<p>বর্তমান বাউল জগতের এক অনন্য নক্ষত্র শফি মণ্ডল। যিনি আজ দেশে বিদেশে অর্জন করেছেন ব্যাপক খ্যাতি-সম্মান, পেয়েছেন নানা পুরষ্কার। জীবনের সিংহভাগ সময় বিলিয়ে দিয়েছেন সুরের ভুবনে। গানে গানে বয়ান করে চলেছেন মানব ধর্মের দর্শন। দুই যুগ ধরে ঢাকার বাসিন্দা, তবে গ্রামের (কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ) সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক অটুট। সেখানে গড়ে তুলছেন আশ্রম, স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ভাবনাও আছে মনে। এ প্রসঙ্গ ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>কোথায় আছেন, কেমন আছেন?</strong></p> <p>মোহাম্মদপুরের বাসায় এখন। ভালো আছি।</p> <p><strong>বিজয় দিবসে (গতকাল) কোনো অনুষ্ঠান করছেন না?</strong></p> <p>সকালে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। রাতে আমাদের মহল্লায় একটি অনুষ্ঠান আছে, সেখানেও গাইব।</p> <p><strong>সম্প্রতি </strong><strong>‘</strong><strong>নয়া মানুষ</strong><strong>’</strong><strong> ও </strong><strong>‘</strong><strong>মধ্যবিত্ত</strong><strong>’</strong><strong> সিনেমায় আপনার দুটি গান প্রকাশিত হয়েছে। কেমন লাগল গানগুলো গেয়ে? </strong></p> <p>দুটি গান দুই রকম। খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। অনেক মানুষ ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সিনেমার গান করেছি, এই ভেবে তো ভালো লাগা কাজ করেই।</p> <p><strong>নিজেও গান লেখেন, সুর করেন। অন্যের লেখা-সুরে গাইতে গেলে গানে কী খোঁজেন?</strong></p> <p>নিজে খুব কমই লিখি। অন্যের গানই বেশি করি। ভালো লাগলে বা আমার চিন্তাধারার জায়গায় মিল পেলে সেই গান করি।</p> <p><strong>শুনলাম শহর ছেড়ে একেবারে গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন...</strong></p> <p>গ্রামে তো ফিরে যেতেই হবে। সেখানে একটি আশ্রম তৈরি করছি—সুধা সিন্ধু ভাবাশ্রম। এটা সাধু-গুরুদের একটা আশ্রয়স্থল। সেখানে থাকব, ঢাকায়ও থাকব, কাজও করব। কাজ না করলে তো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাব। আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকব। একেবারে চলে যাব, এ রকম সিদ্ধান্ত নিইনি এখনো। তবে চলে যাব, ওই চিন্তা আছে।</p> <p><strong>সুধা সিন্ধু ভাবাশ্রম নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কেমন? কী কী থাকবে সেখানে?</strong></p> <p>আমি লালন ফকিরকে নিয়ে গবেষণা করি। লালন ফকিরের অনেক গান সুরারোপ করা হয়নি, সেগুলো নিয়ে কাজ করব। ওখানে একটি লাইব্রেরি করব। এলাকার মানুষ যেন এক জায়গায় বসতে পারে। সাধু-গুরুদের আশ্রম থাকবে, সেখানে সবাই আসবে। আমরা একসঙ্গে বসব, গানের আসর করব।</p> <p><strong>শহরের জীবনটা কেমন দেখলেন?</strong></p> <p>গ্রাম আর শহরের মধ্যে অনেক পার্থক্য, সেটা সবারই জানা। শহরে যারা বাস করে, তাদের নব্বই শতাংশ গ্রামেরই মানুষ। আমার চিন্তাধারার অনেক মানুষ শহরেও আছে। ফলে শহরে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগে না। তার পরও গ্রামের প্রতি ভালোলাগা তো আলাদা। শৈশব-কৈশোর গ্রামে কেটেছে, অনেক স্মৃতি। গ্রামের মানুষের কাছে আমার অনেক ঋণ। সুতরাং তাদের কাছে তো ফিরে যেতেই হবে। ক্ষমা চাইতে হলেও তাদের কাছে যেতে হবে। সবশেষে ছেড়ে যাওয়াই উচিত। কিন্তু কখন কার শেষ হয়, এটা তো বলা যায় না। যদি গ্রামে ফিরে যেতে পারি, নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।</p> <p><strong>প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলেন কবে?</strong></p> <p>কাজের উদ্দেশে ঢাকায় এসেছি সম্ভবত ২০০০ সালে। এর আগে আসা-যাওয়া তো করেছি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে রাজধানীতে আছি। গ্রামের মতো করেই থাকি এখানে। এই শহুরে জীবন ব্যস্ততার, এখানে ব্যস্ত না থাকলে সুস্থ থাকা যায় না। যত ব্যস্ত, তত সুস্থ। তার পরও প্রতি মাসে অন্তত একবার গ্রামে যাই। এলাকায় আমার আশ্রম আছে, ছোট একটি স্কুল আছে, সেগুলো দেখভাল করতে হয়।</p> <p><strong>যখন গানের কাজ থাকে না, তখন কী করেন?</strong></p> <p>গানের কাজ থাকে না, জীবনে এমন সময় কমই এসেছে। আমি একা থাকলেও গান করি। গানই জীবন। আমি ধর্ম করি গান দিয়ে, কর্ম করি গান দিয়ে। গানেই আমার জীবন। সুরের মধ্যে যতক্ষণ থাকব, ততক্ষণই ভালো থাকব।</p> <p><strong>জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেন। নানা উপলব্ধি হয়েছে। যারা আপনাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, তাদের উদ্দেশে কী বলবেন?</strong></p> <p>তাদের সঙ্গেই আমি মিশে আছি। আমার কথা ও সুরের মধ্যে অনেক কিছু বলা আছে। যেটা পরের প্রজন্মের কাজে লাগবে। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী। জেনে-বুঝেই এ পথে নামে। তার পরও সবাইকে বলব, তারা যেন শেকড়ের কথা ভুলে না যায়। একটি পাখি গিরিবাজ কবুতর, আসমানে উড়তে পারে। অনেক ওড়াউড়ি করে। তবু ফিরে আসে তার গৃহস্থের কাছে। এ জন্য গিরিবাজ কবুতরের দাম বেশি। মানুষ যতই উড়তে শিখুক, শেকড়ের কথা যেন ভুলে না যায়। লালন ফকির বলেছেন, ‘যা করো, করো রে মন, সেই কথা রেখো স্মরণ’। পেছনের কথা, মায়ের কথা, মাটির গন্ধের কথা, এগুলো ভুলে গেলে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। এই দেশ, মাটি আমার মা। এই মাটিতে অসংখ্য মহাজনের জন্ম, সেসব শেকড়ের কথা যেন খেয়াল থাকে সবার।</p> <p><strong>নতুন কোনো গানের খবর দিতে চান?</strong></p> <p>অনেক গানই করা আছে। আমার নতুন গান তো প্রতি সপ্তাহে বা মাসে আসেই। আমার অত মনে থাকে না, এটা একটা দোষ বলতে পারেন। এ প্রজন্মের অনেক গীতিকার-সুরকার আমার কথা ভেবেই গান তৈরি করেন, ফলে তাদের গানগুলো করতে হয়। এ রকম অনেক গানই করা আছে, এক এক করে আসবে।</p>