বিশেষ সাক্ষাৎকার

রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে গেছে রাজনীতি

  • আবুল কাসেম ফজলুল হক
শেয়ার
রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে গেছে রাজনীতি

কোনো রাষ্ট্রে গণজাগরণ ঘটতে অনেক সময় লাগে। অনেক দিনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে গণজাগরণ হয়। আমাদের দেশে গণজাগরণের প্রথম প্রকাশ বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে...

আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অনুবাদক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক।

তিনি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর রচনা স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। প্রগতিপ্রয়াসী মন নিয়ে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে মতপ্রকাশ করেন। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন প্রতিথযশা অধ্যাপক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখক শিবির, আলাওল সাহিত্য ও অলক্ত সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর প্রকাশিত একুশটি গ্রন্থের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, মাও সেতুঙের জ্ঞানতত্ত্ব, মানুষ ও তার পরিবেশ, রাজনীতি ও দর্শন ইত্যাদি। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।
 

প্রশ্ন : আপনি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিয়ে আপনার চিন্তা ও তত্ত্ব কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : আমি কোনো দলীয় পক্ষ নিয়ে কথা বলি না। কারণ কোনো দলই তো ভালো রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি। তবে সত্যনিষ্ঠা এবং ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কথা বলতে বা মতপ্রকাশ করার চেষ্টা করি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে যে সংস্কারের কথা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বলছে, এ কথাগুলো তো রাজনৈতিক দলের নেতাদের আগে বোঝা দরকার ছিল।

জনসাধারণকে বোঝানো দরকার ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা, রাজনৈতিক দলগুলো সেভাবে আদৌ চিন্তাই করেন না। রাজনীতি কী? এই প্রশ্ন যদি একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে বলবে, রাজনীতি হচ্ছে দল গঠন করে ক্ষমতায় গিয়ে টাকা-পয়সা কামানো, বাড়ি-গাড়ি করা, বিদেশ যাওয়া। এটাই তো আসলে করা হচ্ছে। এখানে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে গেছে। অন্যদের হাতে গেছে। আগে মিলিটারিদের হাতে যেত। আমরা কয়েকবার মিলিটারি শাসনের রূপ দেখেছি। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান তারপর জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহুম্মদ এরশাদ। এসবের আগে শেখ মুজিবুর রহমান তার শাসনকালে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। জরুরি অবস্থাও তো মিলিটারিদের মতো। এসবের মধ্য দিয়ে যাওয়াতে আমাদের রাজনীতি ও রাজনীতির নেতৃত্বে কোনো রকম উন্নতি হয়নি। কিন্তু কোনোটাই রাজনীতির জন্য, রাজনীতিবিদদের উন্নতির জন্য সহায়ক নয়। যে রাজনীতিবিদরা এখন ক্ষমতার বাইরে আছেন তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না। যারা এখন উপদেষ্টা পরিষদে আছেন তারা যে অবৈধ কোনো শক্তির কাছে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন- এটাও মনে করার কোনো কারণ দেখি না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র উন্নত করত, দেশবাসী ও রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য কাজ করত তাহলে আমরা আশা করতে পারতাম। এটা ঠিক যে, মানুষের মানবিক ভুলত্রুটি হয়। সেগুলো ক্ষমা করে নতুন করে পুনর্গঠিত হতে হয়। তাহলে অগ্রগতি, প্রগতি সম্ভব হয়। কিন্তু এরপরও এ ধরনের কোনো লক্ষণ তো আমরা রাজনৈতিক মহলে দেখছি না।        

