ট্রেন বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলি’

সজিব ঘোষ
সজিব ঘোষ
শেয়ার
ট্রেন বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলি’

রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণায়লের ঠেলাঠেলিতে ট্রেনের রানিং স্টাফদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনড় কর্মীরা কর্মবিরতি থেকেও সরছেন না। দফায় দফায় রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, রেলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হলেও সুরাহা হচ্ছে না। 

যেহেতু রেলকর্মীদের দাবির পেছনে বেতন-ভাতা-পেনশন জড়িত তাই রেল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের দায় ঠেলে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে।

আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিষ্কার জবাব, রেলকর্মীদের ‘অযৌক্তিক দাবি’ মানার সুযোগ নেই। এই ঠেলাঠেলি কয়েক বছর ধরেই চলছে। 

সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সাড়ে ৫টার দিকেও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক চলছিল।

 

এর ঘণ্টা তিনেক আগে ট্রেন চালু করতে আরো কয়েক দফা সমঝোতার বৈঠক হয়। রাজধানীর ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে দুপুরে সব পক্ষকে নিয়ে ট্রেন চালু করতে বৈঠক হয়। কয়েক দফায় দুই ঘণ্টার বেশি বৈঠক চললেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যায়নি। 

কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ফাহিমুল ইসলাম।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক সাইদুস রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘক্ষণ রেলসচিব, (ভারপ্রাপ্ত) মহাপরিচালক সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারিনি বলে ওই বৈঠক চলাকালীনই আমি চলে আসছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

বৈঠকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারা আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে যাবে বিষয়টা নিয়ে। তবে আমাদের দাবি না মানা হলে কর্মসূচি তুলব না।’

এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেল উপদেষ্টা, রেলসচিব ও রানিং স্টাফদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরেক দফায় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘যৌক্তিক দাবি যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি’

দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সমাধান করতে পারিনি রেল মন্ত্রণালয়। রেল মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে এই অবস্থানে গিয়েছে বিষয়টি। অবশেষে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। 

এদিকে রানিং স্টাফরা দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ।

এ ছাড়া অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরনোদের চেয়ে আরো কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন। এরপর থেকে শুরু হয় জটিলতা। 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রেলের কর্মচারীদের যে যৌক্তিক দাবি তা যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি। এরপরও তারা কেন আন্দোলন করছে এমন প্রশ্ন করেছেন। রেলের কর্মচারীদের জন্য মানবিক কারণে যতটুকু করা দরকার করেছি। ওভারটাইম ইস্যুর সমাধান করা হয়েছে। এর বাইরের যেসব দাবি তা পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।

দিনভর ভোগান্তিতে ট্রেনের যাত্রীরা

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশের সব স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এ বিষয়ে রেলওয়ে থেকে যাত্রীদের আগাম কোনো বার্তাও দেওয়া হয়নি। ফলে স্টেশনে এসে ফিরে যাওয়াসহ গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল সকাল থেকে দেশের বড় বড় রেল স্টেশনে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায়।

বেশিরভাগ যাত্রীদের অভিযোগ ‘ট্রেন বন্ধ আমাদের আগে কেন জানাল হলো না’। আর ট্রেন না চললে টিকিট কেন বিক্রি করেছে তারা। 

ট্রেনের যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, যোশোর যাওয়ার জন্য ২৫ তারিখে টিকিট কেটেছিলাম। (আজ) ১০টা ৪৫ মিনিটে রূপসী বাংলা ট্রেনে যশোর যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাসে যাতায়াত করতে পারব না। ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকিট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়েছি। এর দায় নেবে কে?

ট্রেন বন্ধে যাত্রীদের ক্ষোভ স্টেশন ভাংচুর

রানিং স্টাফদের কর্ম বিরতিতে ট্রেন বন্ধ থাকায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

মঙ্গলবার স্টেশনে আসা কয়েকশো যাত্রী ট্রেন না পেয়ে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও এই ভাঙচুর চালান বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শহীদুল আলম।

তিনি বলেন, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা টিটিইদের একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। স্টেশনে পেতে রাখা বেশকিছু চেয়ারও ভাঙচুর করেন যাত্রীরা। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং টিকিটের টাকা সবাইকে রিফান্ড করা হয়েছে। 

