<p>বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিশন গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কমিশনের রূপরেখা প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে খুব শিগগিরই সেটি সংসদে উত্থাপন করা হবে।</p> <p>আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের লেখা ‘পনেরো আগস্টের নেপথ্য কুশীলব’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বঙ্গবন্ধু গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।</p> <p>আনিসুল হক বলেন, '১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে বদলে দেওয়ার জন্য যে কলঙ্কিত চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল, যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল, সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোই হবে কমিশনের উদ্দেশ্য। কমিশনের কাজ প্রতিহিংসামূলক হবে না। ভবিষ্যতে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকবে ওই কমিশন।'</p> <p>তিনি আরো বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় অবস্থান করছে। নুর চৌধুরী আছে কানাডায়। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালছে। এ বিষয়ে কানাডা যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, সেটা আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর হোসেনকে ফেরত না দিলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'</p> <p>বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের আরো দুই তিনটা তাৎপর্য আছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা ছিল যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারই হয় না, সেখানে আমাকে কেউ খুন করলে সেটার তো বিচার হবেই না। এটা মনস্তাত্ত্বিকভাবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিল। এখন কিন্তু সেই জায়গা থেকে উঠে এসেছে।'</p> <p>বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে আবারো পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো উল্লেখ করে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিতে নানা কৌশল করেছিল তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানসহ অনেকে। তার আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মদ্য দিয়ে দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে।'</p> <p>তিনি আরো বলেন, 'অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ১৯ শতকে জার্মান ইতিহাসবিদ পল র‌্যাঙ্ক বলেছিলেন, ইতিহাস হচ্ছে নগ্ন সত্য। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলকে আমি ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, কারণ তিনি এই বইয়ে ইতিহাসের নগ্ন সত্য তুলে ধরেছেন। কোন দল বা গুষ্ঠির মতো নয়। অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠ এই বইটিকে আমি আকর গ্রন্থ হিসেবে মনে করছি। আগস্ট মাস শুধুমাত্র আমাদের শোকের মাস নয়, এটি পুরো বিশ্বের জন্য শোকের মাস। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে সেদিন স্বজন পরিজনসহ সর্বমোট ১৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। ক্ষণিকের বিচার হয়েছে, তবে তার রায় অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।' আগামীতে সম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।</p> <p>সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল অনুষ্ঠানে জানান, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা হয়েছে। কিন্তু এই নেপথ্যে কুশীলবদের চিহ্নিত এবং বিচার করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে কারা ছিল সেই কুচক্রীমহলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।</p>