প্রশ্ন : এই অভাববোধ থেকেই তো জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান। এটাকে কীভাবে দেখেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : কোনো রাষ্ট্রে গণজাগরণ ঘটতে অনেক সময় লাগে। অনেক দিনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে গণজাগরণ হয়। আমাদের দেশে গণজাগরণের প্রথম প্রকাশ বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৯০৫ থেকে ১৯১১। এমনকি ১৯১১ এর পরেও আরও কয়েক বছর আন্দোলন হয়েছে। ওই সময়টাতে যে গণজাগরণ হলো তার আগে ঘরের ভিতরে, হলের ভিতরে রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করেছেন রাজনীতিবিদরা। ইংরেজি ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য বলতেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রথমবার মাঠে জনসভা, রাস্তায় মিছিল, স্লোগান এটা আরম্ভ হলো। আগে একটা সময় ছিল যে বুদ্ধিজীবীদের জাগরণ বা রেনেসাঁস। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত যে আন্দোলন হয়েছে তার প্রধান ছিল গণ আন্দোলন, গণ জাগরণ ও গণ অভ্যুত্থান। সেই ১৯০৫ থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেও ৫ থেকে ১০ বছর গণ জাগরণ ছিল। তারপরে যেভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাজ করেছে তাতে সে ধরনের গণ জাগরণ আর নেই। মানুষ ঘুমন্ত। মানুষকে জাগাতে হবে। সাধারণ মানুষের যে দায়িত্ব আছে রাজনীতি আর অর্থনীতিকে ভালো করা সেই বিচার বোধটা হারিয়ে ফেলা, না থাকা। সেটাই একটা জাতির ঘুমন্ত অবস্থা। যখন তারা জাগ্রত হন তখন বুঝতে পারেন যে অর্থনীতির উন্নতি করতে হলে এরকম করতে হবে, রাজনীতি সংশোধনের জন্য এমন করতে হবে। আমাদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই দল। এরকমটা থাকলে গণ জাগরণ হয়। গণ জাগরণের পরে সফল না হলে একটা সময় পরে গণ অভ্যুত্থান হয়। ওইরকম গণ অভ্যুত্থান, গণ জাগরণ, গণ আন্দোলন ১৯৭০ দশকের পরে আর নাই। এটা হারিয়ে গেছে। রাজনীতিবিদরা যেভাবে রাজনীতি করেছেন নিতান্তই নগ্ন ক্ষমতার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। সরকার উৎখাত করব, ক্ষমতা দখল করব। এই যে সরকারের উত্থান-পতন ঘটানো এটাই রাজনীতিবিদদের ভুল। এতে আসলে তো কোনো রাজনীতি নেই। এখন যে সরকার ক্ষমতায় আছে তারা ধারাবাহিকতার কোনো সরকার নয়। রাজনীতির বিপর্যয়ের মধ্যে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে এরা শৃঙ্খলা বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে। নির্বাচনের বাস্তবতা তৈরি করতে হলে অনেক আইন-কানুন, বিধি-বিধান সংস্কার করতে হবে।

প্রশ্ন : সেই হিসেবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : বাংলাদেশের জনগণের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো- কী করে সহিংসতা বন্ধ করা যাবে, খুন-খারাবি বন্ধ করা যাবে। আইনের শাসনের অভাব রয়েছে। এ জায়গায় আইনের শাসন প্রবর্তন করা। ১৯৭২ থেকে আজ পর্যন্ত একটার পর একটা যে সরকারগুলো পেয়েছি তার কোনোটাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। শেখ মুজিবের সরকার চেয়েছে আইনের শাসন প্রবর্তন করতে; কিন্তু তিনি পারেননি। বিশৃঙ্খলা বিরাজ করেছে। সরকারের লোকেরাই প্রথম সরকারকে অমান্য করেছে। তারপর অন্য দল, তারপর সাধারণ মানুষ। একটা টোটাল বিশৃঙ্খল অবস্থায় গেছে। এটা ঠিক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করেছেন। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কলকারখানায় আগে উৎপাদন বলতে গেলে প্রায় বন্ধই ছিল। ওই সময় উৎপাদনের নিয়মিত একটা ধারাবাহিকতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার বা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

প্রশ্ন : এই সরকার কি সেগুলো উত্তরণ করতে পারবে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এসব উত্তরণের চেষ্টা এই সরকার করছে তাদের চিন্তা-ভাবনা থেকে। এই সরকার তো জনগণের ভিতর থেকে আসেনি। তারা যেভাবে আসছেন যেভাবে তারা চিন্তা করেন সেভাবে জনগণ তাদের চিন্তা-ভাবনা গ্রহণ করবে কিনা তা এখনো বলা যায় না। তারা সংস্কার কমিশন গঠন করে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা এখনই বলা যায় না। এর মধ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, জটিলতা রয়েছে। আমরা চাই যে সফল হোক সরকার।          

