<p>কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ও পর্যটন খাতের উন্নতি হলেও এগুলো ছিল অনেকটা অগোছালো। অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এসব উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। কৃষিপণ্য পরিবহনে ঝক্কি, চলাচলের দুর্ভোগ ও পর্যটকদের আবাসন সমস্যায় গতি পায়নি সেখানকার অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে অগোছালো উন্নয়নগুলো গোছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকে প্রাধান্য দিয়ে চলছে সামগ্রিক কাজকর্ম।</p> <p>কয়েকটি বড় সেতু, সাবমার্সিবল রোড ও পর্যটকদের আবাসনের জন্য সার্কিট হাউস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব প্রকল্পের শেষ হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।</p> <p>হাওরাঞ্চলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি সেতু ও সাবমার্সিবল সড়কের অভাবে উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও দুর্ভোগে ছিলেন।</p> <p>এসব সমস্যা দূর করতে মিঠামইনে পর্যটকদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মিনি সার্কিট হাউস এবং বেশ কয়েকটি বড় সেতু। এর মধ্যে তিনটি সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে চারতলা সার্কিট হাউসটির কাজ শেষ হবে।</p> <p>প্রতিবছর হাওরে ঘুরতে আসেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আরিফুল ইসলাম। মিঠামইন বাজারে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের হাওর দেখার মতো একটি জায়গা। তবে আবাসন সমস্যায় সেখানে রাতযাপন খুবই কঠিন হয়ে যায়।’</p> <p>মিঠামইন উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ফয়জুর রাজ্জাক বলেন, ‘সার্কিট হাউসে ইউনিট আকারে ২৪টি আধুনিক কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চাহিদার ভিত্তিতে এটি আরো বাড়ানো যাবে। পরিবার-পরিজনসহ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এটি এ বছরেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’</p> <p>তা ছাড়া মিঠামইন সদরে ঘোড়াউত্রা নদীতে নির্মীয়মাণ সেতুটির কাজও শেষের দিকে। ৩৬২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এর কাজ শেষ হলে কাজীপুর-খিলপাড়াসহ ১০টি গ্রাম সরাসরি যুক্ত হবে উপজেলা সদরের সঙ্গে। সহজ হবে কৃষিপণ্য পরিবহন, পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল।</p> <p>এদিকে ইটনা উপজেলার বর্শিকুড়া এলাকায় ধনু নদীতে নির্মিত হচ্ছে প্রায় শতকোটি টাকার একটি সেতু। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজ একেবারে শেষের দিকে। এটি খুলে দেওয়া হলে হাওরের সঙ্গে তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে।</p> <p>ইটনা উপজেলা প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলছেন, সেতুটি চালু হলে বহু বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে হাওরের লোকজন।</p> <p>অষ্টগ্রাম উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ও কলমা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার মানুষজনের কাছে বহু বছরের দুর্ভোগের নাম ছিল বিলমাকসা নদী। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে অষ্টগ্রাম সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এলাকাবাসীর। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৪৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু।</p> <p>স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাজের গুণগত মানের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সময়মতো কাজগুলো যেন শেষ হয়— সে তাগিদও দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারদের।’</p> <p> </p>