রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় নিজ বাসায় খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য উমামা বেগম কণক (৪০)। এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস, ৭৪৩ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিজ বাসায় খুন হলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী, স্বামীকেই সন্দেহ
অনলাইন ডেস্ক

রুমা বেগম নামে নিহতের এক আত্মীয় বলেন, রাতে আমরা কণককে বাসার রুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।
নিহতের বড় বোন রুমা আক্তার জানান, কণকের স্বামী ওমর ফারুক দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে হাসপাতাল এসেছি। ঘটনা বিস্তারিত জানার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
কণকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক শোক বিবৃতিতে তিনি মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় ৭২ জন গ্রেপ্তার : প্রেস সচিব
অনলাইন ডেস্ক

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে গত সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ চলাকালে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রেস সচিব জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সোমবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় সহিংসতা, দোকানে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের পরিপন্থী। এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। আরো তদন্ত চলমান রয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে পুলিশ সদরদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে- খুলনায় ৩৩ জন, সিলেটে ১৯ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, গাজীপুরে ৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৪ জন, কুমিল্লায় ৩ জন এবং কক্সবাজারে ৪ জন। এসব ঘটনা সংক্রান্তে এখন পর্যন্ত মোট ৯টি মামলা রুজু হয়েছে।

২ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ
অনলাইন ডেস্ক

দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েই চলেছে। হত্যা ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। ২০২৪ সালে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ছিল ২৩৭টি।
আইন বিশেজ্ঞরা বলছেন, কিশোর অপরাধ ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও ছিল। তবে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি নজরে আসার বিষয়টি খুব বেশি দিনের নয়।
সরকারি তথ্য ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন বলছে, মাদক সেবন, চুরি ও ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে সমাজের বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশু-কিশোর।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ জার্নালে প্রকাশিত ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে।
২০২৩ সালে জার্নাল অব এমার্জিং টেকনোলজিস অ্যান্ড ইনোভেশন রিসার্চে (জেইটিআইআর) প্রকাশিত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের ‘স্টাডি অব চিলড্রেন ক্রাইমস এট আরবান এরিয়াজ ইন বাংলাদেশ’ গবেষণায় বলা হয়, অপরাধে শিশুদের সম্পৃক্ততা বর্তমান সময়ে সত্যিই উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মুষ্ঠিমেয়দের কর্মকাণ্ডে সমাজ আক্রান্ত হচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে শিশুদের ৭৫ শতাংশই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্তি, মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, আগ্নেয়াস্ত্র বহন, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশু। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো দরিদ্রতা ও শিক্ষার অভাব। অধিকাংশ শিশু ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সে অপরাধে যুক্ত হয়। যেসব অপরাধের জন্য শাস্তি অনিবার্য, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তাদের উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো ছাড়া বড় কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। কিশোর অপরাধের ধরন ও পর্যায় বিবেবেচনায় একটি দেশের আইনের শাসনের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, মাদক ব্যবসার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অধিকাংশ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাংগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা, বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। তবে এসব অপরাধের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি দখল, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি বিভিন্ন থানায় মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের পৃথক তালিকায় এমন অনেক কিশোর অপরাধীর নাম উঠে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লবী থানায় মাদক বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর পৃথক তালিকায় অন্তত দুই ডজন কিশোর অপরাধীর নাম ওঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়া বাঁধ ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মুসা (২১)। সে নিজে আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার থেকে মাদক এনে ব্যবসা করে। কিশোর অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী সরদার সামিউল ইসলাম সামি (২০) ও অনিক ওরফে নাইক্কা অনিক (২২)। তারা প্রত্যেকেই এক থেকে একাধিক মামলার আসামি। এ ছাড়া অস্ত্রধারী কিশোর অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম মো. অনিক ইসলাম (২১)। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আট মামলা ও একটির ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আশিকুল ইসলাম শান্ত (১৯)।
এশিয়ান জার্নাল অব সোশিয়লজিক্যাল রিসার্চে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘প্রসেস অব ক্রিমিনালাইজিং স্ট্রিট চিল্ড্রেন ইন বাংলাদেশ; এন এমপায়রিকাল স্টাডি ইন দ্য সিটি অব ঢাকা’ গবেষণায় বলা হয়, অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুদের ৯০.৫ শতাংশই মাদক ব্যবসা এবং ৩০.১ শতাংশ হত্যার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ছিনতাইয়ে জড়িত ৬৬ শতাংশ ও চুরির সঙ্গে জড়িত শতভাগ শিশু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ কিশোররা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আসবে না। এ ছাড়া অপরাধী চক্রও তাদের ব্যবহার করে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার বা উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠালেই সব সমাধান হবে না। এ জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। রাতারাতি এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব না।

ঢাকার সঙ্গে প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা বাড়াতে চায় মস্কো
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষ দুই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য পারস্পরিক সংকল্প ব্যক্ত করেছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ দিয়ে ঢাকার রুশ দূতাবাস এসব জানায়।
রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার ফোমিনের সঙ্গে মস্কোতে একটি কার্যকর বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। রাশিয়া ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য পারস্পরিক সংকল্প ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকটি উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