প্রশ্ন : এখন তো নতুন বাংলাদেশ, নতুন পথচলা। এই প্রেক্ষাপটে পথচলাটা কী ধরনের হওয়া উচিত?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বক্তব্য নির্ধারণ করা উচিত। বর্তমান ঐতিহাসিক বাস্তবতায় আমাদের দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচি কী হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলের, রাজনীতিবিদদের, রাষ্ট্রের তা নির্ধারণ করা। দীর্ঘমেয়াদি মানে ১০ বছর ২০ বছর এরকম সময়। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের জন্য কয়েকটা ইমিডিয়েট প্রোগ্রাম কার্যকর করে অগ্রসর হতে হবে। যার মধ্য দিয়ে রাজনীতি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যারা রাজনীতির নেতা তারা অটোমেটিক্যালি শিক্ষিত হন না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তাদের শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করতে হয়। অনেক কিছু দেখে, অনেক কিছু বইতে পড়ে, তবে সব বই না। যেসব বই রাজনীতিবিদদের জন্য কল্যাণজনক বিশেষ করে সেই বইগুলো পড়তে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য কোনো শিক্ষা বা ট্রেনিং কিছুই দরকার হয় না। রাজনীতির দুরবস্থার জন্য এটা একটা কারণ। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে সততার প্রবণতা আছে আবার অসৎ উপায়ে অর্থনীতি অর্জনের বৈশিষ্ট্যও আছে। এই দুটোর মধ্যে যেটা কল্যাণকর সেটা তো জয়ী করতে হবে নিজের ব্যক্তিগত চেষ্টা এবং সমাজের সবার চেষ্টায়। রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে বাংলাদেশে স্বাভাবিক গতি নেই। মানুষ খেয়ে বাঁচতে চায়। কৃষকরা প্রাণপণ পরিশ্রম করে উৎপাদন করছে। শ্রমিকরা, নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও অনেক কাজ করছে। আয় করছে। কিন্তু উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ শ্রেণি ওইরকম চিন্তা বা কাজ করছে না। তারা মূলত নিজেদের জন্য চিন্তা করছে, নিজেদের অবস্থার উন্নতি করছে। এটাই তো আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। 

প্রশ্ন : তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? পাশাপাশি তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : আমাদের দেশে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তরুণ সমাজের ভিতর থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ভিতর থেকে নতুন চিন্তা, নতুন আকাক্সক্ষা এবং নতুন ভবিষ্যৎ ও নতুন রাষ্ট্র, জাতি গঠনের চিন্তা চেষ্টা আসে। তরুণরা অনেক সময় ভালো কোনো চিন্তা বা বক্তব্যের মধ্যে গিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করে কাজ করতে চায়। যেটা প্রবীণদের মধ্যে হয় না। তরুণদের যে শক্তি সেটা অপরিসীম। তারা অনেক কিছু পারে। তবে তরুণদের অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে ভুল করার বা ভুলপথে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এক্ষেত্রে প্রবীণ থেকে তরুণদের অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু প্রবীণরা যখন তরুণদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তখন বিষয়টি বুঝে তরুণদের সরে যাওয়া উচিত। দূর থেকেও অনেক কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। এরকম জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের তরুণদের যেতে হবে। ঘটনা যেটা ঘটেছে- গণ অভ্যুত্থান, গণ জাগরণ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা আজ সরকার গঠন করেছে। উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এর মধ্যে কেবল রাষ্ট্রপতিকেই জনপ্রতিনিধি বলা যায়। কারণ তিনি সংসদে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসেছেন। আর বাকি যারা আছেন তারা অবস্থার যে বিপর্যয় সেখান থেকে সবাইকে, রাষ্ট্রকে রাজনীতিকে, জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য ক্ষমতায় এসেছেন।