ট্রেনের টিকিটে বাস, ‘বলি’ বিআরটিসি

ট্রেনের বিকল্প হিসেবে যাত্রী পরিবহনের জন্য সারা দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস সার্ভিস চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা করেছে ঠিক। ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যের পথে রওনা করতে পেরেছেন। কিন্তু জটিলতায় পড়েছে খোদ বিআরটিসি। 

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া স্টেশন থেকে ভিবিন্ন গন্তব্যে মোট ২৯টি বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। যাত্রীরা তাদের ক্রয় করা রেল টিকিটের মাধ্যমে এই ভ্রমণ করতে পেরেছেন। একইভাবে এসব স্থান থেকে ঢাকায় এই সার্ভিসের মাধ্যমে আসতেও পারবেন। তবে একই গন্তব্যে বেশি যাত্রী না হওয়ায় বাসগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন পথে যেখানে সেতুর টোল দিতে হবে সেই টাকাও আমাদের পকেট থেকে দিতে হয়েছে। এর বাইরে ২৯ বাসের জন্য আলাদা করে জ্বালানি খরচ রয়েছে। বাসগুলো ফিরতি পথে কীভাবে আসবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাস যদি খালি আসে তাহলে লোকসান দিগুণ হবে। যেহেতু সড়ক ও রেলের উপদেষ্টা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তাই হঠাৎ সিদ্ধান্তে এমন দুর্গতিতে পরতে হলো। ২৯টি বাস চালানোর বিপরীতে বিআরটিসি কোনো টাকা পাবে কিনা- সেই নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায়নি।   

হুঁশিয়ারি আমলে নেওয়া হয়নি

রানিং স্টাফদের দাবির বিষয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো মতামতের ভিত্তিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) একটি সভা ডেকেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু দাবির বিষয়ে অনড় থাকায় সভায় যোগ দেননি রেলের রানিং স্টাফরা। দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে রানিং স্টাফরা যে টানা কয়েকদিন ট্রেন চালানো বন্ধ করে দেবেন এমন হুঁশিয়ারি ওই দিন ঘোষণায় রূপ নেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এই হুঁশিয়ারি বা ঘোষণা আমলে নেননি। তাই যাত্রীদেরকে সতর্ক করার মতো উদ্যোগ ছিল না রেলের। উল্টো ট্রেনের টিকিট বিক্রি অব্যাহত থাকে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের সভা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের কোনো কর্মচারি সভায় অংশগ্রহণ করেনি। আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের দাবি মানা হবে না। আমাদের কাছে আরো সময় চাওয়া হবে। সেজন্যই আমরা আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মঙ্গলবার (আজ) থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতিতে যাব। আমাদের কর্মসূচি কাল থেকে চলতে থাকবে। 

কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে আন্দোলন করলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা আমাদের ডাকলেন। তারা আমাদের কাছে ১০ দিন সময় চেয়েছিলেন। আমি তাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা আমদের জন্য কিছু করতে পারলেন না। পরে ১ জানুয়ারি আমরা জানিয়ে দিলাম, আমরা আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালাব না।


 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

একুশে বইমেলা শুরু আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
একুশে বইমেলা শুরু আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
ছবি: কালের কণ্ঠ

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’। আজ বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ ঘুরে দেখা গেছে, মেলা আয়োজনের জোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।

এরই মধ্যে প্রায় সব অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন ঘষামাজা আর রঙের শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত স্টলগুলোর কর্মীরা। এর পরই স্টল ও প্যাভিলিয়নে তোলা হবে নতুন-পুরনো বই। এরই মধ্যে অনেক প্যাভিলিয়ন তাদের র্যাকে বই গুছিয়ে ফেলেছে।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. সরকার আমিন জানান, গতবারের মতোই অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে বইমেলার বিন্যাস। তবে এবার কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চাটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে।

নারী-পুরুষের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা এবারও থাকছে। এ ছাড়া শিশুচত্বর মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
 
বইমেলার সময়সূচি 
আজ থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

মেলায় যেন উসকানিমূলক বই না আসে
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘প্রতিবছর বইমেলায় কিছু লেখক বা প্রকাশনী উসকানিমূলক কিছু বই প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের আমরা বলেছি, যেন কোনো ধরনের উসকানিমূলক বই এবারের মেলায় না আসে। তারা যেন বই স্ক্যানিং করে মেলায় পাঠায়।’
মাসব্যাপী একুশে বইমেলা ঘিরে গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডিএমপির নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এবারের একুশে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা প্রতিবারের মতো এবারও কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছি। এখানে সব সময় আমাদের কর্মকর্তারা থাকবেন। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারকি করবেন রমনা থানার ডিসি। এ ছাড়া র্যাব, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সহযোগিতা করবেন।’

