<p>ব্যক্তিস্বাধীনতা, না সাম্যবাদ কোনটা গুরত্বপূর্ণ?</p> <p>প্রশ্নটা যদি গণতন্ত্র বনাম সমাজন্ত্র হতো—তাহলে হয়তো আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু প্রশ্নটা যখন গণতন্ত্রের ভেতরেই ঘুরপাক খায়, তখন একটা গোলমাল বেঁধে যায়। তৈরি হয় একটা প্যারাডক্সের। ব্যাপারটা বোঝার জন্য, বিশ্বজুড়ে যারা নিজেদের গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা মনে করে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের গল্পই আমরা বলতে পারি।</p> <p>আসলে ব্যাপারটার দিকে আঙুল তাক করেছিলেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও লেখক ইয়্যুভাল নোয়াহ হারিরি—তাঁর বিখ্যাত স্যাপিয়েন্স বইয়ে?</p> <p>কী বলেছিলেন তিনি? </p> <p>তিনি আসলে দুই মার্কিনি জায়ান্ট রিপালিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মূলনীতির দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর সেই প্রশ্নই আমাকে এই প্যারাডক্স তৈরিতে উৎসাহ জুগিয়েছে।</p> <p>হারারি আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের গণতোন্ত্রিক সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে আরো পেছনের দিকে তাকিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদাহরণ টানা যায় আধুনিক কালের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে। ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে, ধীরে ধীরে পৃথিবী জুড়ে মানুষ সাম্য আর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে মৌলিক মূল্যবোধ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আদতে এরা পরস্পরবিরোধী দুটি ধারণা। সাম্য শুধু তখনই নিশ্চিত করা যায়, যখন সুবিধাভোগীদের অতিরিক্ত সুবিধা ভোগের স্বাধীনতা হরণ করা যায়। উল্টোভাবে, প্রত্যেক জনকে তার মর্জিমাফিক চলতে দিলে সমাজে সাম্য বজায় রাখা অসম্ভব। সেই ১৭৮৯ সাল থেকে, পৃথিবীর সামগ্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা যায় এই বৈপরীত্যকে সমতায় আনার প্রচেষ্টা হিসেবে।’</p> <p>হারিরি চার্লস ডিকেন্সের উদাহরণ টেনেছেন। তুলে ধরেছেন তার উপন্যাসগুলোর মূল ভাষ্য। ডিকেন্সের উপন্যাস্যের মূল থিম ঊনবিংশ শতাব্দীর বৃটেনের সমাজ ‍ও শাসণ ব্যবস্থা। ত</p> <p>তখনকার শাসকেরা জনগণের ব্যক্তিস্বাধিনতাকে মূল্য দিতেন। অন্তত ডিকেন্স সেটাই দেখাতে চেয়েছেন। আর এর জন্য যদি দরিদ্র ও অসহায় শিশুদের অধিকার হরণ করা হয় হোক, তবু সেই ব্যক্তিস্বাধিনতাকে মূল্য দিতে হতো। </p> <p>অন্যদিকে কমিউনিজমের সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠা শাসকের উদহারণও কিন্তু কম নয়।</p> <p>যাইহোক, ইউরোপে গণতন্ত্রের চর্চা অনেক পরে হয়েছে। তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র এসেছে অষ্টাদশ শতাব্দীতে। দেশটির ইতিহাসে ডেমেক্রেট আর রিপাবলিক নামে দুটি দল ক্ষমতায় এসেছে পালা করে—জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে।</p> <p>কিন্ত এখনকার মতো এতটা চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র আগে পড়েনি। আসলে গলদটা রয়ে গেছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলে। এই ব্যবস্থা একই সঙ্গে সাম্যবাদ আর ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের ভেতর একসঙ্গে পাবেন না।</p> <p>ডেমোক্রেটরা সাম্যবাদে বিশ্বাসী, অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ব্যাক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ উভয়েই আবার গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্রভাবে।</p> <p>ধরা যাক, বারাক ওবামার কথা। তিনি এসে স্বাস্থ্যবিমা পলিসি বাধ্যতা করেছিলেন। তেমনি ডেমক্রেটরা ক্ষমতায় এসে দরিদ্র ও বৃদ্ধদের স্বচ্ছল করতে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সময়। এজন্য বাড়তি করের বোঝা চাপাতে হয়েছে জনগণের ওপর। এতে যেমন ধনীদের ব্যয় বেড়েছে, বাড়তি করের বোঝা চেপেছে স্বল্প আয়ের মানুষের ঘাড়েও। </p> <p>সুতরাং ব্যাপারাটাকে অনেকেই ভালোভাবে দেখেননি। যেমন একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের হয়তো স্বপ্ন ছিল কিছু টাকা জমিয়ে সন্তানকে ভালো একটা স্কুলে পড়াবেন। কিংবা জীবনমান আরেকটু উন্নত করবেন। বাড়তি আয়কর তাঁদের সেই স্বপ্ন ধূলিস্যাত করে দিয়েছে। </p> <p>এসব মানুষ মনে করেছে, বাড়তি আয়কর আরোপ করে ডেমোক্রেটরা তাদের একটুখানি ভালোভাবে বাঁচার স্বাধীনতা হরণ করেছে। তাই পরবর্তী নির্বাচনে তাঁরা যদি রিপালিকান প্রার্থীকে ভোট দেয়, তাঁদের আপনি দোষ দিতে পারবেন না। </p> <p>অন্যদিকে রিপাবলিকরা ব্যাক্তিস্বাধীনতার ওপর জোর দেয়। তাঁরা মনে করে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জনসাধারণের ওপর বাড়তি কর আরোপ করতে হয়েছিল। এতে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। তাই যেকোনো উপায়ে তাঁরা ব্যাক্তি স্বাধীনতার রক্ষার পক্ষে। </p> <p>এর ফলে ওবামা নীতী বা বাইডেন নীতি বন্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন কর কমানোর ঘোষণা দেন। ফলে সমাজে সমতা কমছে। দুর্বল বা দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হলেও ট্রাম তথা রিপাবলিকরা আয়কর বাড়ানোর পক্ষে নন। স্বাস্থ্যবীমা বাতিল করতেও তাদের কার্পন্য নেই। সুতরাং এই নীতির কারণে ধনীদের যেমন আরও ধনী হতে বাধা নেই, তেমনি গরিবরা আরও গরীব হলেও রিপাবলিকানদের মাথাব্যাথা নেই।</p> <p>এই যে দুই দুলের দুই নীতি—দুটোয় কিন্তু গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। তবু এই দুই নীতিই আবার গণতন্ত্রকে মূল নীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা গণতণন্ত্রের অন্যতম প্যারাডক্স।</p>