প্রশ্ন : আপনি একজন নীতিবাদী রাজনৈতিক দার্শনিক। আপনার সব লেখায় থাকে উন্নত ভবিষ্যৎ সৃষ্টির চিন্তা ও আশা। বাংলাদেশে এ ধরনের রাজনৈতিক দার্শনিকের অভাব রয়েছে কি না? থাকলে কেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এ ধরনের রাজনীতিবিদের নিদারুণ অভাব রয়েছে। সেটা নেই বলেই তো আজকে শেখ হাসিনাকে এভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো। যদি মিনিমাম রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি দেশ চালাতেন তাহলে তো এরকম হতো না। ক্ষমতাচ্যুত হলেও দেশে থেকে দলকে পুনরুজ্জীবিত করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করতেন। সেটাই তো গণতান্ত্রিক উপায়। কিন্তু তার ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ কথা বলতে ভয় পেত। যেভাবে রাজনীতিবিদদের জেলে রেখেছিলেন এতটা তো অতীতে হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের আমলেও অনেকে জেলে ছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জেলখানা থেকে সব রাজনীতিবিদকে মুক্তি দিয়েছেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য। জিয়াউর রহমান করেছেন, সুতরাং এটা আমরা বলব না, চাপা দেব- এটা ঠিক না। এ ধরনের রাজনৈতিক দার্শনিকের অভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব বেশি। শেখ মুজিব ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ওই সময় আমেরিকা বাংলাদেশের নেতৃত্বের ঘাড়ে হাত রাখতে পারেনি। আমেরিকার এই জিদ থেকে তিনি রাষ্ট্রকে, সরকারকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে জনপ্রশাসনের জন্য সুষ্ঠু কোনো কাজই তিনি করতে পারেননি। কারণ তার দলটাই ছিল মেরে-কেড়ে খাওয়ার দল। তারা আইনশৃঙ্খলা মানত না, থানা লুট করত, দলীয় লোকদের বাড়ি লুট করত, নানান রকম মিথ্যা প্রচার এসব। শেখ মুজিব কঠোরভাবে অনেক কিছু দমন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার ফলও সাধারণ মানুষের চিন্তা তার অনুকূলে যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ নেতারাই যেখানে অত্যাচারী, সেখানে অন্যদের শাস্তি দিয়ে তো অপরাধ দমন করা যায় না। নিজের ঘর আগে ঠিক করে পরে অন্যগুলো করতে হয়। এটা একটা বড় কারণ। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে যাননি এজন্য তার চিন্তার যে একটা গ্যাপ, শূন্যতা এটাও তার অনেক কিছুতে নষ্ট করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা আগেই বলেছি। তারা আগাগোড়া চেয়েছে তাদের অনুগত সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকুক এটা কোনো সময় আমেরিকা হতে দেয় না। এই যে কয়দিন আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন। তার তিন-চার দিন আগে তিনি বলেছিলেন, এটা জামায়াত-বিএনপির কাজ। তিন-চার দিন পরেই আবার বললেন, আমি ভুল বলেছিলাম। এটা জামায়াত-বিএনপির কাজ না। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাজ। এই সামান্য কথাটুকুর মধ্যে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য আছে। কিন্তু এটা তো আওয়ামী লীগের লোকজন বুঝতে চান না, বিএনপির লোকজন বুঝতে চান না। ছোট বাম দল তারা বুঝতে চান না। ক্ষমতায় থেকে এটাও  একটা বড় সত্য কথা তিনি বলে গেছেন।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে সমাজ, কৃষ্টি ও কালচারের সঙ্গে রাজনৈতিক মিশ্রণের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : বুদ্ধিজীবীরা তাদের দলের মঞ্চে উঠুক, তাদের পক্ষে বিবৃতি দিক এটা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলও চায়। কিন্তু তাদের যে বক্তব্য সেটা বোঝার বা জানার চেষ্টা করে না। তারা মনে করে, এরা তো আমাদের আদেশ মতো কাজ করছে। বুদ্ধিজীবীরা তাই করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষকের বাসায় শেখ মুজিব নিজে আসতেন, কথা বলতেন রাজনীতি বিষয়ে। বুদ্ধিজীবীরাও বলতেন, এটা করা ঠিক, এটা ঠিক না। এ ধরনের আলোচনা হতো তাদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। চিঠি দিয়েছেন তার সেক্রেটারি- আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, আপনি অমুক তারিখে এতটার সময় যদি আসেন তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। এতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হবেন। বুদ্ধিজীবীও জবাব দিয়েছেন- হ্যাঁ আমি অতটার সময় যাব। কথা বলব। কিন্তু শেখ হাসিনা বা বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী- বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দলীয় শিক্ষক তাদের পায়ের কাছে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন, যদি দেখা হয়। বুদ্ধিজীবীদের ইন্টেলেকচুয়াল ক্যারেক্টার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। সম্পূর্ণ সুবিধাবাদ নিয়ে চলছে। কেউ আওয়ামী লীগ করছে কেউ বিএনপি করছে। কেউ জামায়াতে ইসলামী করছে। বুদ্ধিজীবীরা এ ধরনের ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিচের দিকে নেমেছে। তারপর দলের উচ্চ পর্যায় বা নিম্ন পর্যায়ে কিছু রয়েছেন তারা সবাই টাকা বা সম্পত্তিকে বড় বিষয় বলে মনে করেন। মানবিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ব এসব বিসর্জন দিয়ে তারা কেবল অর্থবিত্ত অর্জনের নেশায় মেতে আছেন।

