<p>ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩৬২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বানের পানির স্রোতে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে ও বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৮৪ কোটি টাকার বেশি। তবে স্থানীয় বানভাসিরা বলছে, সরকারি দপ্তরগুলোর হিসাব মিলিয়ে এই তথ্য দেওয়া হলেও বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে।</p> <p>এদিকে জেলার নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং উপজেলার অনেক এলাকা এখনো বানের পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব উপজেলাসহ অন্যান্য বন্যাকবলিত এলাকা থেকে নেমে যাচ্ছে পানি। ১৪টি উপজেলার যেসব স্থান থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট। এবারের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার ১৪টি উপজেলায়ই বানের স্রোতে কৃষি খাত, মাছের ঘের, পুকুর ও দিঘি, প্রাণিসম্পদ, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মানুষের ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।</p> <p>গত শুক্রবার দুপুরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, এবারের বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি দপ্তর থেকে নেওয়া তথ্যে জেলায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৮ টাকা। ১৪ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুড়িচং উপজেলা। এ উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৫৫৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার বেশি। এরপর বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। এ উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৫২৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বেশি। জেলার চৌদ্দগ্রামে ৪৬১ কোটি, লাকসামে ৩৯২ কোটি, কুমিল্লা আদর্শ সদরে ৩৩১ কোটি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২৫৮ কোটি টাকা, দেবীদ্বারে ২৩৫ কোটি, মনোহরগঞ্জে ১৭৫ কোটি, বরুড়ায় ১২১ কোটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ১১৫ কোটি, লালমাইয়ে ৭১ কোটি, তিতাসে ৫৬ কোটি, মুরাদনগরে ৪৭ কোটি ও দাউদকান্দিতে ৯ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সব কিছু এবং সব খাত হিসাব করে।</p> <p>মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার ১৪টি উপজেলায় আট হাজার ৬৭৪টি বাড়িঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। ২২ আগস্ট রাত পৌনে ১২টায় বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়।</p> <p>জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র মতে, চলমান বন্যায় কুমিল্লায় মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৫৩৮.৫০ টন ফিন মাছ, ১০.২৮ টন চিংড়ি ও ১০ কোটি ১৭ লাখ পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্যে ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর চিংড়িতে পাঁচ কোটি টাকার বেশি এবং ১৭ কোটি আট লাখ ৯২ হাজার টাকার পোনাজাতীয় মাছের ক্ষতি হয়েছে।</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, বন্যায় কৃষি খাতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ খাতে। জেলায় কৃষি ও মেস্যর পাশাপাশি প্রাণিসম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র মতে, প্রাথমিক তথ্যে এই খাতে মোট ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।</p> <p>জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা, বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ, ক্ষুদ্রঋণ নেওয়ায় সহায়তা, বিনা মূল্যে কৃষিসেবা ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। </p> <p>জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘জেলায় চার হাজারেরও বেশি গবাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দুই লাখ ৯ হাজার বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। <br /> জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, এবারের বন্যায় ক্ষতি আমাদের ধারণার থেকে বেশিও হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিন হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে।’</p> <p>জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় বর্তমানে ৮২ হাজার ৫৬৭টি পরিবারের প্রায় তিন লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে জেলার ১৪টি উপজেলায়ই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।</p> <p>কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।</p>