পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে এখন সাড়ে ৩৩ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় চীন ও ভারতে।
পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে এখন সাড়ে ৩৩ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় চীন ও ভারতে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পেঁয়াজের ক্রমবর্ধমান ভোগ, উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান, ভালোমানের বীজের অভাবসহ কয়েকটি কারণে চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকছে। তাঁদের মতে, শুধু উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান কমিয়ে আনতে পারলে এবং উৎপাদনের পরিমাণ আরেকটু বাড়াতে পারলে কয়েক বছরেই পেঁয়াজে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কৃষক যাতে দাম ভালো পান, সে জন্য উৎপাদন মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। দেখা গেছে, ভালো দাম পেয়ে কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হওয়ায় গত অর্থবছরে এক লাফে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছিল আট লাখ টন।
এর পাশাপাশি উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান কমাতে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। অনাবাদি ও চরের জমি পেঁয়াজ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের (বগুড়া) পরিচালক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাজহারুল আনোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের মূল ঘাটতি হয় উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান ও অবচয়ের কারণে। কয়েক ভাবে এই লোকসান হয়। সবচেয়ে বেশি হয় সময়ের ব্যবধানে পেঁয়াজের পানি শুকিয়ে। এ ছাড়া সংরক্ষণ পদ্ধতি সঠিক না হলে কিছু পেঁয়াজ পচে যায়।
মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘কৃষকদের সচেতন করতে পারলে উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান সর্বোচ্চ ২০ শতংশে নামিয়ে আনা যায়। তবে লোকসান হিসাব করেই আমরা চাহিদা অনুসারে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভালো দাম পেলে কয়েক বছরের মধ্যেই তা সফল হবে। ’
চাহিদা ও উৎপাদন
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। চলতি ২০২১-২২ সালের জন্য চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন। আগামী বছর এই চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৩৬ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের ওপরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৩.৬২ লাখ টন। তাদের হিসাবে, পেঁয়াজের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২৫-৩০ শতাংশ। সে হিসাবে নিট উৎপাদন প্রায় ২৩.৫৩ লাখ টন। রান্নার সময় ফেলে দেওয়া অংশ ও নানাভাবে হওয়া অপচয় বাদ দিলে দেশে নিট চাহিদা ২৬ লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন।
২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পেঁয়াজ চাষের জমির পরিমাণ ৪১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১-১২ সালে দেশে ১.৮০ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। সর্বশেষ গত অর্থবছর দেশে ২.৫৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন কৃষকরা।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটাতে গড়ে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো। এর ৯০ শতাংশই আসত ভারত থেকে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। ওই বছরের নভেম্বর নাগাদ পেঁয়াজের দাম ২৮০ টাকায় ওঠে। বাজার সামাল দিতে তাত্ক্ষণিকভাবে আকাশপথে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে হয় সরকারকে।
পরের বছর দাম কমলেও ৭০ টাকার নিচে নামেনি খুচরা বাজারে। এই বাড়তি দামের কিছুটা দেশের কৃষকরাও পান। গত দুই বছর কৃষক কেজিতে ৫০ টাকা দাম পেয়েছেন বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে। তাদের হিসাবে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ টাকা। তাই ২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কৃষকের লাভ থাকে।
ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে
দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন ভাসমান বেডে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে ২২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। পেঁয়াজের আকারও বড় হয়। ক্ষেতের পেঁয়াজের তুলনায় বেডে হেক্টরপ্রতি ছয় টন বেশি ফলন হয়। তাই ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষাবাদে ঝুঁকছেন অনেক চাষি।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষা শেষে নভেম্বরে পানি নামতে শুরু করলে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজের পরিবর্তে চারা রোপণ করতে হয়। ৮০ থেকে ৮৫ দিনে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা যায়। এ পদ্ধতি সারা দেশের জলাবদ্ধ এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে।
তবু আমদানি
দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। এর পরও বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছে। কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে আট থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। কিন্তু গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন। তার আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৫.৭১ টন।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত অর্থবছর মোট ১২ লাখ ৯৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে দেশে। ২০১৯-২০ সালে হয়েছিল ১১ লাখ ৭৬ হাজার টন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বছরে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে। আর মালয়েশিয়া করে ৫.০৫ লাখ টন এবং যুক্তরাজ্য করে ৩.৫৯ লাখ টন। সে হিসাবে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিতে এখন শীর্ষ দেশ।
পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে মৌসুমে ছয় মাস আমদানি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, মৌসুমে মার্চ-মে পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখছে সরকার। এতে পেঁয়াজের ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষক। তবে যে হারে উৎপাদন বাড়ছে তাতে পেঁয়াজ আমদানি ছয় মাস বন্ধ রাখা উচিত। অন্যথায় কৃষক দাম পাবেন না।
শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, ‘হিসাব করে দেখেছি, কৃষক যদি ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন তাহলে তাঁরা লাভবান হবেন। কিন্তু মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম অনেক জায়গায় কেজি ২২ টাকায় নেমেছিল। এটা সমস্যা। ’
রোডম্যাপ
২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। ২০২১-২৩ সালের এই রোডম্যাপে পেঁয়াজ ঘাটতি ১১ লাখ টন ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করে। তাতে পেঁয়াজ ঘাটতির জন্য মানসম্মত বীজের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে মোট এক হাজার ১০০ টন বীজের প্রয়োজন। সরকারিভাবে পাঁচ-ছয় টন, বেসরকারিভাবে ৫০-৬০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। বাকিটা কৃষক উৎপাদন করেন, যা পুরোপুরি মানসম্মত নয়।
পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষি অর্থনীতিবিদ আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষি উৎপাদনশীলতার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে বীজের গুণগত মান। ফলন বৃদ্ধির পুরোটাই নির্ভর করে উচ্চমানসম্পন্ন বীজের ওপর। কৃষকরা সাধারণত উৎপাদন ব্যয় কমাতে নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করেন।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কৃষকের সংরক্ষণ করা বীজে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় মাত্র দুই থেকে আড়াই টন। উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ থেকে প্রতি একরে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। লালতীর-কিং বীজে প্রতি একরে সাত-আট টন, লালতীর-২০ বীজে পাঁচ-ছয় টন এবং লালতীর-হাইব্রিড বীজ থেকে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের চারা থেকে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তিন-চার মেট্রিক টন। তাই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ চাষের বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলো স্বল্প সংস্কার প্রক্রিয়ায় একমত হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। তবে যদি বৃহত্তর সংস্কার পথ বেছে নেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা জানান। বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ব্যারোনেস উইন্টারটন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দীর্ঘ ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে এবং সংস্কারের যে ধারা দেখা যাচ্ছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি রূপান্তরমূলক সময়। আমরা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং অগ্রাধিকার পুননির্ধারণে মনোনিবেশ করছি।’
ব্যারোনেস উইন্টারটন বর্তমান সংস্কার এজেন্ডার প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন জানান।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো স্বল্প সংস্কার প্রক্রিয়ায় একমত হয়, তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। তবে যদি বৃহত্তর সংস্কার পথ বেছে নেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।’
বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ দায়ী বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বুধবার (৯ এপ্রিল) অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এটি মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ।বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অপরিহার্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে (সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ই) অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি।
ওয়েবিনারে আরো জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনা মূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ যেন না বাড়ে সে জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে।’
ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে অঞ্চল, বয়স, শিক্ষা এবং লিঙ্গভেদে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপের পার্থক্য আছে। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে পার্বত্য অঞ্চলে ছুটি ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে বিসিএস ফরেন সার্ভিস একাডেমি অডিটরিয়ামে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিনন্দন জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘চৈত্রসংক্রান্তিতে এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ আমরা পাহাড়িরা ছুটি পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘বিজু উৎসব চাকমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান আনন্দ-উৎসব। পার্বত্য এলাকার রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সর্বত্র বিজু মেলা চলছে। গিলা খেলা, বলি খেলা ও বিভিন্ন ধরনের আনন্দদায়ক খেলা চলছে সেখানে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজু উপলক্ষে বিভিন্ন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন জেলায় ৬০০ মেট্রিক টন চাল ও ৪৫০ মেট্রিক টন গম ইতোমধ্যে দিয়েছি।’
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বিজু উৎসব সম্পর্কে বলেন, বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই ছেলে-মেয়েরা ফুল সংগ্রহের জন্য বেরিয়ে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন স্পেনের বহুজাতিক কম্পানি ইন্ডিটেক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া ম্যাসেইরাস।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তারা সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইন্ডিটেক্সের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) উদ্যোগসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইন্ডিটেক্স বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান, যেটি জারা, বেরশকা এবং ম্যাসিমো দত্তিসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী।
ইন্ডিটেক্সের সিইও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রশংসা করে এটিকে ‘অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক’ বলে বর্ণনা করেন।
মাসেইরাস ইন্ডিটেক্সের সোর্সিং হাব হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইন্ডিটেক্সের সঙ্গে অংশীদারি আরো গভীর করতে প্রতিষ্ঠানটির অভিপ্রায় আছে। আমাদের মধ্যে খুব দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছি, সোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশ খুবই ব্যবসাবান্ধব।
বৈশ্বিক বাণিজ্যের জটিলতা এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে ইন্ডিটেক্সের সিইও পরামর্শ দেন যে উদীয়মান বৈশ্বিক বাণিজ্য গতিশীলতা পুঁজি করার জন্য বাংলাদেশ ‘ভালো অবস্থানে’ রয়েছে। তিনি বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য পরিবেশকে প্রভাবিত করার ‘চলমান অংশগুলো’ স্বীকার করেন।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন শেষে মেসেইরাস দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত বৈচিত্র্যময় পণ্যের প্রশংসা করেন।
তিনি চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সঙ্গে সদ্য সই হওয়া একটি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর কমপক্ষে ৫০ জন নারী শ্রমিকের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষায় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন।
মাসেইরাস আরো জানান, ইন্ডিটেক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য একটি ইন্ডিটেক্স চেয়ার প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা কম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। ড. ইউনূস স্পেনে কাটানো সময় এবং স্পেনের সাবেক রানি সোফিয়ার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধায় বিনিয়োগ বাড়াতে ইন্ডিটেক্সের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, ইন্ডিটেক্স শিগগিরই সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার শিপিং কার্গো পরিবহন শুরু করবে।