প্রশ্ন : অতীত থেকে আমরা কেউ শিক্ষা নেই না- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই প্রবাদ বাক্যকে আপনি কীভাবে ব্যাখা করবেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : শিক্ষা নেয় না এটা সত্য না। রাজনীতিবিদদের মধ্যে অভিজ্ঞতার শিক্ষাকে বুঝবার, গ্রহণ করবার এবং ভুল-শুদ্ধ নির্ণয় করার কোনো প্রবণতা দেখি না। এই শিক্ষা না নেওয়ার কারণে তাদের পদক্ষেপও ভালোর দিকে যায় না। খারাপের দিকে যায়। অর্থবিত্ত অর্জনে তাদের এক রকমের সাফল্য আছে। এ ধরনের সাফল্যদের এখন দারুণ বিপর্যয় হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধানত অভিযুক্ত হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। এই মামলাগুলো যদি ঠিকমতো চলে অবশ্যই তাদের প্রায় সবাই শাস্তি পাবেন। অনেক সম্পত্তির মালিক হলেও সময় এমনভাবে বদলে যেতে পারে, এমন কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে, যে সম্পদের বোঝা তারা আর বইতে পারবেন না। সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে নেবে। তারা জেলে যাবেন। আজ বাংলাদেশে জনগণের সম্মান লাভ করার মতো কোনো বুদ্ধিজীবী কি আছেন?...

প্রশ্ন : আপনি প্রায় বলেন, রাজনীতি বেহাত হয়ে গেছে। এখন কী বলবেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এখন তো আরও বেশি বেহাত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা জানিয়েছেন, দেশ স্থিতিশীল হলে আমরা রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। রাজনীতিবিদ ও জনগণের দুর্দশা দেখে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। কমবেশি সেভাবেই তারা কাজ করছেন।

প্রশ্ন : রাজনীতিবিদগণ অনেক সময় বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। নীতি-নৈতিকতার বিচারে এ কথাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এটা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত একটা বক্তব্য। শেষ কথা আছে। আলোচনা, আন্দোলনের প্রত্যেকটা বিষয়ের শেষ আছে। সাফল্য বা ব্যর্থতা হোক, অনন্তকাল একটা বিষয়ে আন্দোলন করা যায় না। একটা সময় শেষ হয়। তখন নতুন ইস্যু সামনে আসে। নতুন করে আন্দোলন করতে হয়। কাজেই রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই- এটা উইশফুল একটা ধারণা। এ ধরনের ধারণা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করে।

প্রশ্ন : আপনার লেখা ‘রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন- নতুন রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতি লাগবে। এতে কী ধরনের পরিবর্তনের কথা বলেছেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : ২৮ দফার কথা বলেছি। যেখানে বাংলাদেশের মুক্তি ও কর্মসূচির কথা আছে। এর মধ্যে বলার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের প্রধান সমস্যাগুলো কী। ধাপে ধাপে এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতায় আসবে। দলের মধ্যে ঘোষিত আদর্শ আগে দলের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করতে হলে গণতান্ত্রিক ধারণা আগে দলের মধ্যেই অনুশীলন করতে হবে। দলের মধ্যে যেসব কমিটি গঠন হবে সেগুলোও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত। হতে পারে নির্বাচন ছাড়া কিন্তু সেটা নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলে দিতে হবে। সততার মাধ্যমে একটা পদ্ধতি স্টাবলিশ করতে হবে।

প্রশ্ন : আরেকটি বইয়ে লিখেছেন- রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও সমাজের স্তরে স্তরে ধীরে ধীরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে অন্ধকারের সব শক্তি। এই শক্তি থেকে মুক্তির উপায় কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : এখন দেশে রাজনীতির চিন্তা নাই। পাবলিকের মধ্যে রাজনীতি বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। যারা রাজনীতি করেন তারা কেবল বক্তব্যহীনভাবে সরকার উৎখাতের এবং ক্ষমতা দখলের অথবা ক্ষমতা দখলের পরে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কতগুলো কৌশল ছাড়া আর কিছুই চিন্তা করেন না। এই বাস্তবতার মধ্যে রাজনীতিটা আসছে না। যদি আসত তাহলে প্রথমে তারা প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে বক্তব্য দিতেন। তারপরে এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য ধাপে ধাপে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই বক্তব্য দিতেন। ভারতের কোনো রাজনীতিবিদ কি টাকা জমিয়ে যান, মৃত্যুর পরে ছেলেমেয়েরা ভোগ করবে, এই যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একজন বিলাসী ধনী পরিবারের নেতা, তিনি কি মরার সময় কোনো ধনসম্পত্তি বা টাকা-পয়সা রেখে গেছেন? কেবল ধনলিপ্সাই মানুষের জীবনের কাম্য নয়। আরও অনেক কিছু কাম্য আছে। কী কাম্য এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করা উচিত।

