<p>বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামীকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হবে। আজ মঙ্গলবারই (৩ সেপ্টেম্বর) শেষ হতে যাচ্ছে সব ধরনের অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা। </p> <p>এর মধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে লুটপাট করা অস্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈধ অস্ত্রও। গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। মঙ্গলবারের (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে গোলাবারুদসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হামলা করে লুটপাট করা হয়। লুণ্ঠিত ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার শেষ সময়ও মঙ্গলবার। তবে থানাগুলো থেকে কী পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছে সে বিষয়ে পরিসংখ্যান মঙ্গলবারের পর জানানো হবে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবারী বাহিনী।</p> <p>প্রশ্ন হলো- কাদের কাছে রয়েছে এসব অবৈধ অস্ত্র? কিভাবে এই অভিযান পরিচালনা করবে যৌথ বাহিনী?</p> <p><strong>কেন এই অভিযান?</strong></p> <p>আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন সময়েই বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার দেখা গেছে। বিরোধীপক্ষকে শায়েস্তা করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের প্রদর্শন করতেও দেখা গেছে। এসব ক্ষেত্রে অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এসংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে সময় ছড়িয়ে পড়ে।</p> <p>এসব ভিডিওতে তাদের কখনো পুলিশের সামনে আবার কখনো নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকারীদের দমাতে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছে।</p> <p>এ আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে তিন দিন রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রায় পাঁচ শ থানায় হামলা হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ।<br /> পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা ও পুলিশের যানবাহন। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সব থানার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পুলিশ এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।</p> <p>বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে দশ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে। এদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।</p> <p>২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের সময়ে এদের অনেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট গত সরকারের শাসনামলে দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। পরে গত ২৭  আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার সময়ও বেঁধে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।</p> <p>পুলিশ সদর দপ্তর কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময়ের মধ্যে কেউ এসব লুণ্ঠিত অস্ত্র জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।</p> <p><strong>অস্ত্র লুট ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রের পরিসংখ্যান</strong></p> <p>পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন বিভাগের এআইজি এনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, সারা দেশের থানাগুলো থেকে কত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে, তা মঙ্গলবারের পর জানানো হবে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি অস্ত্র ও গোলাবরুদ যেগুলো লুণ্ঠিত হয়েছে, এ তথ্যটির আমরা প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি। ৩ তারিখে জমা দেওয়ার ডেডলাইন রয়েছে, সেটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটা (কত অস্ত্র লুট) জানিয়ে দেওয়া হবে।’ এরই মধ্যে পুলিশের লুণ্ঠিত বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে বলেও জানান তিনি।</p> <p>তিনি জানান, পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তিন হাজার ৮৮০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাবারুদের মধ্যে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২ হাজার ২০১টি টিয়ার গ্যাসের শেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লুণ্ঠিত দুই হাজার ১৩৯টি সাউন্ড গ্রেনেডও উদ্ধার হয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, শুধু রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে এক হাজার ৮৯৮টি অস্ত্র লুট করা হয়। এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ৪৪৫টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।</p> <p><strong>যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে</strong></p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, স্থগিত করা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দিলে উদ্ধার অভিযানে সেগুলো জব্দ করা হবে। একই সঙ্গে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেহাত হওয়া ও হারানো অস্ত্রসহ যেকোনো অবৈধ অস্ত্র এ অভিযানে উদ্ধার করা হবে।</p> <p>সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের যৌথ সমন্বয়ে অপারেশন টিম গঠন করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।<br /> মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবেন পুলিশ কমিশনার। সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় কমিশনার এ অভিযান পরিচালনা করবেন।</p> <p>জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কোর কমিটির মাধ্যমে স্থগিত করা লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনার ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হবে। এই কমিটিতে পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।</p> <p>এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণ বা হেফাজতকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি জেলা তথ্য অফিস প্রচার করবে।</p> <p><strong>ফলপ্রসূ অভিযান </strong></p> <p>পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি এনামুল হক সাগর বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ৩ তারিখের পর তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে এবং অস্ত্র আইনে কিন্তু মামলা রুজু হবে। আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানাতে চাই, ৩ তারিখের মধ্যে যাতে সবাই সব অস্ত্র জমা প্রদান করে।’ তিনি আজকের মধ্যে আরো অস্ত্র জমা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।</p> <p>কাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এনামুল হক জানান, অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধারে একেবারেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। উদ্ধারে যে যৌথ অভিযান পরিচালনা হবে, তাতেও আশা করছি একটি ভালো রিকভারি আমাদের হবে। বেশ আশাবাদী আমরা, যে যৌথ অভিযানে আমাদের বাহিনীগুলোর মধ্যে একটা সুসমন্বয়ের মাধ্যমে সেই জায়গায় পৌঁছতে পারব।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে চাই। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর কোনো কিছু যেন কখনো সংগঠিত না হয়, সে জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অস্ত্র, গোলাবারুদ যেগুলো এখনো মিসিং রয়েছে, সেগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি, করব।’<br />  </p>