ঈদ উদযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরছে মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে এখনো চলছে তৃণমূলমুখী মানুষের স্রোত। কেউ যাচ্ছেন সড়ক পথে, কেউ নৌপথে, কেউ ট্রেন। আবার যাদের সামর্থ্য আছে তারা যাচ্ছেন আকাশপথে।
ঈদ উদযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরছে মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে এখনো চলছে তৃণমূলমুখী মানুষের স্রোত। কেউ যাচ্ছেন সড়ক পথে, কেউ নৌপথে, কেউ ট্রেন। আবার যাদের সামর্থ্য আছে তারা যাচ্ছেন আকাশপথে।
এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকাশপথে ঈদের শেষ সপ্তাহে ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এই সংখ্যা অনেক সময় বেড়ে যায় সড়কপথে তীব্র যানজট দেখা দিলে।
এভিয়েশনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবার ঈদে দেশের যাত্রীদের বিদেশগামী যাত্রী ব্যাপক মেলে।
বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম বলেন, ২৫ মার্চ থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ঈদের ফ্লাইটগুলো চালু হয়েছে।
আভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভো এয়ার এবং এয়ারএস্ট্রা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, ২০২৪ সালে দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে রেকর্ড এক কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে আভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা ২২ লাখ ৬৮ হাজার ৬২৩ জন। অবশ্য এক বছরে অভ্যন্তরীণ যাত্রী সংখ্যা কমতির দিকে।
বেবিচকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা গত বছর সাত লাখ ২৯ হাজার ৬৩৯ জন বেড়েছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ৭৬ হাজার ৯১৭ জন কমেছে। বেবিচকের তথ্য মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ২০২৪ সালে যাত্রী কমেছে ৭৬ হাজার ৯১৭ জন। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রুটে এক বছরে ফ্লাইট কমেছে আট হাজার ১০৬টি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশে সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনসটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার আকাশপথে বাড়তি কোনো চাপ নেই। আর যাত্রী চাপ না থাকায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ কোনো বেসরকারি এয়ারলাইনস কোনো বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করছে না। গত ১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো বাড়তি ফ্লাইটের প্রয়োজন হয়নি। অন্যান্য বছর যেখানে প্রচুর বাড়তি ফ্লাইট দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে হতো। আভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটেও যাত্রীতে চাপ নেই। কারণ যেসব দেশে বাংলাদেশির ভ্রমণ করে থাকেন সেসব দেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, “এবারের ঈদযাত্রায় আমরা সব যাত্রীকে সর্বাত্মকভাবে সেবা দিতে পেরে আনন্দিত। ‘সম্মানিত যাত্রী সর্বাগ্রে’—এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে যাত্রীদের যাত্রা সুন্দর ও আরামদায়ক করার প্রয়াসে ২৪টির বেশি সরকারি সংস্থা, ৪২টি এয়ারলাইনসসহ সব সংস্থার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সব স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদ্যমান অবকাঠামোর মধ্যেই কিভাবে অভ্যন্তরীণ অপারেশনকে গতিশীল করে আরো ভালো যাত্রীসেবা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।”
তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আগমন যাত্রীদের ভিড় এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে, সব সংস্থা যেমন : বেবিচক, এভসেক, বিমান বাহিনীর টাস্কফোর্স, এপিবিএন, ট্রাফিক নর্থ, বিমানবন্দর পুলিশ, যাত্রীদের সহায়তা করার জন্য সর্বাগ্রে কাজ করেছে।’
সম্পর্কিত খবর
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সিএও) একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাসসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বুধবার (২ এপ্রিল) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে এই বৈঠক (দুই দেশের নেতাদের মধ্যে) আয়োজনের অনুরোধ করেছি... এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর বলেন, বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাই অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আগামী ৪ এপ্রিল অধ্যাপক ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
বিমসটেক সম্মেলন ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে আগামী ১৪ মে নতুন রেল ও সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার ওমরের কবর জিয়ারত ও ওমরের পরিবারের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন উপদেষ্টা। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসবেন চট্টগ্রামের সন্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খুব সম্ভাবনা রয়েছে এ সময় তিনি এই সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার তাদের প্রিয়জনকে আর ফিরে পাবেন না, তবে আমরা তাদের পাশে আছি। অন্যায় করলে বিচার হবে না, এমনটি হতে পারে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সারোয়ার, উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. খোরশেদুল আলম ও নায়েবে আমির ডা. আবু নাছের প্রমুখ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নয়াদিল্লির মনে রাখা উচিত তাদের দেশে মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।’
ভারতের পাক্ষিক ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
ফ্রন্টলাইনের এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা গণনার একাধিক উপায় আছে।
উপরন্তু বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে।
সুতরাং ভারত যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন দেশটিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে তার নিজের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে, সেটাও অন্যরা খতিয়ে দেখছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে নিরাপদ কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো এ প্রশ্নের জন্য সেরা উদাহরণ নই। আমি দুইবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার, ১৯৬০-এর দশকের দাঙ্গার পর—১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার মা-বাবা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার মা আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আমার পেশাদারি এবং তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।’
ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকিগুলো মেনে নিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি যে পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি যেখানে একটি ভূমিকা রাখে, এমন যেকোনো দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্যই এ ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান। আমি আরো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর—সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির প্রতি এই অঙ্গীকারই জাতি গঠনের মূল ভিত্তি।
বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে। এই পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো অপরিণত কাজ হবে, কারণ এটি এখনো পর্যালোচনাধীন।’
বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২ এপ্রিল) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান। তাই সব দেশের প্রধানদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্মেলনের প্রথমদিন ইয়ুথ কনফারেন্সে যোগ দেবেন তিনি। পরদিন সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
এতে আরো জানানো হয়, সেখানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।