প্রশ্ন : দেশে কী ধরনের পরিবর্তন অতি জরুরি বলে মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা খুব জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দুটো ধারায় বিভক্ত। দুটো ধারাই জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। একটা ধারা ভয়ানকভাবে অ্যান্টি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া বাংলাদেশের প্রায় চারপাশে আছে। বলা যায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বড়জোর ২৫ ভাগ সীমানা আছে। বাকি সব ভারতের সঙ্গে। যদি বঙ্গোপসাগরও ধরি তাহলেও দেখা যায়, একটা সীমা পর্যন্ত বাংলাদেশের দখলে। এর বাইরে গেলে দেখা যায় আন্দামান, নিকোরাম দ্বীপপুঞ্জ। পশ্চিমদিকে ভারত। শেষ পর্যন্ত ভারতেরই দখলে রাজনৈতিক সীমা। এই বাস্তবতা স্বীকার করে চলতে হবে। ন্যাচারাল কোনো বর্ডার বাংলাদেশের নেই। ১৯৪৭ সালে রায়ট করে হিন্দু মুসলমান আলাদা হয়েছে। পরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা এই রাষ্ট্র ও সীমানা অর্জন করেছি। প্রকৃতি এই সীমানা তৈরি করে দেয়নি। যেটা অধিকাংশ দেশের আছে। ভবিষ্যতে আবার বড় ধাক্কা এলে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। এই দুর্বলতাটা আমাদের বুঝতে হবে। ভারতকে যারা এক নম্বর শত্রু বলে গণ্য করে গেছেন তাদের চিন্তা আসলে ভুল ও খুবই সীমাবদ্ধতা। পুনর্বিবেচনা করা কর্তব্য তাদের, প্রতিবেশী দেশকে শত্রুতার সম্পর্ক নিয়ে চলতে গেলে আমি কিছুই করতে পারব না। ধাপে ধাপে প্রতিবন্ধকতা আসবে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের ওপর টোটাল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার। শেখ হাসিনা মার্কিন এই চাপে একেবারেই মাথানত করেননি। বারবার বলছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র নীতি- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।’ ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ এই নীতি দিয়ে চলছে। এবং আমি সেই নীতি নিয়ে আছি। আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। আবার চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গেও বন্ধুত্ব সম্পর্ক আছে। আমরা এভাবেই চলতে চাই। আমেরিকা বার বার চাপ দিয়েছে অন্তত ১০ বছর ধরে। প্রতি মাসে ওয়াশিংটন থেকে লোক এসেছে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তারা একই কথা বলেছে, আপনারা চীন-রাশিয়া থেকে সরে আসেন। আমরা সামান্য সুদে ঋণ দেব। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকুক তবে নতুন করে কোনো চুক্তি করবেন না। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিষ্ক্রিয় করে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক সক্রিয় করুন। আমরা উন্নয়নের জন্য যত অর্থ দরকার সবটা দেব। কিন্তু কিছুতেই শেখ হাসিনা তা মেনে নেননি। এখানে যে আন্দোলন হয়েছে এর পেছনে তো শক্তি রয়েছে। কীরকম শক্তি রয়েছে সেটা তো আমরা জানি না। অদৃশ্য শক্তিও কাজ করছে। যারা ছাত্র তরুণ নেতৃত্বের দিকে যাচ্ছে, তারা কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। তারা নিজেরাই সবটা করছে এমন কোনো কথা তো ছাত্রনেতারা বলছেন না। যেটুকু জানি, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই একটা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করা হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে একটা সরকার উৎখাত বড় তাৎপর্য বহন করে। এর সবটা আমরা বুঝতে পারি না। তবে সারা দেশের মানুষ নীরব এবং আমরাও নীরব। আমরা চাই, এই সরকার সফল হোক। তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পালন করুক। আমাদের যাত্রা যদি ভালোর দিকে আরম্ভ হয় তাহলে আমরা ধীরে ধীরে ভালোর দিকে যেতে পারব। আর এই সরকার ব্যর্থ হতে পারে সেটা অনেকে মনে করেন। সে কারণে বলছেন, এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরা দীর্ঘকালের জন্য রাজনীতিতে শেষ হয়ে যাব এবং খারাপের দিকেই যাব।

