </p>