আন্দোলন নয়, জনগণ চায় নির্বাচন

নির্বাচন না আন্দোলন, এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে নানা আলোচনা, হিসাবনিকাশ। নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা এতে সন্তুষ্ট নয়।
বিএনপির রাজনীতির অন্যতম দর্শন হলো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এখন আন্দোলনের আগে বিএনপিকে দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এক কঠিন সময় পার করছে। এ কঠিন সময়ে বিএনপির আন্দোলন গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে অনভিপ্রেত একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল নয়। ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগসহ পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় রাজপথে আন্দোলনের সূচনা হলে পতিত স্বৈরাচার পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তারা রাজনীতির মাঠে আবার অনুপ্রবেশ করবে এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে। এ বাস্তবতাটা বিএনপিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এর ফলে গণ অভ্যুত্থানের যে চেতনা এবং আকাঙ্ক্ষা তা ব্যাহত হতে বাধ্য। দেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্য। এ ঐক্যে ফাটল ধরুক এমন কোনো কর্মসূচি বিএনপির মতো সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল নেবে না, এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। পুলিশ বাহিনী এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। বিভিন্ন স্থানে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই কিছুটা কমলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আর বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম অনভিপ্রেত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এ রকম পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী দিনরাত একাকার করে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারপর মব, লুটপাটও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বাড়ছে খুন, ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ। এ রকম একটি ভঙ্গুর সময় বিএনপির মতো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল যদি আন্দোলনে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। এটি কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল করতে পারে না বলেই জনগণ বিশ্বাস করে।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পোশাক খাতের বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি পাচ্ছে। কেউ কেউ কার্যাদেশ স্থগিত করছে। এ বাড়তি শুল্ক সামাল দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। এতে পোশাক খাতে একটা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমনিতেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শ্রমিক ঈদে বেতন-বোনাস পাননি। পোশাক খাত যখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন মার্কিন এ শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের হুমকি। তা ছাড়া সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্রটাও ভালো না। আমাদের অর্থনীতিতে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন প্রবাসী ভাইবোনেরা, যারা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি মোটামুটি একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রেখেছেন। কিন্তু আমরা সবাই জানি, শুধু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়ে একটি দেশের অর্থনীতি সচল এবং ভালো থাকতে পারে না। এ কারণে আমাদের রপ্তানি আয় যেমন বাড়াতে হবে, তেমন দেশি শিল্প উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি খাত সচল করতে হবে। কিন্তু বেসরকারি খাত এখন পর্যন্ত সচল হয়নি। সরকার তাদের আস্থায় নিয়ে আসতে পারেনি। অনেক বেসরকারি উদ্যোক্তা নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা জটিলতার কারণে কেউ কেউ ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন না। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো ধুঁকছে। অর্থনীতির গতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এ সময় আইএমএফের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। তারা বাংলাদেশের জন্য যে ঋণ বরাদ্দ করেছিল তার কিস্তি ছাড় দেবে কি না তা নিয়ে এখন সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণখেলাপি কমিয়ে আনা এবং কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। আইএমএফের ঋণ পেতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে যেতে হতে পারে। এ ধরনের সংস্কার অর্থনীতির ওপর সাময়িকভাবে হলেও একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে কারও কারও শঙ্কা। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের কিছুটা লাগাম টেনে ধরলেও চালের দাম নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়তির দিকে। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোয় অর্থনীতির গতিপথ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে এগোচ্ছে। শিল্পকারখানাগুলোয় বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহের স্বাভাবিকতা নিয়েও সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে।
আন্তর্জাতিক পরিম লেও বাংলাদেশ এখন একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো নতুন করে কথা বলা শুরু করেছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করা হয়েছে বটে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিম লে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে একটি মনগড়া অপপ্রচার এখনো সচল। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদীদের আস্ফালন লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তির সামনে দাঁড় করানোর চেষ্টা দৃশ্যমান। বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানকে বদলে কেউ কেউ এটিকে জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরাজিত ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি নতুন করে আন্দোলন করে তাহলে একদিকে যেমন হিযবুত তাহ্রীরের মতো উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নতুন করে ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপির আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের সব অর্জন নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির আন্দোলনের ফলে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় সেটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিম লে একটা নতুন চাপের মধ্যে ফেলবে বলে অনেকে মনে করেন। এ বাস্তবতায় বিএনপি যা-ই করুক না কেন, তাদের দেশের কথা চিন্তা করতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বিএনপির দায়িত্বই এখন সবচেয়ে বেশি। গত আট মাসে বিএনপি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তারা সরকারের সঙ্গে একদিকে যেমন আলাপ-আলোচনা করছে, অন্যদিকে বিরুদ্ধমতের সঙ্গে যুক্তিভিত্তিক বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে। আর সে কারণেই বিএনপির ধৈর্যহারা হলে চলবে না। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ ১৭ বছর তারা ধৈর্য ধরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের এ রকম কোনো মনোভাব দেখা যায়নি যে, তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকতে চায় বা এ রকম কোনো অভিপ্রায় আছে, বরং প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সবাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়ার কথা বলছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু বাংলাদেশই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কাজেই তাঁর ওপর আস্থা রাখতেই হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থাশীল থাকার কথা বলেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার ওপর যদি বিএনপি আস্থা হারায় এবং রাজপথে আন্দোলন করে সেটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য হবে এক ধরনের অশনিসংকেত। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ যেমন ব্যাহত হবে, তেমন বাংলাদেশ পথ হারাবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিশ্চয় এ রকম কোনো কিছু করবে না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।