প্রশ্ন : সংবিধান সংস্কার নিয়ে আপনি বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছেন। কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : সব রাজনৈতিক দলের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে একমত হওয়া প্রয়োজন। এই চেষ্টা ছাড়া শুধুই সুপারিশ দিলে তা বাস্তবায়ন হবে না। কোনো দেশেই হয় না।

প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে বলে মনে করছেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি লোক কবিতা লিখেছেন। এই কবিতার মধ্যে আগে যেমন প্রগতিশীল বক্তব্য থাকত, কোনো কোনো কবিতায় খুব দৃঢ় বক্তব্য থাকত। যেমন কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য। তাঁরা যেসব কবিতা লিখতেন, তাতে সংগ্রামের স্পৃহা ছিল। কবিতা হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলি থাকা দরকার তা ভালোই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে স্বাধীনতার কালে দুই-তিন বছর আগের ধারায় অনেকে কবিতা লিখেছেন। পরে তো বাংলা সাহিত্যের প্রতি আর সেরকম আগ্রহ বা ভক্তির ভাব ধরে রাখা যায়নি। বর্তমানে কবিদের অনুভূতি অনেকটা শীতল। এরকম থাকবে না। অবশ্যই পরিবর্তন হবে। রাজনীতিতে যদি একটু পরিবর্তন আসে তাহলে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে পরিবর্তন অনেক বেশি আসবে। যারা গল্প লেখেন, উপন্যাস লেখেন তারাও প্রগতিশীলের ধারায় লিখবেন। অতীতে ফিরে যাওয়া নয়, অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলা সাহিত্যের একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন : মানুষ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। এরপর থেমে গেলেন কেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : হঠাৎ করে আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বিমূর্তভাবে লিখেছি। পাশাপাশি আরও কয়েকটি কবিতা লিখেছি। আমার অভিজ্ঞতা দেশবাসীকে নিয়ে, মানবজাতিকে নিয়ে। পড়তে গেলে এই পরিচয়টা পাওয়া যাবে। আমার মনে হয়, এখন যেসব কবিতা লেখা হয় তার মধ্যে আমার লেখা দুই-তিনটা হিসাবের মধ্যে আসার মতো।

প্রশ্ন : বাংলা একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আপনাকে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক : বাংলা একাডেমির সভাপতি যখন করা হয়েছে, তখন সব সংবাদপত্রে সীমাহীন অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- বাংলা একাডেমির সভাপতির পদটা অনারারি অর্থাৎ এর কোনো বেতন নেই। অন্য কোনো ফাইন্যান্সিয়াল সুযোগ-সুবিধা নেই। সভাপতি হিসেবে বাংলা একাডেমিতে আমি একটা রুম পেয়েছি। যে রুমে আমি যে কোনো সময় বসতে পারি। লোকজন এলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। বসে লিখতে পারি। এটুকুই।

প্রশ্ন : বাংলাদেশকে আপনি কোথায় দেখতে চান?  

আবুল কাসেম ফজলুল হক : আমাদের তো জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বিশেষ কোনো উন্নতি হবে এটা আশা করার কোনো কারণ দেখি না। তবে ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে নিশ্চয় বড় রকমের একটা পরিবর্তন হয়ে ভালোর দিকে যাবে- এটা আশা করি। বাংলাদেশে কিছু লেখক কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, সংখ্যায় তারা কম। তারা এই ধারায় চিন্তা করছেন যে দল গঠন করতে হবে, দলের মধ্যে নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সবাই রাজনৈতিক শিক্ষা অর্জন করবেন। একটা গণতান্ত্রিক কর্মপদ্ধতি দলের মধ্যে গঠন করবেন, তারপর জনজীবনের সমস্যা সমাধানের বক্তব্য দেবেন। এর মধ্য দিয়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে তাদের সম্ভাব্য ভালো কাজগুলো করবেন। এই চিন্তা যাদের, তার সংখ্যা কম। কিন্তু এই চিন্তাই তো জাতি ও রাষ্ট্র গঠন এবং নিজেদের সার্বিক উন্নতির অবস্থা সৃষ্টির বক্তব্য। এই বক্তব্য যদি সাফল্যের দিকে যায় অবশ্যই বাংলাদেশ, বাংলার জনগণ, রাষ্ট্র আমাদের সবটাই উন্নতির দিকে যাবে। পৃথিবীর অনেক জাতিই ক্রাইসিসে পড়ে। আমাদের জাতিও ক্রাইসিসে পড়েছে। জাতি সেই ক্রাইসিস থেকে মুক্ত হবে, শক্তিশালী হবে, জয়ী হবে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।  

