<p>লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের কামাল হোসেন। গত রবিবার ঢাকায় আসেন সৌদি ভিসা সেন্টারে আঙুলের ছাপ দিতে। সেদিন দীর্ঘ লাইনের কারণে আঙুলের ছাপ দিতে পারেননি। দুই দিন অপেক্ষার পর মঙ্গলবার আঙুলের ছাপ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু তথ্যগত জটিলতার কারণে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় পিছিয়ে যায়।</p> <p>কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে ঢাকায় আছি। খাওয়া-দাওয়া ও থাকায় এমনেই খরচ যাচ্ছে। তার ওপর এখন অন্য সমস্যায় পড়লাম। আঙুলের ছাপ দেওয়ার সুযোগ মিললেও ভিসা আবেদন ও পাসপোর্টের তথ্যে গরমিল থাকায় তা হয়নি। এখন পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করে আসতে হবে। আবারও আঙুলের ছাপ দিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।’ শুধু কামাল নন, তাঁর মতো আরো সহস্রাধিক সৌদি আরব গমনেচ্ছু কর্মীকে নিয়মিত এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।</p> <p>জানা গেছে, সৌদি গমনেচ্ছু কর্মীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সৌদি ভিসা সেন্টারে আঙুলে ছাপ দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সারা দেশ থেকে কর্মীদের ঢাকার সৌদি ভিসা সেন্টারে আসতে হচ্ছে। এই সেন্টারে প্রতিদিন পাঁচ হাজার কর্মীর আঙুলের ছাপ নেওয়ার কথা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে আড়াই হাজার। এতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেককেই আঙুলের ছাপ না দিয়ে ফিরতে হয়। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা বেশির ভাগ কর্মীকেই হোটেল বা বোর্ডিংয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। সময়ও নষ্ট হচ্ছে।</p> <p>সৌদি ভিসা সেন্টারে আসা মিজান রহমান নামের একজন গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে বসে আছি। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে পারব কি না জানি না। কুমিল্লায় ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে পারলে ভাড়া কমে যেত। এত কষ্ট করে জার্নি করা লাগত না। এখানে আরেক দিন আসছিলাম। তখনো দিতে পারিনি। এই যে ঢাকা শহরে আসা একটা বড় বিপর্যয়। গাড়িভাড়ার ডাবল খরচ। সময় নষ্ট হয়। জেলায় জেলায় আঙুলের ছাপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভোগান্তিটা পোহাতে হতো না।’</p> <p>রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের দৈনিক পাঁচ হাজার ভিসা প্রয়োজন। ভিসা সেন্টারে দৈনিক ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা আছে মাত্র আড়াই হাজার মানুষের। এভাবে আঙুলের ছাপ নেওয়ার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকার বন্ধ করলে কর্মী পাঠাতে সুবিধা হতো। আর যদি বন্ধ করা সম্ভব না হয় তাহলে কর্মীরা যাতে সহজে আঙুলের ছাপ দিতে পারেন তার জন্য ঢাকা শহরে চার-পাঁচটি সেন্টার চালু করতে হবে।’</p> <p>গত সোমবার আঙুলের ছাপ নেওয়ার কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। সে সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি। একজন কর্মীর জন্য আঙুলের ছাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঙুলের ছাপ থাকলে কর্মীরা আরো বেশি নিরাপদ হবেন। এ জন্য আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। তাই আমাদের দেশে কাজ করতে যেতে হলে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিশ্চিত করেই যেতে হবে। তবে আমরা এই পদ্ধতি সহজ করতে আরো কয়েকটি ভিসা সেন্টার বাড়ানোর চিন্তা করছি।’</p> <p>পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত পশ্চিম এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়টা খুব বেশিদিন এভাবে চলবে এমনও না। ছয় মাস বা এক বছর পর দেখা যাবে মোবাইলে হয়ে যাচ্ছে। তাই এ বিষয় খুব একটা জটিল নয়। এখন একটাই সমস্যা, কর্মীদের আসা-যাওয়া। সে ক্ষেত্রে আরো চিন্তাভাবনা আছে। তারা যখন মেডিকেল করতে আসে তখন করা যায় কি না। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। খুব বড় ধরনের জটিলতা নেই।’</p>
