<p>একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহিংসতা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার একমাত্র সমাধান নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ঢাকায় এলকপ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার : নির্বাচনের পূর্ববর্তী সহিংসতার দৃষ্টিকোণে' শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে তারা এ অভিমত দিয়েছেন।</p> <p>এলকপ-এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পরে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপনে নির্বাচনের আগের সহিংসতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং তার কারণগুলো তুলে ধরা হয়।</p> <p>একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০০১ সাল থেকে আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত প্রাক-নির্বাচন সহিংসতার সংখ্যা দেখিয়েছে। উপস্থাপনাটি ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন করার জন্য সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত সহিংসতার কথাও তুলে ধরেছিল যা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী।</p> <p>ড. মার্ক জ্যাকসন এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেলজিয়ামের পাওলো কাসাকা, প্রতিষ্ঠাতা এবং দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য এবং ডাচ অর্থনীতিবিদ ড. উইলিয়াম ভ্যান ডার জিস্ট, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ ও দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরামের সদস্য অধিবেশনের মনোনীত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। আলোচকরা বাংলাদেশে নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর জোর দেন।</p> <p>ড. উইলেম ভ্যান ডের জিস্ট বলেন, রাজনীতিতে নির্বাচনে বিজয় মানে সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নয়। বরং দলগুলিকে একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে হবে।</p> <p>প্রফেসর ড. মার্ক জ্যাকসন বলেন, নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সহিংসতা আমাদের জীবনে একটি নিত্যদিনের ঘটনা, কিন্তু নির্বাচন পূর্ব সহিংসতা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি সহিংসতার মনস্তাত্বিক প্রভাব এবং তরুণ প্রজন্মের ওপর এটির প্রভাবের উপর গুরুত্তারোপ করেন।</p> <p>পাওলো কাসাকা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহিংসতা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার একমাত্র সমাধান নয়। বাংলাদেশেকে অন্যান্য দেশগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে। নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় নয় এবং এই সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে।</p> <p>অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই তার জাতীয় বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ এবং এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার কাজ চালিয়ে যাবে।</p> <p>মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও ও আইএনজিও কর্মকর্তারা সাংবাদিক, আইনের শিক্ষার্থী এবং মানবাধিকার কর্মীরা প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন।</p> <p>সেমিনারে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং, ড. উলফাত হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ম হামিদ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভেন থেরো সুনন্দপ্রিয় প্রমুখ সেমিনারের বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং আসন্ন নির্বাচনে শান্তি বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের পরামর্শ দেন।</p>