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কাল বিশেষ বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কাল বিশেষ বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ
সংগৃহীত ছবি

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক আগামীকাল সোমবার।

জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের জন্য আগামীকাল এই বিশেষ সভা বসছে।

এই অধ্যাদেশ অনুমোদন পেলে ধর্ষণ মামলার বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করা যাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মাগুরায় আলোচিত আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

দাবি ওঠে ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের। এই প্রেক্ষাপটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ধর্ষণে অভিযুক্তের দ্রুত বিচারের জন্য একটি সংশোধনীর খসড়া তৈরি করে।

সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

এর আগে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে।

আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে।

এ ছাড়া উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়াই চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ চালাতে পারবেন। এমন বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

১০-১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ, শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
১০-১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ, শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

দেশের বিভিন্ন স্থানের ১৩০০ কোটি টাকার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ করার সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রবিবার (১৬ মার্চ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর টানা চারটি সংসদে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

শেখ মুজিবের ভাগনে হওয়ার সুবাদে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজের বড় অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব উন্নয়নকাজ ভাগবাটোয়ারা করতেন তিনি। বিনিময়ে মিলত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি কাজের নিয়ম অনুযায়ী কোনো কাজের দরপ্রস্তাবের তথ্য গোপন থাকে।

 প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাইরে অন্য কারো এটি জানার কথা নয়। কিন্তু শেখ সেলিম প্রতিটি উন্নয়নকাজের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেওয়া ঠিকাদারদের আর্থিক প্রস্তাবের তথ্য পেয়ে যেতেন এবং এরপরই কাজ দেওয়া ও কমিশন নেওয়ার সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বনানীতে শেখ সেলিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের হিসাব মিলেছে। বনানীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই নথিতে গোপালগঞ্জের ১১টি, চুয়াডাঙ্গার একটি, হবিগঞ্জের একটি, টাঙ্গাইলের একটি, ময়মনসিংহের একটি, ফরিদপুরের একটি, নাটোরের একটি, খুলনার তিনটি এবং রাজশাহীর দুটি প্যাকেজের দরপত্রের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
 নথির পাতায় পাতায় বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে নির্বাচিত ঠিকাদার, কাজ শেষ করার সময় ও কমিশনের হার উল্লেখ রয়েছে। ওই নথির অনুলিপিসহ একটি অভিযোগ দুদকে জমা হয়েছে।

মন্তব্য

সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। শনিবার (১৫ মার্চ) তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেন।

বিমানবাহিনী প্রধান আগামী সোম ও মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। আজ রবিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, সফরকালে বিমানবাহিনী প্রধান জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোতায়েনকৃত ইউনিটের কার্যক্রম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং ভবিষ্যতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করবেন।

আইএসপিআর আরো জানায়, বিমানবাহিনী প্রধানের এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। যা পেশাগত খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারিত করবে। সফর শেষে আগামী ২১ মার্চ দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন তিনি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে চীনের লঙ্গি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে চীনের লঙ্গি
ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লঙ্গি বাংলাদেশে কার্যালয় চালু করার পাশাপাশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রবিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ডিসেম্বরে বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় চীনা সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে জন্য বাংলাদেশ সফর করেছেন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনা কম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পর তারা এই সফর করেন।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘লঙ্গিসহ কমপক্ষে দুটি চীনা কম্পানি বাংলাদেশে অফিস এবং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তারা (চীনা কম্পানি) শিগগিরই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী।

তিনি বলেন, ‘চীনের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি শিগগিরই কার্যকর হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

তাই কয়েক ডজন চীনা কম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে।’

ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘চীনে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সরকারি সফর হবে দুই বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মধ্যে ৫০ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে চান তাদের জন্য বাংলাদেশ একটি শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পারে।’

তিনি চীনা হাসপাতালগুলোকে বাংলাদেশে ক্লিনিক স্থাপন বা যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা তৈরির আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। চীনা হাসপাতাল চেইনগুলোর এখন এখানে হাসপাতাল নির্মাণের অনন্য সুযোগ রয়েছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন দক্ষিণ চীনের কুনমিং শহরে চারটি হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশিদের একটি দল গত সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য কুনমিং ভ্রমণ করেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্বের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম পিকিং ইউনিভার্সিটি।

চীন সফরের সময় অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করবে ওই ইউনিভার্সিটি। প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাও দেবেন।’

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ২৮ মার্চ চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকের পর দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি দেবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