আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ও ভুক্তভোগীদের পরিবার। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা।
এসময় তিনি বলেন, 'আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার আর নতুন করে কিছু বলতে হবে না।
আপনারা সবই দেখেছেন। এক কথায় যদি এর বর্ণনা দিতে হয় তবে বলতে হয় এক বীভৎস দৃশ্য। মানুষের মনুষ্যত্ব বোধ বলে যেটা আছে সেটাকে বহু গভীরে নিয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। নৃশংষ প্রতিটি জিনিসি। যতবারই শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়।'
তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলকে ‘আইয়ামে জাহিলিয়াতের’ সঙ্গে তুলনা করেন। আয়নাঘরে যে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতো সেটাকেও জাহেলি যুগের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, 'নৃশংস অবস্থা প্রতিটি জিনিস যে হয়েছে এখানে। যতটা শুনি অবিশ্বাস্য লাগে যে, এটা কি আমাদেরই দেশ, আমাদেরই জগৎ?'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিনা কারণে জঙ্গি আখ্যায়িত করে মানুষকে তুলে এনে এসব টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো।
’ তিনি বলেন, ‘এখন শুনি সারা বাংলাদেশ জুড়েই আরও সাতশ-আটশ আয়নাঘর আছে। আমার ধারণা ছিল শুধু এখানেই আছে। এগুলার সংখ্যাও নিরূপণ করা যায় না, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে।’
গুম কমিশনকে এসব আয়নাঘর আবিষ্কারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটা কথা আছে না, গত সরকার এই আইয়ামে জাহেলিয়াতকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে সর্বত্র।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, 'গুম কমিশনের প্রতিবেদনে এই আয়নাঘরের ডকুমেন্টেশন বাধ্যতামূলক করা হবে।
একইসঙ্গে যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিচার করা হবে।'
এসব তথ্য-প্রমাণ সিলগালা করে রাখা হবে এবং বিচারের জন্য ব্যবহৃত হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
উপস্থিত ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার আমলে গুমের শিকার জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম এ সময় তাদের সাথে ছিলেন।
দুইজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং নাহিদ ইসলাম নিজেরাও এই আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন এবং তারা ওই রুম চিহ্নিত করেছেন বলে জানান।
আরো পড়ুন
ক্ষমতা ধরে রাখতেই জুলাই অভ্যুত্থানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল: জাতিসংঘ
এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার ঢাকা শহরের তিনটি স্থানে পরিদর্শন করেন, যেগুলি আগে অত্যাচার কক্ষ এবং গোপন কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হত।
আরো পড়ুন
ক্ষমতার আসল দায়িত্ব গণমানুষের জন্য কাজ করা : উপদেষ্টা আসিফ
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান উত্তরায় র্যাবিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ কম্পাউন্ডে ছোট্ট আয়নাঘর, গোপন কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে তাকে আট বছর ধরে শেখ হাসিনার পোষা নিরাপত্তা বাহিনী গোপনে রেখেছিল। আজ তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের কাছে ঢাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনকালে তার অগ্নিপরীক্ষার কথা বর্ণনা করেন।