তিনি বলেন, বইমেলা এলাকা সিসিটিভি দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আনা হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে এলাকাটি তদারকি করা হবে। আজ (গতকাল) থেকে ম্যানুয়ালি মানুষের দেহতল্লাশি চলবে, কেউ যেন মাদক বা কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে না পারে। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড থাকবে।

মেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো মাস টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের ক্রসিংটি বন্ধ থাকবে। কেবল মেলা চলাকালে বন্ধ থাকবে। দর্শনার্থী যাঁরা আসবেন, তাঁরা দোয়েল চত্বর হয়ে তিন নেতার মাজারের সামনে পর্যন্ত আসতে পারবেন। 

বইমেলা ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সার্চলাইট বসানো হয়েছে, যেন কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো ভারী যান চলাচল করবে না।’

বইমেলার ভেতরে ফুডকোর্ট দেওয়া হয়েছে। ফুডকোর্টের দোকানগুলো যেন অতিরিক্ত দাম না নিতে পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নজদারির মধ্যে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, বইমেলা যেন বাণিজ্যমেলার মতো না হয়। বাণিজ্যমেলায় সব কিছুর তিন গুণ দাম রাখা হয়। এটি তো ঠিক নয়। পাঁচ টাকার একটি জিনিসের দাম ছয়-সাত টাকা হতে পারে, ১৫ টাকা নেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সরকারের অনেক বিভাগ আছে, তারাও যেন তদারকি করে।

মন্তব্য

আলোচিত-১০ (৩১ জানুয়ারি)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ‘নগণ্য’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ‘নগণ্য’
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করছে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার বিষয়ে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিথ্যাচার ও অপতথ্যের ক্যাম্পেইন’ চালাচ্ছে।

‘এই সিদ্ধান্ত ভারত ও বাংলাদেশসহ সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো একটা বিষয় জানে না, বা ক্রমাগতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে, সেটা হল যুক্তরাষ্ট্রের যে সহায়তা, তা বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ের খুবই নগণ্য একটা অংশ।

পোস্টে বলা হয়েছে, অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপাক্ষিক ঋণদাতার তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার আপেক্ষিক আকারের ওপর তথ্য সংকলন করা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক গৃহীত তথ্যসমূহ তুলে ধরা হয়েছে ওই পোস্টে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বরাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হিসাব দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউএসএআইডি’র অধীনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বেশি দেওয়ার তথ্য রয়েছে।

12এর বিপরীতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা থেকে এসেছে ১৯১ কোটি ১১ লাখ ডলার।

আর বিশ্বব্যাংক থেকে প্রায় ২২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২১৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ডলারের হিসাবে ওই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৬৯৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এই হিসাবের তুলনায় ইউএসএআইডির হিস্যা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

ইআরডির হিসাবে, ইউএসএআইডির অর্থায়ন জাইকার তুলনায় মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং এডিবির তুলনায় ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

মন্তব্য

ভারত আশা করে দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারত আশা করে দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে বাংলাদেশ
সংগৃহীত ছবি

আশা করি ভারতের সঙ্গে হওয়া দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তির প্রতি বাংলাদেশ যথাযথ সম্মান দেখাবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিজি পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা আশা করি পারস্পরিক সব চুক্তির প্রতি বাংলাদেশের শ্রদ্ধা থাকবে।

কারণ এগুলো দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি।’

‘প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে এমন সবগুলো চুক্তির প্রতিই সম্মান রাখা হবে বলে আশা করি,’ বলেন তিনি।

সীমান্ত ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কিছু চুক্তি ‘অসম’ বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত-সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘এই চুক্তিগুলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তে পারস্পরিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করে,’ বলেন তিনি।

সম্প্রতি পাকিস্তানি সামরিক প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘আশেপাশের সবগুলো বিষয়ে আমরা সর্বদা কড়া নজর রাখি এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিই।’

এর আগে, গত সপ্তাহের ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশের সাথে একটি অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