<p>পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবশেষে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া হয়ে‌ছে। নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইন সোমবার থে‌কে আগামী সাত দিন বন্ধ (শাটডাউন) থাকবে। তাই আগামী অন্তত সাত দিন ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এত দিন পায়রার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখা যায়নি বলে প্রস্তুত হলেও নতুন এই কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়েছে অন্তত পাঁচ মাস।</p> <p>কা‌লের ক‌ণ্ঠের অনলাইনে এ নি‌য়ে গত ৮ ডি‌সেম্বর ‘সক্ষমতা ২২৮৭, উৎপাদন ৬২২, অলস হয়ে যাচ্ছে পায়রার তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রই’ শীর্ষক সংবাদ প্রকা‌শিত হ‌য়ে‌ছিল। এদি‌কে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গত ১০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ইউনিটটি রক্ষণাবেক্ষণে সময় লাগবে দুই মাস।</p> <p>নতুন এই কেন্দ্র চালুর ফলে পায়রা তীরের কয়লাভিত্তিক তিনটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন সক্ষমতা গিয়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান না থাকায় ৩০৭ মেগাওয়াট বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে সক্ষমতার বিপরীতে আগামী সাত দিনে কোনো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে না। </p> <p>অপর‌দিকে পায়রা ঘেঁষে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল)। বিসিপিসিএলের দ্বিতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মীয়মাণ। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি ২০ শতাংশের মতো। এই কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে পায়রাতীরের কয়লাভিত্তিক মোট উৎপাদন গিয়ে দাঁড়াবে চার হাজার ২৬৭ মেগাওয়াটে। যা দেশের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক।</p> <p><strong>অবশেষে উৎপাদনে পটুয়াখালী</strong><br /> পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট শুরু হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার লিমিটেড বা আরপিসিএল এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেড যৌথভাবে আরপিসিএল নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কম্পানি গঠিত হয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ৭ দোকান" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/17/1734409832-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ৭ দোকান</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/17/1458357" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এভাবে কম্পানি গঠনের মাধ্যমে দুই দেশের সমান অংশীদারত্বে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।</p> <p>পটুয়াখালী কেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিশনিং ও উৎপাদন শুরুর জন্য তিন ধাপে এক লাখ ২৮ হাজার টন কয়লা মজুদ করেছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সোমবার ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুমোদন সাপেক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হওয়ার কাজ শুরু ক‌রে‌ছে।</p> <p>জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য সংস্থাটি ১৬ ডিসেম্বর পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনের শাটডাউন চেয়েছিল। সঞ্চালন লাইনটি এখন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনে নিয়োজিত রয়েছে। শীতে চাহিদা কম থাকায় পায়রা বন্ধ করে আরএনপিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রিডে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেয় বিপিডিবি। তারই অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবি থেকে ব্যাকফিড পাওয়ার দেয় আরএনপিএলকে।</p> <p>পটুয়াখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট প্রায় পাঁচ মাস আগেই প্রস্তুত রয়েছে। কেন্দ্র চালু করার জন্য ব্যাকফিড পাওয়ার প্রয়োজন ছিল। সোমবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। ফলে আগামী সাত দিনের মধ্যেই কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) আগামী বছরের মার্চে পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’</p> <p><strong>পায়রার উৎপাদন বন্ধ</strong><br /> দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে পুরোদমে উৎপাদনে আসে ২০২০ সালে। বিদ্যুৎ খাতে নানা টানাপড়েন ও দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটই বিরতিহীনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল। তবে নির্দিষ্ট সময় পর যন্ত্রের বিরাম, ছোটখাটো মেরামতসহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির।</p> <p>মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে রক্ষণাবেক্ষণের জন‌্য গত ১০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণে সময় লাগবে দুই মাস। এর আগে চল‌তি বছ‌রের গত জানুয়ারি মাসে ১ম ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়। চল‌তি বছ‌রের ১৫ ডি‌সেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মাধ্যমে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন আগামী সাত দিন বন্ধ থাকবে। এই সময়ে পায়রার উৎপাদন বন্ধ থাকবে।</p> <p>পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য জাতীয় গ্রিডের আমতলী অংশের লাইন বন্ধ থাকবে। তাই পায়রার উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। সঞ্চালনলাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর পায়রা আবার উৎপাদনে যাবে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘শীত শুরু হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে গেছে। তাই পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১০ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। চীনের সঙ্গে চুক্তির মধ্যেই এ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করার কারণে বাড়তি কোনো খরচ হবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে যাবতীয় মেইনটেন্যান্সের কার্যক্রমগুলো শেষ করে বন্ধ ইউনিটটি উৎপাদনে ফিরে আসবে।’</p>