<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে সাতটি হাওর। এসব হাওরাঞ্চল ও এখানকার সমভূমি বোরো ধানের একটি বড় অংশের জোগান দেয়। অথচ দেশের অন্যতম প্রধান বোরো ধান উৎপাদন এলাকাটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে শীতল দিনের সংখ্যা কমবে। কিন্তু তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়বে। বিশেষ করে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রার দিন বাড়বে, যা ধান চাষ বাধাগ্রস্ত করবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মিলন এবং তার সহকর্মীদের একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যাসেসিং দ্য ইম্প্যাক্টস অব ফিউচার ক্লাইমেট এক্সট্রিম অন বোরো রাইস কালটিভেশন ইন দি নর্থইস্ট হাওর রিজিওন অব বাংলাদেশ : ইনসাইটস ফ্রম সিএমআইপি৬ মাল্টি মডিউল এনসেমবল প্রজেকশন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক গবেষণাটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণা প্রতিবেদন মতে, হাওরাঞ্চলটি বাংলাদেশের বিশেষ এক পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের, যেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য উৎপাদন ও ধান চাষ প্রধানত প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। বোরো ধান চাষে উপযোগী শুষ্ক মৌসুমটি এপ্রিল-মে মাসের দিকে শেষ হয়। কিন্তু এই সময় আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি সর্বোচ্চ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৬১-২১০০ সালের মধ্যে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপরে তাপমাত্রার দিনগুলো চার দিন পর্যন্ত বাড়বে। এই পরিস্থিতি শীষের উর্বরতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। উষ্ণায়নের কারণে ধানের প্রজনন পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ফুল ফোটা, পরাগায়ণ এবং নিষেক প্রক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে আকস্মিক বন্যায় পাকা ধানের শীষ নষ্ট হয়ে যায়, যা কৃষকদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, বোরো ধান উৎপাদনে হাওরাঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলটি আকস্মিক বন্যা এবং উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্লোবাল ক্লাইমেট মডেলগুলোর প্রক্ষেপণে ভারি বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রজনন পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার দিন এবং ক্রমাগত উচ্চ তাপমাত্রার দিনের সংখ্যা বাড়বে। প্রজনন পর্যায়ে তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধি ধান চাষে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ধানের পরাগের অঙ্কুরোদগম কমে যায়, যা শীষের উর্বরতা কমায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণায় ১৫টি গ্লোবাল ক্লাইমেট মডেল ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, ভবিষ্যতে (২০২১-২১০০) উচ্চ তাপমাত্রা এবং ভারি বৃষ্টিপাতের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। বিশেষত প্রজনন পর্যায়ে (মার্চ-এপ্রিল) তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে ধানের শীষের উর্বরতা এবং ফলনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণায় মূলত পাঁচটি জলবায়ুসূচক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিন দিনের ক্রমাগত শীতল দিন, ছয় দিনের ক্রমাগত শীতল দিন, উচ্চ তাপমাত্রার দিন, ক্রমাগত উচ্চ তাপমাত্রার দিন, ভারি বৃষ্টিপাতের দিন। এসব সূচক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভবিষ্যতে শীতল দিনের সংখ্যা কমে যাবে, কিন্তু তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়বে। গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাপ সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন দ্রুত করতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রা মোকাবেলায় নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করে এ অঞ্চলে সম্প্রসারণ করতে হবে। চাষের সময়সূচি পাল্টাতে হবে। ধান চাষের সময়সূচি সামঞ্জস্য করা এবং প্রজনন পর্যায়ে তাপমাত্রা বৃৃদ্ধির ঝুঁকি কমাতে সময়মতো ধান রোপণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন রিয়েল-টাইম আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং সঠিক সেচব্যবস্থা প্রবর্তন করা লাগবে। সরকারি নীতিমালার পাশাপাশি সহায়তাও লাগবে। কৃষকদের জন্য প্রণোদনা ও বীমা ব্যবস্থা কার্যকর এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। ধানের বিভিন্ন পর্যায়ে (প্রজনন, ফুল ফোটা, শীষ পূর্ণ হওয়া) তাপমাত্রার প্রভাব এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন।</span></span></span></span></span></p>